একজন নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজের প্রফেসার কলা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন তার ফিজিওলজিক্যাল সাইকোলজী ক্লাশে। উনি বলেন, "going bananas" হচ্ছে কলার আমাদের মস্তিষ্কে প্রভাবের কারণে।
কলায় রয়েছে তিন ধরনের প্রাকৃতিক মিষ্টি (sugar)-সুক্রোজ (sucrose), ফ্রুক্টোজ (fructose), গ্লুকোজ (glucose) মিশ্রিত থাকে ফাইবারের (fiber) সাথে। কলা সহসাই শক্তি যোগান দেয় আমাদের দেহে। গবেষণায় পাওয়া গেছে শুধুমাত্র দুইটা কলা খেলেই পর্যাপ্ত শক্তি হয় যাতে করে ৯০ মিনিটের মতো ব্যায়াম করা যায়। একারণেই বোধহয় বিশ্বের বড় বড় ক্রীড়াবিদদের কলা অন্যতম খাদ্য। কিন্তু শুধুমাত্র শক্তি যোগানই দেয় না এই ফলটি, এটি আমাদের সাহায্য করে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখকেও প্রতিরোধ করতে সহযোগিতা করে। এই কারণে এই ফলটি আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত।
নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো যাতে দেখা যায় কলা কিভাবে আমাদের নানা রোগে উপকারক হতে পারে:
বিষন্নতা: ইদানীংকালের একটি বিষন্নতা রোগীদের মাঝে করা জরিপে দেখা গেছে, অনেকেই ভালো অনুভব করেন কলা খাবার পরে। এর কারণ হলো কলার মধ্যে আছে ট্রিপটোফ্যান (tryptophan), যা এক ধরনের প্রোটিন আমাদের দেহে সেরোটোনিন (serotonin) হিসেবে রূপান্তরিত হয়। এতে করে আমাদের বিশ্রাম অনুভব আসে, মন ভালো হয় এবং আমাদের খুশী করে।
পিএমএস: ঔষধের জন্য চিন্তা করবেন না। একটি করে কলা খান। এতে বিদ্যমান বি৬ ভিটামিন আমাদের রক্তের গ্লুকোজ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে যা আমাদের মনকে প্রভাবিত করতে পারে ইতিবাচকভাবে।
এনেমিয়া (anemia): লৌহে সমৃদ্ধ কলা আমাদের হিমোগ্লোবিন উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে রক্তের মধ্যে যা এনেমিয়ার ক্ষেত্রে ভীষণ উপকারী।
রক্ত প্রেসার: এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার ফলটি পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ কিন্তু লবণ আছে কম পরিমাণে। এর ফলে এতি রক্ত প্রেসার কমিয়ে রাখে। শুধুমাত্র রক্ত প্রেসারই এটি কমাতে সাহায্য করে না, স্ট্রোকের মতো বিপদের থেকেও এটি আমাদের রক্ষা করতে পারে।
মস্তিষ্ক শক্তি: ইংল্যান্ডের টুইকেনহ্যাম বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী কলা খেয়ে তাদের পরীক্ষায় উপকৃত হয়েছে। কলা সকালে, দুপুরে ও রাতে খেয়ে তাদের মস্তিষ্কে শক্তি বেড়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে পটাসিয়ামে সমৃদ্ধ এই ফলটি শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারে তাদের সাবধানতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।
কোষ্ঠকাঠিন্য: ফাইবারে সমৃদ্ধ কলা আমাদের স্বাভাবিক পায়খানা বজায়ে সাহায্য করতে পারে। এক্ষেত্রে রেচক (laxative) এর প্রয়োজনীয়তা কমবে।
হ্যাংওভার (hangover): কলার মিল্কশেইক তৈরি করে হ্যাংওভার নিরাময় করা যায়। এটি মধুতে সমৃদ্ধ। কলা পাকস্থলীকে ঠান্ডা করে মধুর সাহায্যে এবং ফুরিয়ে যাওয়া মিষ্টির পরিমাণ (sugar level) বাড়াতে সাহায্য করে যখন দুধ শরীরকে উপশম করে ও দেহে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
হৃৎপিন্ডে জ্বালা (heartburn): কলার মধ্যে আছে প্রাকৃতিক এন্টঅ্যাসিড প্রভাব যা হৃৎপিন্ডের জ্বালা নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে।
সকালের অসুস্থতা (morning sickness): দিনের বিভিন্ন সময়ের খাবারের মাঝে কলা খেলে রক্তে মিষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে এবং সকালের অসুস্থতা কম হয়।
মশার কামড়: মশার কামড় খেয়ে ক্রীম না মেখে কলার ছোকলার ভিতরের অংশটুকু ঘষালে উপকার হয়। চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া কমে এর ব্যবহারে।
নার্ভ (nerve): কলা ভিটামিন বি-এ সমৃদ্ধ যা নার্ভাস সিস্টেমকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
মাত্রাতিক ওজন (overweight): অস্ট্রিয়ার সাইকোলজী ইন্সটিটিউট তাদের গবেষণায় পেয়েছে কর্মক্ষেত্রে প্রেসার আমাদেরকে চিপস বা চকোলেট জাতীয় খাবারে প্রতি নিবিষ্ট করে। ৫০০০ রোগীর ওপর গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা পেয়েছেন সবচেয়ে বেশী ওজনধারী ব্যক্তিগণ সাধারণত বেশী-প্রেসারের কর্ম করে থাকেন। রিপোর্টে প্রকাশিত, খাবারের আকাঙ্খা মেটাতে উচ্চ-শর্করা সমৃদ্ধ খাদ্য প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর খেয়ে আমাদের রক্তে মিষ্টির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর এক্ষেত্রে কলা উপকারী হতে পারে।
পুঁজস্রাবী ক্ষত (ulcer): কলাকে ব্যবহার করা যায় সীমাবদ্ধ খাবারের (diet) ক্ষেত্রে উত্তম উদাহরণ হিসেবে। খাদ্যনালীর নানা রোগবালাইয়ের জন্যও কলা আমাদের উপকার করতে পারে। কারণ এতে রয়েছে নরম বিন্যাস ও মসৃণতা। এটা এমন একটি ফল যা খেলে over-chronicler রোগের ক্ষেত্রে যন্ত্রণা নিরাময়ে সাহায্যকারী। এটি অতিরিক্ত-এ্যাসিডিটিও নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং পাকস্থলীর চুলকানীও কমায়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: অনেক সম্প্রদায় কলাকে "শীতল" ফল হিসেবে দেখে যা শারীরিক ও মানসিক তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যেমন, থাইল্যান্ডে গর্ভবতী মায়েদের কলা খেতে দেয়া হয় যাতে তাদের বাচ্চা শীতল তাপমাত্রা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
ঋতুতে প্রভাবিত রোগ (seasonal affective disorder): কলা ঋতুতে প্রভাবিত রোগীদের সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে প্রাকৃতিক মেজাজ ভালো করার ট্রিপটোফ্যান (tryptophan)।
ধূমপান ও তামাক ব্যবহার: কলা সাহায্য করতে পারে ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে। কলায় বিদ্যমান বি৬, বি১২ ভিটামিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম আমাদের দেহকে সাহায্য করতে পারে নিকোটিনের প্রভাব থেকে মুক্ত হবার ক্ষেত্রে।
বাড়তি চাপ (stress): পটাসিয়াম হচ্ছে একটি অপরিহার্য খনিজ পদার্থ যা হৃৎপিন্ডের কম্পন স্বাভাবিক রাখতে, অক্সিজেন মস্তিষ্কে পাঠাতে, দেহে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যখন আমরা চাপে থাকি, আমাদের বিপাক (mebatolism) মাত্রা বাড়ে এবং পটাসিয়াম পরিমাণ কমে। এই পটাসিয়াম ঘাটতি পূরণ করতে কলা খাওয়া খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করতে পারে।
স্ট্রোক: নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের গবেষণা অনুযায়ী, কলা নিত্যদিনের খাবারের লিস্টে রেখে খাওয়া আমাদের স্ট্রোকের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০% কমিয়ে দিতে পারে।
আঁচিল (wart): আঁচিল নিরাময়ে কলার ছোকলার কিছুটা অংশ আঁচিলে লাগালে (হলুদ অংশটা বাহিরের দিকে করে) উপকার লাভ করা যায়। সাবধানতার সহিত কলার ছোকলার অংশটি আঁচিলের স্থাণে লাগান প্লাস্টার বা সার্জিকাল টেপ দিয়ে।
সুতরাং কলা সত্যিই একটি প্রাকৃতিক ঔষধ নানা ধরনের রোগ নিরাময়ে। আপেলের সাথে এর তুলনা করলে এতে চারগুণ প্রোটিন আছে, দুইগুণ শর্করা আছে, তিনগুণ ফসফরাস আছে, পাঁচগুণ ভিটামিন-এ ও লৌহ আছে, এবং দুইগুণ অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ আছে। এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ অধিক।
অতএব, দৈনিক একটি করে কলা খান এবং নিজেকে ডাক্তারের কাছ থেকে দূরে রাখুন।
সূত্র: তড়িৎ বার্তা