Friday, June 20, 2014

শ্রী রাম চন্দ্র গল্প নয়, এক ঐতিহাসিক সত্য


মহর্ষী বাল্মীকি ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে নৈতিকতা এবং ন্যায় এর পথ অনুসরণ করতে পারে সেজন্য ঐতিহাসিক মহাকাব্য রামায়ণ লিখেন।
এতে তিনি রঘু বংশের শ্রেষ্ঠ প্রতীক শ্রী রামচন্দ্রের জীবনী এবং তার পূর্বপুরুষ দের পরিচয় তুলে ধরেন।
পরবর্তীতে মহাকবি কালিদাস রঘুবংশম লেখেন যাতে পুরো রঘু বংশের পরিক্রমা বর্ণিত ছিল, যারা শ্রীরাম এর পরে রাজত্ব করেছিলেন। এখন যুক্তি হল যদি রাম একটি পৌরাণিক চরিত্র ই হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে বাল্মীকি শ্রীরাম এর forefathers ইতিহাস প্রদান করলেন?আর কিভাবেই বা কালিদাস শ্রীরাম এর পরবর্তী প্রজন্মের অনুক্রম বললেন?


এখন আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে শ্রীরাম এর অস্তিত্ব এর প্রমান নিয়ে আলোচনা করব।

রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়ায় রামায়ন:

১৯৭২ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর ডেকান হেরাল্ডের প্রথম পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়।সেখানে বর্ননা করা হয় যে রাশিয়ার কাল্মিক এর রাজধানী এলিস্তায় রামায়ন এর মত একটি কাহিনী আজও প্রচলিত। কাল্মিকে এখনও নাকি রামায়নের বেশ কিছু কাহিনী লোকমুখে অত্যন্ত জনপ্রিয়।সেখানের প্রধান পাঠাগারে তাদের রামায়নের বেশকিছু ভার্সন সংরক্ষিত আছে।প্রখ্যাত রাশিয়ান লেখক দোমোদিন সুরেন রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়ানদের মধ্যে রামায়নের মতই একইধরনের কাহিনীর জনপ্রিয়তা তুলে ধরেন।প্রফেসর সি.এফ গ্লোস্টান্কি তার পান্ডুলিপি 'একাডেমি এব সায়েন্স' এ তুলে ধরেন যে ভলগা নদীর উপকুলীয় অঞ্চলে লোকমুখে এখনো কিভাবে রামায়নের বিভিন্ন কাহিনী জনপ্রিয়।লেনিনগার্ডে রাশিয়ান ও মঙ্গোলিয়ান ভাষায় লিখিত এমন অনেক প্রাচীন পুস্তক রয়েছে যেগুলোতে রামায়নের বিভিন্ন কাহিনী ও তাদের ঐতিহাসিকতা বর্ণিত।রামায়নে পাওয়া যায় ভরত ও শত্রুঘ্নের মামাবাড়ি থেকে ফিরতে এমন ধরনের পরিবহনযান ব্যবহৃত হত যা কুকুর ও হরিন দ্বারা চালিত হত এবং ফিরে আসার সময় নাকি তাদের বরফাচ্ছন্ন অঞ্চল পাড়ি দিতে হয়েছিল।ধরা হয়ে থাকে যে জায়গাটি রাশিয়া ছিল!

চীনে রামায়ন:

চীনে রামায়নের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে রচিত জাতক কাহিনীর এক বিশাল সংগ্রহ রয়েছে যা বিখ্যাত চৈনিক ঐতিহাসিক কাং সেং হুয়া কর্তৃক সংগৃহীত হয়েছিল।এছাড়া ৭৪২ খ্রিষ্টাব্দকালীন সময়ে লিখিত একটি বইয়ে রামের বনবাসে রাজা দশরথের অপরিসীম দুঃখের বর্ননা করা হয়েছে।এছাড়া আরেকজন বিখ্যাত চৈনিক ঐতিহাসিক হিস ই চি কর্তৃক লিখিত উপন্যাস যার নাম 'কপি'।
কপি শব্দের অর্থ বানর যা রামায়নে হনুমান অংশের বর্ননা করেছে।

মুসলিম সমাজে রামায়ন:

মার্কো পোলো তার ভ্রমনসাহিত্যে উল্লেখ করে গিয়েছেন যে আফগানিস্তান, মরক্কো, আলজেরিয়া প্রভৃত দেশসমূহে মুসলিমদের মধ্যে এক হনুমান কর্তৃক সাগর পাড়ি দিয়ে যুদ্ধের কাহিনী প্রচলিত ছিল।এছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম ও খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দেশসমূহে শ্রীরাম এর পুত্র কুশ এর বংশানুক্রমে কুশাত নামের বংশধররা রয়েছে।

লাওস এ রামায়ন:

লাওসের বিখ্যাত মন্দির বত-শে-ফাম,বত-পা-কেব প্রভৃতির দেয়ালে রামায়নের বিভিন্ন কাহিনী চিত্রিত।ফরাসি পরিব্রাজক লাফন্ট সেখানকার প্রখ্যাত ঐতিহাসিক গ্রন্থ "প লাক-প লামা" এর অনুবাদ করেন যা ফরাসিতে "প ওম্মছক" নামে পরিচিত যাতে দেখা যায় যে সেখানে রামায়নের প্রচুর ঘটনা বিবৃত রয়েছে।এছাড়া লাওসের সাধারন জনগনের লোকমুখেও রামায়নের বিভিন্ন ঘটনা কিংবদন্তীর ন্যয় জনপ্রিয়।

ফিলিপাইনের মুসলিম সমাজে রামায়ন:

একটি দেশের সংস্কৃতি,আচার-প্রথাতেই সেখানে ঘটে যাওয়া বা বিশ্বাসযোগ্য ঘটনাগুলোর ছাপ থাকে।প্রখ্যাত পরিব্রাজক ও গবেষক প্রফেসর জুওন আর ফ্রান্সিসকো ফিলিপাইনের মারিনিও, মগিনাদানাও এবং সুলু নামক মুসলিম গোত্রসমূহের মধ্যে শ্রীরামকে অবতার হিসেবে বিশ্বাস এবং রামায়ন এর বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত থাকার ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন।

ইউরোপে রামায়ন:

ইতালীতে এস্ট্রোকোন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এর প্রত্নতাত্তিক খননে দেখা গেছে যে তখনকার বিভিন্ন ঘরসমূহের দেয়ালে রামায়নের বিভিন্ন কাহিনী চিত্রিত থাকত।সেখানে দেখা গেছে তীর ধনুক হাতে শ্রীরাম এবং তাঁর পাশে মা সীতা চিত্রিত এবং সেই চিত্রনসমূহ কমপক্ষে খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর পুরনো।

উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকায় রামায়ন:

কলম্বাসের উত্তর আমেরিকা আবিস্কারের পূর্বে কেউ সেই মহাদেশ সম্বন্ধে জানত না।যদিও এ ডি ক্ন্যাট্রেফাজেস তার বই "The human species" বইয়ে দেখিয়েছেন যে মূলত আদিমকালে ভারতীয় ও চাইনিজরা আমেরিকা সম্বন্ধে জানতেন,তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ছিল।এরই পশ্চাতে আমরা দেখতে পাই যে বাল্মীকি রামায়নে আমেরিকাকে বলা হয়েছে 'পাতাল দেশ' এবং বাস্তবিক অর্থেই আমেরিকা ভৌগলিক ভাবে পা এর তলে অর্থাত্ ভারত উপমহাদেশের ঠিক উল্টোপাশে অবস্থিত!
দক্ষিন আমেরিকার মেক্সিকোতে আদিবাসীদের মধ্যে মেয়েদেরকে উলুপী ডাকা হয় আর আমরা সকলেই জানি যে অর্জুন পাতালদেশের(আমেরিকার) রাজকন্যা উলুপীকে বিয়ে করেছিলেন!
প্রকৃতপক্ষে এটি গবেষকদের জন্য আরো বিশদ পর্যবেক্ষনের বিষয় যে পৃথিবীর নানা প্রান্তে কিভাবে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের প্রামান্যতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং তাঁরা তা চালিয়ে যাচ্ছেন।



(তথ্যসূত্র

No comments:

Post a Comment