Showing posts with label দিনলিপি. Show all posts
Showing posts with label দিনলিপি. Show all posts

Sunday, December 23, 2012

এরা সম্মান পায় না!



নাম আবুল হোসেন। বয়স ৫৫ হবে। ১৯৮৫ সাল থেকে রিকশা চালান। বর্তমানে মিরপুর এলাকাতে থাকেন।

ছোটবেলায় একটা এক্সিডেন্টে তিনি তাঁর বাম পা-টা হারান। পঙ্গু হলেও তিনি কোনো দিনও ভিক্ষা করেন নি। কারও কাছে সাহায্য চান নি। তিনি রিকশা চালিয়ে তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কথাবার্তায় খুবই অমায়িক এই মানুষটা কোনো পঙ্গু অথবা শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ দেখলেই তিনি তাঁর রিকশায় তুলেন এবং তাঁদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া নেন না।

বাংলাদেশে আমরা অনেক অসৎ মানুষ কে সম্মান দেখাই কিন্তু আমরা কী পারি না এই মানুষগুলোকে তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটা দিতে?



Sunday, March 04, 2012

ঢাকা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র যখন রিকশাচালক:


ধানমন্ডিতে গিয়েছিলাম কিছু কাজে। বাসায় ফিরব বলে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছি, রিকশা পাচ্ছিলাম না। যে রিকশাই দেখি, রিকশাওয়ালা ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ চেয়ে বসে। মেজাজটা এমনিতেই খারাপ কারণ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলছিলাম। হঠাৎ একজন হ্যাঙলা পাতলা মতন ছেলে আমার সামনে রিকশা নিয়ে এসে বলল, “স্যার কোথায় যাবেন?” আমি একটু অবাক হলাম, কারণ রিকশাওয়ালারা সচরাচর স্যার বলে না, “মামা বলে”; আমি তাকে বললাম বকশিবাজার যাব, বোর্ড অফিসের পাশে। সে আমার কাছে ঠিক ঠিক ভাড়া চাইল। আমি মোটামুটি আকাশ থেকে পড়লাম, মনে করলাম এতক্ষণ পরে মনে হয় আধ্যাত্নিক সাহায্য এসে হাজির হয়েছে। যাইহোক বেশি চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি রিকশাই উঠে পড়লাম। মনে মনে বললাম “আহ্‌! এখন একটু শান্তিমত মানুষ দেখতে দেখতে বাসায় যাওয়া যাবে”; ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে রিকশায় যাওয়াকে অনেক এনজয় করি। তবে সেদিনের রিকশা ভ্রমনটা একটু আলাদা ছিল। খেয়াল করছিলাম রিকশাওয়ালা অনেক সাবধানে চালিয়ে যাচ্ছিল। কাউকে গালি দিচ্ছিল না। অন্যের রিকশার সাথে লাগিয়ে দেওয়ার আগেই ব্রেক করছিল। কেউ তাকে গালি দিলে সে কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিজের রিকশা চালানোতে ব্যস্ত ছিল। কিছুক্ষন পরে একটু অবাক হলাম, রিকশা যখন ঠিক ঢাকা কলেজের সামনে আসল, তখন রিকশাওয়ালা মুখে কাঁধের গামছাটা ভাল করে পেচিয়ে নিল। তার চেহারা ঠিকমত দেখা যাচ্ছিল না। ভেতরে ভেতরে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম, ভাবছিলাম এইবুঝি ছিনতাইকারী ধরবে। নিজেকে সামলিয়ে নিতে রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলাম। সেই একই রকমের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলাম, “মামা বাড়ি কোথায়?” সে একিরকম উত্তর দিল, রংপুর। পরের প্রশ্ন করার আগেই বলল “স্যার বেশিদিন হয়নাই রিকশা চালাই”; স্বভাবতই জিজ্ঞাসা করলাম ঢাকা আসছ কবে? সে উত্তর দিল, “দুই বছরের কিছু বেশি হয়ছে”; এভাবেই অনেক কথা হল। একসময় হঠাৎ চালাতে গিয়ে আমার পায়ে টাচ্‌ লাগায় সে বলল, “সরি স্যার”; একটু অবাক হলাম তার ম্যানার দেখে। তাকে প্রশ্ন করতে দেরি করলাম না, “বললাম তুমি কি পড়ালেখা কর?” সে বলল, “স্যার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার, ঢাকা কলেজে”; হতভম্ব হয়ে গেলাম। তার পোশাক আশাক চলন গড়ন আবার নতুন করে দেখা শুরু করলাম। দেখলাম পড়নে একটা প্যান্ট অনেক ময়লা, শার্টের কিছু জায়গায় ছেঁড়া। স্বাস্থ্য এতই কম যে মনে হয়, অনেক দিন না খেয়ে আছে। কৌতুহলবশত প্রশ্ন করলাম তুমি রিকশা চালাও কেন? সে বলল, তারা তিন বোন, এক ভাই। তার বাবা কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে, মা ছোট থেকেই নেই। আগে বাবা দেশে দিনমজুর ছিল। এখন বাবা মারা যাওয়ার পরে তার তিন বোনকে সে ঢাকায় নিয়ে এসেছে, স্কুলে ভর্তি করিয়েছে, থাকে কামরাঙ্গির চরে, একটি রুম ভাড়া নিয়ে। কিছুদিন আগে তার দুইটি টিউশনি ছিল এখন একটিও নেই। সংসার চালানোর জন্য টাকা নেই যথেষ্ট, তাই উপায় না পেয়ে রাতের বেলা রিকশা চালাতে বের হয়েছে। মাঝে মাঝেই বের হয় এমন। তবে অনেক ভয়ে থাকে, যখন সে ঢাকা কলেজের পাশে দিয়ে যায়। পরিচিত কেউ দেখে ফেললে ক্লাস করাটা মুশকিল হয়ে যাবে। নিজে থেকেই বলল, “আমাকে হয়তো বলবেন অন্য কিছু করোনা কেন?” তারপর নিজে থেকেই উত্তর দেওয়া শুরু করল, পোলাপাইন অনেকে দেখি রাজনীতি করে, অনেক টাকা পায়, আবার অনেকে প্রতিদিন একটা করে মোবাইলের মালিকও হয়। কিন্তু আমার এমন কিছু করতে মন চায় না। সবসময় মনে করি একটা কথা, এই দেশকে কিছু না দিতে পারি কিন্তু এই দেশের কাছে থেকে জোর করে কিছু কেড়ে নিব না। আমার কাছে দেশ মানে আপনারা সবাই। আপনাদের সাথে কোন বেয়াদবি করা মানে দেশের সাথে নিমকহারামি করা। এই যে দেখেন আপনারা আছেন বলেই তো আমি এখন রিকশা চালায়ে কিছু টাকা আয় করতে পারছি। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে বলল স্যার চলে আসছি। আমি তাকে কিছু বেশি টাকা জোর করেই হাতে ধরিয়ে দিলাম। মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। বাসায় এসে কোন কথা না বলেই শুয়ে পড়লাম বিছানায়।
মনে মনে ভাবছিলাম দেশপ্রেমটা আসলে কি? আমরা যখন অনেক বড় বড় কথা বলি, অনেক অনেক বড় বড় লোকের উদাহরণ দেই, বলি যে, “কি বিশাল দেশপ্রেমের উদাহরণ” কিন্তু আজকে যা দেখলাম, তা থেকে আমার মাথায় প্রোগ্রাম করা দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা বদলে গেল এবং কিছুটা অবাকই হলাম এইটা ভেবে, পাঠ্যবইয়ে কোথাও দেশসেবার কোন বিশদ উদাহরণ দেখিনাই বাস্তব ক্ষেত্রে। যা পড়েছি সবই তো এখন ইতিহাস। এখন অনেক বড়, দেশের সেবা করতে গেলে আসলে আমাদের কি করা উচিৎ? ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবার পরে ছোট মস্তিস্ক থেকে কিছু ছোট ছোট উত্তর মিলেছেঃ
আমার কাছে মনে হয়েছে দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষকে ভালবাসা, আর দেশের সেবা মানে দেশের মানুষের সেবা করা।
অনেকের কাছে দেশের সেবা করা মানে হল শুধু গ্রামে গিয়ে গরিব শ্রেনীর মানুষকে সাহায্য করা, স্কুল তৈরি করে দেওয়া, রাস্তার পাশে খেতে না পারা ছেলেমেয়েকে খাওয়ানো, পড়ানো, শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। এইসব অবশ্যই ভাল কাজ, দেশের সেবা, কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এইরকমের কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করতে পারিনা। তারমানে কি আমরা প্রতিনিয়ত দেশের সেবা করতে পারব না? আরেকটু চিন্তা করে উপলব্ধি করা যায় যে, আমরা প্রতিনিয়ত যা করছি আমাদের কর্মজীবনে, সেটাকে ঠিকমত করাটাই হল দেশপ্রেম।
আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশকে স্বাধীন করে আমাদের কাছে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছেন, এই আমানতকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটায় হচ্ছে দেশপ্রেম, দেশের সেবা । এই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্নজনের দায়িত্ব বিভিন্নরকম। কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ঠিকাদার, কেউবা ঝাড়ুদার। কারও অবদান কোন দিক থেকে কোন অংশে কম না। তাই নিজের দায়িত্বকে কোন অংশে বড় করে না দেখে চিন্তা করা উচিৎ আমরা সবাই দেশের সেবা করছি, দেশ আমাদের সবার। মাকে যেমন তার ছেলেমেয়ে সবাই সমান ভালবাসতে পারে, তেমনি দেশ, যার ছেলে মেয়ে আমরা সবাই, আমরা চাইলেই সবাই নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে, নিজেদের কাজ ছেড়ে না দিয়ে, বরং নিজেদের কাজ যথাযথভাবে করেই দেশের সেবা করতে পারি।
(লেখকঃ সাহিল শাহাদাত।)

[সম্ভব হলে সবাই এই লেখাটা শেয়ার করুন অথবা ছবিটা বন্ধুদেরকে ট্যাগ করে দিন]

Thursday, December 31, 2009

ফিরে দেখা - ২০০৯

গেল বছরটি ২০০৯ এ (যদিও এখনো আমার ঘড়িতে ৩১শে ডিসেম্বর, ২০০৯ প্রায় বিকেল ৫টা বাজে) আমার জন্য ছিল নানা ঘটনায় মেশানো। ২০০৩ সালে আমেরিকা আসার পরে এই বছরটিই ছিল আমার/আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ঘটনাবহুল বছর।

জানুয়ারী মাসেই আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পাস করি। যদিও গতবছর ২০০৮ এ একবার দিয়েছিলাম, কিন্তু সেবার পাস না করায় প্রায় ছ'মাস পরে আবার দিয়ে পাস করে আসি। উল্লেখ্য, আমার বাবাও বছরের মাঝামাঝি সময়ে পাস করেন। যদিও ২০০৩ সালে এসেছি বিদেশে, তবুও গাড়ির প্রতি একটু দুর্বল ভাব ছিল বাবার। তাই দিতে দিতে দেরী হয়ে গিয়েছিল। আমার মা অবশ্য গত ২০০৭ এই পাস করে লাইসেন্স করে ফেলেছিলেন।

শুরুটা শুভ দিয়ে শুরু হয়ে আরো শুভ হয়। এর কারণ হলো ফেব্রুয়ারী মাসেই আমার বাবা-মা আমেরিকার নাগরিকত্ব পান। ডিভি লটারীধারীরা ৫ বছর আমেরিকা থাকার পরেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাই ২০০৩ সালে আসলেই ২০০৮ এ এ্যাপ্লিকেশন করা হয়। সেটা প্রসেসিং হতে হতে নাগরিকত্বের পরীক্ষা পড়ে ফেব্রুয়ারীতে। সে মাসেই উনারা দু'জন পাস করে নাগরিকত্ব পেয়ে যান।

এরপর আমাদেরও ডাক পড়ে কয়েক মাস পড়ে (প্রায় গ্রীষ্মের ছুটির দিকে)। আমাদের দু'ভাইয়েরও বিনা ঝামেলায় নাগরিকত্ব হয়ে যায়। সার্টিফিকেট বয়স আমার তখনও ১৮ হয়নি বলে আমার জন্য আলাদা এ্যাপ্লিকেশন করতে হয়নি।

যা হোক, শুভয় শুভয় চলতে গিয়ে এলো গ্রীষ্মের ছুটি আমার (প্রায় মার্চের মধ্যখান সময় থেকে)। প্রথম বছর শেষ করলাম ভার্সিটি লাইফের। যেহেতু অর্থনৈতিক একটা মন্দা চলছিল আমেরিকায়, বাবা মনস্থির করলেন এ বছরই সম্ভব হলে একটা বাড়ি করতে হবে। মর্টগেজ রেট তুলনামূলক কম (অন্যান্য যেকোনো বছরের চেয়ে)। তাছাড়া, ওবামা সরকার নতুন বাড়ির মালিকদের এ বছর আলাদা একটা বোনাস জাতীয় পয়সা দেবেন (শুনেছি $৮০০০)। তাই সবকিছু বিবেচনা করে শুরু হলো, বাড়ি খোঁজা।

প্রথমদিকে ফোরক্লোজড বাড়ি, পরে শর্ট সেলে বা যেকোনো পন্থায় কম দামের ১-পরিবারের জন্য বাড়ি খুঁজতে শুরু করলাম। বেশীরভাগই কম দামেরগুলো খুঁজে গিয়ে পেলাম তুলনামূলক খারাপ এলাকায়। যেহেতু মা'র কাজ সকালে ও বাবার কাজ রাতে, তাই এমন এলাকা আমাদের জন্য নয়।

অবশেষে প্রায় ৩-৪ মাস খোঁজা, প্রসেসিং ইত্যাদি নানা ঝামেলা উপরিয়ে শেষে ৩১শে অগাস্ট ক্লোজিং করা হয় জ্যামাইকা অঞ্চলের একটি নতুন বাড়ির। মালিকানা আমার বাবা-মা একা নন। কারণ তাদের দু'জনের বার্ষিক পারিশ্রমিক তাদেরকে ব্যাংক লোন থেকে বিমুখ করে দেয়। ফলে আমার মাসি-মেশোমশায় এর সাথে যৌথভাবে দুই পরিবারের জন্য উপযোগী ৩-বেডরুম বিশিষ্ট (দুই তালা; প্রতিটি তালায় ৩-বেডরুম) বাড়ি ক্রয় করা হয়। এই প্রসেসিং এর মাঝে কত যে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে আমাকে ও আমার বাবাকে এ শুধুমাত্র ঈশ্বরই সাক্ষী আছেন।
যা হোক, শেষ পর্যন্ত ভগবানের কল্যাণে মোটামুটি ভালো দরে ও ভালো মর্টগেজ রেটে ৩০-বছরের লোন দিয়ে ব্যাংক স্বীকৃত হয় বাড়ি ক্রয় হয়।

কিন্তু এর পরপরই বাবার কাজ চলে যায়। যদিও ইতিমধ্যে উনার আগের ৩ বছর ধরের কাজটা কানাডিয়ান মালিকের কাছে গুটিয়ে দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। তারপর উনাদেরকে ম্যানহাটনে কাজ করতে হয় কিছু মাস। কিন্তু এরই মাঝে সে কাজ থেকেই বাবাকে ছাঁটাই করা হয়।

নতুন বাড়ি কিনে এমন এক ধাক্কা (যেখানে মাসে মাসে গুণে গুণে ব্যাংককে মর্টগেজ দিতে হবে) সেখানে কাজ হারানো কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো। যা হোক, কয়েক সপ্তাহ কাজ হারিয়ে ঘরে বসে থেকে বাবা দেখতে দেখতে বাড়ির কাছেই একটা নতুন জায়গায় কাজ নেন। কিন্তু সেখানে আবার সপ্তাহের সাতদিনই কাজ করতে হবে। একে তো তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। প্রতিদিনই ঔষধ সেবন করছেন ডায়াবেটিসের জন্য, তার উপর সাতদিন ৯-১০ ঘন্টা রাতের কাজ একেবারে অসহনীয়। কিন্তু কিছুই করার নেই। কাজও করতে হবে। বাড়িটাকেও ধরে রাখতে হবে। কিছু সপ্তাহ আগে থেকে আবার হাত দুটো নাকি উনার অবশ হয়ে আসছে বলে বলছেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তেমন উপকার হলো না।

এই ফাঁকে আমার দ্বিতীয় বছরের প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেল। ভার্সিটিতে যে ওয়ার্ক-স্টাডিতে কাজ করতাম আগের স্কুলবছর এবার নতুন জায়গায় শুরু করতে হয়েছে। আমার এই পার্ট-টাইম কাজটুকু পরিবারের জন্য একটা আশার আলোর মতো। যা হোক, সেমিস্টারের রেজাল্ট মোটামুটি হয়েছে। ততটা আশাপ্রদ হয়নি যতটা আমি চেয়েছিলাম।

তাছাড়া, এ বছরই আমি সার্টিফিকেট হিসেবে ১৮-তে পা দেই। যদিও মূল বয়স প্রায় ২০ এর মতো (কুষ্ঠী অনুযায়ী)।

এই করতে করতেই বছর প্রায় শেষ হয়ে এলো। এবার নতুন বছরের দিকে তাকানো এবং এই আশায় বুক বাঁধা যেন নতুন বছর আরো ভালো যায় গেল বছরের চেয়ে।

Tuesday, June 30, 2009

পোকোনোস ঘুরে এলাম

গত শনিবার (২৭শে জুন, ২০০৯) ঘুরে এলাম পেনসিলভ্যানিয়া (Pennsylvania) রাজ্যের পোকোনোস (Poconos) থেকে। মূলতঃ এখানকার একটি গ্রুপের সাথে বনভোজনের উদ্দেশ্যেই যাত্রা। তবে ওয়েবে এই স্থাণটি সম্পর্কে জেনে আমার মনে হচ্ছিল এটা যতটুকু বনভোজনের স্পট এর চেয়ে দর্শনীয় স্থাণ।
বাঙালী সবসময়ই টাইম নেয় যেকোনো কাজে। ফলে সাড়ে আটটার বাস যাত্রা গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দেয় প্রায় এগারটার দিকে। জর্জ ওয়াশিংটন ব্রীজ পেরিয়ে নিউ জার্সীর উপর দিয়ে পেনসিলভ্যানিয়া পৌঁছাই প্রায় দুপুর ২টার দিকে। পথে একটা বিষয় বার বার লক্ষ্য করছিলাম যে, যতই গন্তব্যটির কাছে পৌঁছাচ্ছিলাম ততই ঘন ঘন বৃষ্টি পড়ছে। আঁচ করতে পারছিলাম সেসময় যে, আমরা রেইন ফরেস্টের দিকে এগোচ্ছি। একটু বৃষ্টি পড়ে আবার এই যায় চলে। এ যেন মেঘ আর সূর্যের এক লুকোচুরি খেলা। বাসের ভিতর থেকে আকাশটা অবশ্য ভালো বোঝা যাচ্ছিল না। তবে একেবারে সামনের সিটে বসার ফলে সামনের দিগন্তে একবার মেঘ একবার সূর্য আমার চোখে পড়ছিল।
যা হোক, বনভোজনের জন্য যেহেতু এসেছি, তাই লোকজন স্বাভাবিকভাবেই খাবারের জন্য ভীষণ মরিয়া হয়ে ছিল। যদিও বাসে নাস্তা দেয়া হয়েছিল, কিন্তু দুপুর দুটার দিকে বাঙালীর পেট ভাতের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। ফলে ঘোরাঘুরি খাবারের পরে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। আসলে আমার নিজেরও ক্ষুধায় পেট চো চো করছিল। উদ্যোক্তাগণ সহকারে অন্যান্যদের খাবার শেষ করতে করতে প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে যায়।
এরপর উদ্যোক্তাগণের মধ্যে একজন আমাদের সকলের উদ্দেশ্যে জানালেন পোকোনোসের Bushkill Falls (যাকে পেনসিলভ্যানিয়ার নায়াগ্রা বলা হয়) এ ঢুকতে প্রত্যেকের দশ ডলার করে লাগবে। উনি একে একে সকলের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলেন। আমরা প্রায় চারটার দিকে ঢুকলাম জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। এখানে একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, আমরা কিন্তু খাবার-দাবার সেরেছি মূল পোকোনোসের সামনে পিকনিক অংশটিতে। মূল জায়গায় এবার আমরা ঢুকলাম।
ওরে বাবা! এ কেমন কাঠামো! এর আগে আমার নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এই জলপ্রপাত সেটার চেয়ে ভিন্ন। পাহাড়ে-পর্বতে ঘেরা, রেইন ফরেস্টের মধ্যে, চিকন করে আসা জলের স্রোত আসছে আর ঝরে পড়ছে অনেক নিচে। লোকজনের ঘোরার জন্য তারা পাহাড়ের সাইডগুলো দিয়ে সিঁড়ির মতো করে দিয়েছে যাতে জলপ্রপাতটার চারপাশ দিয়ে ঘোরা যায়। আমাদের মধ্যে মধ্যবয়স্কী লোকজন ছিল বেশী। তাই একটু-আধটু ঘুরেই পা ব্যথা হয়ে যায়।
এমন করে ঘোরার মাঝেই হঠাৎ করে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এমনই বৃষ্টি যে লোকজন সব যে যার জায়গায় থেমে যায়। বলে রাখা ভালো, এতক্ষণ যে আমরা ঘুরছিলাম তখনও বৃষ্টি একটু-আধটু পড়ছিল। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। আমার সাথের গাইডটাকেই মাথায় ঠেকিয়ে যতটুকু পারি বৃষ্টি থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করি। বৃষ্টি একটা সময় ক্ষীণ হয়ে আসলে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে আবার উপরে উঠে ফেরত যাওয়া শুরু করি। পেছনে তাকিয়ে দেখি কিছু লোক এখনো দাঁড়িয়ে আছে এই ভেবে বৃষ্টি একেবারে থামবে। কিন্তু তাদের কে বোঝাবে এটা যে রেইন ফরেস্ট!
যা হোক, ফেরত গিয়ে যখন বের হয়ে যাব তখন আরো দুইজন সমবয়সীকে দেখে জানতে চাইলাম তারা কি পুরো জায়গাটা ঘুরে দেখেছে কিনা নাহয় তো দশ ডলারই বৃথা। ঘোরা হলো না এক ঘন্টাও। ওরাও বলল, ওরা পুরোটা স্থাণ ঘোরেনি। ফলে ওদের সহিত গেলাম সাইডগুলো মিলে পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখতে। আমার মাকে পাঠিয়ে দিলাম ফিরে যাবার জন্য যাতে বিশ্রাম নিতে পারে। বয়স্ক বেশীরভাগ লোকই ফিরে গেল আর ইয়াং ছেলে-পেলে আমরা কয়েকজন গেলাম পুরো ট্রেইলটা ঘুরে দেখতে।
এবার প্রায় বনের ভেতরেই ঢুকে গেলাম। মনে হচ্ছিল জীবন্ত কোনো প্রাণীর দেখা মিলবে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, কিছুই চোখে পড়ল না। আর আমার যেহেতু পায়ে স্যান্ডেল ছিল সেহেতু ভয়ে ভয়েও ছিলাম। কখন জানি কিছু কামড় দেয় কিনা। অনেকখানি গিয়ে কিছু লোক দেখলাম। এই সময়টায় আমরা প্রায় হারিয়েই গিয়েছিলাম। ওসব লোকদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম বের হবার পথ কোথায়। তারা দেখিয়ে দিল এবং জানালো, আমাদের বের হতে হতে প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবে। ম্যাপ/গাইড দেখে বুঝলাম, পুরো এলাকাটা ঘুরতে আসলে ৩-৪ ঘন্টা লাগবে। ফলে পশ্চিম সাইডটাতে যাওয়ার প্ল্যান বাদ দেই। এবারের ঘোরার সময়ও খানিকক্ষণ সময় পরপর বৃষ্টি হয়। এতে আমার টি-শার্ট প্রায় পুরোটাই চুবে গেছে। শীত যদিও লাগছিল তবুও এমন একটা অভিজ্ঞতার স্বাদ ভালোই লাগছিল।
ফেরত আসার সময় একটা জায়গায় দেখলাম (যেখান থেকে জলের স্রোত আসছে এবং জল খুবই কম) লোকজন পয়সা ফেলছে আর উইশ করছে। আমাদের মধ্যেও দু'একজন নিজেদের উইশ করল। এরপর ব্যাক টু আমাদের পিকনিক স্পট।
এসে দেখি বড়রা গান-বাজনায় মেতে গেছে। পুরস্কার দেয়া-নেয়াও হচ্ছে। বাস ড্রাইভাররাও তাগাদা দেয়া শুরু করেছে। টাইম ওদের শেষ হবার পথে। ফলে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে আমরা রওয়ানা দিলাম নিউ ইয়র্ক সিটিতে আমাদের নিজ নিজ বাসার উদ্দেশ্যে। পথে চলল গান/ডিভিডি।
আনন্দ-হই-হুল্লোরের সাথেই দিনটা কাটিয়ে ভালোই লাগল।

Thursday, November 27, 2008

মুম্বাইতে হামলা সম্পর্কে কিছু কথা

মুম্বাইতে গতকাল হামলা হয়ে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল এলাকায়। হোটেল, ক্যাফে থেকে শুরু করে হাসপাতালে পর্যন্ত আততায়ীরা হামলা চালায় নিরীহ লোকজনদের ওপর। পুলিশের জিপ হাইজাক করে নিয়ে সেটা ব্যবহার করে যত খুশী লোক মারতে পারে এই পণে মাঠে নামে সন্ত্রাসী বাহিনী "ডেকান মুজাহিদীন"। জানিনা কতটুকু সত্য যে এরাই ঘটনাটা ঘটিয়েছে, তবে এটুকু নিশ্চিত যে, পূর্ব-পরিকল্পনা করে কোনো সংগঠিত গোষ্ঠীই এই কাজ করেছে। কাপুরুষোচিত বললেও মনে হয় কম হবে এসব নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য মানুষরূপী পশুদের অপকর্মের তুলনা করতে গেলে। এদের না সাহস আছে সশস্ত্র কোনো বাহিনীর (পুলিশ, আর্মি) বিরুদ্ধে সামনাসামনি যুদ্ধ করার, কিন্তু মূর্খের মতো মগজ আছে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার। ধর্মকে ব্যবহার করে এরা নিজেদেরকে বেহেস্ত তো দূরের কথা, দোযখেও স্থাণ পাবার জন্য রাখছে কিনা সন্দেহ। কোনো ধর্মের কোনো পুস্তক বা কোনো ঈশ্বরের বাণী হিংস্রতাকে প্রশ্রয় দিতে পারে না - সে যত পন্ডিত, আলেমরাই বোঝাক না কেন। আল্লাহর নামকে ব্যবহার করে এরা অন্য প্রকৃত আল্লাহর বান্দাদের অমুসলিমদের কাছে ছোট করছে। মনে হচ্ছে, মাদ্রাসা ব্যাপারটাকেই বন্ধ করে দেয়া উচিত, বা কমিটি করে দেখভাল করার জন্য প্রকৃত মুসলিমের প্রয়োজন এসব ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাবার।
যদিও এই ঘটনা নতুন নয়, তবুও আমার মনে হলো, প্রকৃত মুসলিমদেরই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। রাজা রামমোহন রায় যেমন করে হিন্দু সমাজে পরিবর্তন এনেছেন শতাব্দীর প্রাচীন সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ উঠানোর জন্য কাজ করে, মুসলমানদের মধ্যেও আমার মতে আমুল পরিবর্তন প্রয়োজন। সমাজ ব্যবস্থায় এইসব মৌলবাদীমনা আলেম, হুজুরদের বহু বছরের প্রাচীন ব্যবস্থাসমূহকে নতুন করে একটি একবিংশ শতাব্দীর মতো করে উপযোগী করার। যাতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলেই সকলে মুসলমানদের দিকে আঙুল না তুলে দেখায়। আর এতে সকলের জন্যই মঙ্গল হবে।

Friday, November 21, 2008

প্রথম অপেরাতে গেলাম

অপেরা (বা গীতিনাট্য) সম্পর্কে তেমন জানতাম না। এবার একটা ইলেক্টিভ ক্লাস হিসেবে নিতে হয়েছিল এটিকে। অনেক কিছুই জানলাম অপেরা সম্পর্কে, এর ইতিহাস, সময়ের সাথে এর ব্যাপ্তির কথা। ওলফগ্যাং এ্যামেডিউস মোজার্ট, হ্যান্ডেল, মোন্টেভের্ডি, পুচিনি - এদের সকলের নানা অপেরা সম্পর্কে জানলাম। ক্লাসের একটা প্রজেক্ট ছিল, টার্মের শেষদিকে একটা লাইভ অপেরা শো দেখে রিপোর্ট লিখতে হবে। সেটি করতেই গত শনিবার নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটন অপেরা হাউজে গেলাম।
টিকেট পাইনি $৪২ এর কমে। যদিও $১৫ ছিল কিছু, কিন্তু সেগুলো বুকড। তাই প্রায় ৭টা বড় ডিভিশনের মধ্যে সর্বশেষটাতে গিয়ে পড়ি। প্রথমে মেট্রোপলিটন হাউজের সামনে এসেই থমকে দাঁড়াই। ইয়া বড়ো কাঠামো। কখনো এ ধরনের মুভি থিয়েটার (অপেরা হাউজকে মুভি থিয়েটার জাতীয়ই মনে করতাম) দেখি নাই তো! যা হোক, টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল বলে গিয়েই ঢুকে পড়ি যদিও শো শুরু হবার কথা রাত ৮টায়, কিন্তু আমি পৌঁছে গেছি প্রায় ৭টার মধ্যেই।
ঢুকে কাউন্টার থেকে আমার ওয়েব প্রিন্ট-আউটটা দেখিয়ে টিকেটটা নিই। ওটাকে রিপোর্টের সাথে জমা দিতে হবে। তাই যত্নের সাথে রাখতে হবে ওটাকে। আজ রাতের শো হলো, পুচিনির "ম্যাডাম বাটারফ্লাই" (ইটালিয়ানে উচ্চারিত হবে "মাদাম বাটারফ্লাই")। ইচ্ছা ছিল মোজার্টের "দ্য ম্যাজিক ফ্লুট" বা "ডন জিভানী" দেখব। কিন্তু ইদানীং কালে সেগুলো হবে না, পরবর্তী ফেব্রুয়ারীতে।
যা হোক, প্রায় সাড়ে সাতটায় আমাদের দর্শকদের ঢুকতে বলা হলো মূল শো উপভোগের স্থাণে। সাপের মতো পেচানো সিঁড়ি দিয়ে উঠে শেষ তালায় উঠে গেলাম। রিফ্রেশমেন্টের জন্য ওয়াইন-হুইস্কি দেয়া আছে আমার তালায়। আমি মনে মনে বলি, দরকার পড়লে না খেয়ে থাকব, তবুও এসব ছাই-পাশে মুখও দেব না।
মূল কক্ষে গিয়ে আমি তো অবাক। এত্ত বড় হলরুম! সাতটি লেভেল করে করে বানানো এটির এত উপরেই আমি যে একটু হলে সিলিং ধরতে পারব মনে হয়। আর সবচেয়ে নিচ তলার লোকজনকে এত পিচ্চি লাগছিল দেখতে যে, আমার গা শিউরে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। কী যে করি! চটপট সিটে বসে যাই যাতে সোজা তাকিয়ে থাকতে পারি, নিচে তাকাতে না হয়। তবুও নিচে তো তাকাতেই হবে শো দেখতে হলে। একটু সময় যেতে যেতে স্বাভাবিক হতে লাগলাম।
কিন্তু যা আগে থেকে ভাবছিলাম তাই হলো। প্রথম এ্যাক্ট শুরু হবার ২০-২৫ মিনিটের মধ্যেই আমার ঘুম ঘুম ভাব পাচ্ছে। ইদানীং কালে কোনোকিছু তেমন মজা না লাগলে (বিশেষ করে রাত সাড়ে আটটায়, গতদিনটা ঘুমাতে পারি নাই) শুধু ঘুম ঘুম পায় যা আগে হতো না। যাক, প্রায় ৪৫ মিনিট পর প্রথম এ্যাক্ট শেষ হবার পর যখন সকলে তালি দিল, তখন টের পেলাম। ৫-৭ মিনিটের বিরতি দিল। আমি এমন চিপায় ছিলাম যে, এতগুলো মানুষকে ডিঙিয়ে বাথরুমে যাব করেও যাওয়া হলো না।
এভাবে করে পরের এ্যাক্টের প্রথমাংশ শেষ হবার পর এমন আরেকটি বিরতি পেলাম। এরপরে ফাইনাল অংশে ঘুমের মধ্যেও জোর করে চোখগুলোকে খুলে রাখার চেষ্টা করলাম। আগেরবারগুলোর চেয়ে মনযোগ দিয়েই এবার দেখতে পারলাম। হঠাৎ সামনের এক ব্যক্তির সিটের পেছনে দেখলাম একটা স্ক্রোলিং বারে ইংরেজী সাবটাইটেল লিখছে। এতক্ষণ ইটালিয়ান শুনতে শুনতে কিছুই বুঝছিলাম না ঘটনার (যদিও মূল গল্প আগেই জানা ছিল)। সাথে সাথে আমার সামনের সিটের স্ক্রোলিং বার এক্টিভেট করে দিলাম একটা লাল বাটনে টিপ দিয়ে। সারা অপেরার (প্রায় তিন ঘন্টার) এতক্ষণ (প্রায় আড়াই ঘন্টা) কিছুই বুঝলাম না। আর এই বাটনটা টিপ দিলে কত আগেই না এসব ঘটনা অভিনয় আর সংগীতের সাথে বুঝতাম। যা হোক, মন্দের ভালো যে তাও কিছুটা তো পেলাম। নাহয় তো এ ব্যাপারটা হয়তবা অজানাই থেকে যেত।
এরকম এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে তিন ঘন্টার অপেরা শেষ করে রাত এগারটায় বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। ঘরে এসে রাত একটায় খাটে পড়েই ঘুম। আর কি! এবার নিশ্চিন্তে শুধু ঘুম! অপেরা কেন এতো বোরিং লাগলো। কত আশা নিয়ে গেলাম। অথচ গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়ে এমন হলো কেন? জানিনা হয়ত গতদিনের কম ঘুমের কারণে কিংবা অন্য কারণে। তবে এই সুযোগে একটা অপেরা হাউজের ভেতরখানা তো দেখা হলো। বাপ-দাদার জনমে এমন জায়গা কেউ দেখেছে নাকি!

এই সপ্তাহের প্রথমেই এই বিরল অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু লেখাপড়ার চাপে আর পেরে উঠিনি।

Saturday, August 09, 2008

ওয়াশিংটন ডিসি ভ্রমণ

অন্যান্য ভ্রমণগুলোর মতো এটির জন্যও সেই একই দলের (একটি হিন্দু সংগঠন) মাধ্যমে যাই ওয়াশিংটন ডিসিতে। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রায় ৪-৫ ঘন্টার ড্রাইভ হাইওয়েতে। অন্যবারের মত ২ দিনের ভিজিটে না গিয়ে এবারেরটা ছিল ১ দিনের ভ্রমণ। দিনটা শনিবার।
সকাল ৮টা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে বাস ছাড়ে নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে। অন্যান্যবারের মতো বাসেই সকালের নাস্তা সারি। এরপর বাসে আড্ডা, হাসি-ঠাট্টায় সময় কেটে যায়। দুপুর ১টার দিকে ম্যারিল্যান্ড গিয়ে পৌঁছাই। উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসি কিন্তু একটা রাজ্য না নিউ ইয়র্কের মত। আমেরিকার এই রাজধানীটির অবস্থাণ দুটি রাজ্যের মাঝামাঝি, ম্যারিল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়া। আমরা ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে গিয়ে উঠি মধ্যাহ্নভোজন একটি মন্দিরে সেরে ফেলব বলে আর মন্দির দর্শনও সেই সাথে।
সেখান থেকে প্রায় ৩টা নাগাদ রওয়ানা করি মূল ওয়াশিংটন ডিসির রাষ্ট্রীয় ভবনগুলো দেখার উদ্দেশ্যে। যেহেতু আমরা একদিন এখানে থাকার উদ্দেশ্যে এসেছিলাম, তাই আমাদের টার্গেট ছিল সন্ধ্যার মধ্যে যাতে বাড়ি ফিরতে পারি নিউ ইয়র্কে। তাড়াহুড়ো করে শুধুমাত্র US Capitol বিল্ডিং আর White House এই দুটোর সামনেই শুধু নামি। অন্যগুলোতে নামলে আরো সময় নষ্ট। পথে যদিও দেখেছি Library of Congress, বা Washington Monument কিন্তু সেগুলোর কাছে যেতে পারিনি। কিংবা Jefferson Memorial কিংবা Lincoln Memorialও ঠিকমত দেখা হয়ে উঠে নাই।
যা হোক, যাই দেখেছি তাই কম কিসে! তবে এ জায়গায় আবার গিয়ে ভালোভাবে দেখার ইচ্ছা আছে। আমার এক দাদার কাছে শুনেছি সেখানকার Smithsonian Museumটা নাকি ভীষণ সুন্দর, ওটাও দেখার ইচ্ছা আছে পরবর্তীতে।
পরে রাত সাড়ে দশটার মধ্যে আমরা নিউ ইয়র্ক ফিরি ৭টার দিকে ডিসি থেকে রওয়ানা দিয়ে।

Friday, August 08, 2008

নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভ্রমণ

এটাতেও গিয়েছিলাম সেই একই সংঘের উদ্যোগে ২০০৬ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে। গ্রীষ্মের ছুটি। শনিবার। সকাল প্রায় ৮টার দিকে রওয়ানা দেই ৩টি বাসযোগে। মজা হলো সবাই আমরা বাঙালী, বাংলাদেশী। বাসে হাসি-ঠাট্টা তো আছেই। বাসের সকলকে সকালের নাস্তা দেয়া হয় বাস ছাড়ার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই।
যদিও নায়াগ্রা অঞ্চলটা পড়েছে নিউ ইয়র্ক রাজ্যের মধ্যেই, তবুও আপনারা যদি ম্যাপে দেখেন, নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে এটা অনেক দূরে। আমার কাছে লাগে গোটা বাংলাদেশের চেয়েও বড় নিউ ইয়র্কটাকে।
আমরা দুপুর দেড়টা থেকে দুটার দিকে পৌঁছাই মূল জলপ্রপাতের নিকট। নেমেই দেখি বৃষ্টি। সবচেয়ে মজার বিষয় যেটা আমার কাছে লেগেছে সেটা হলো যখন জল পাহাড়ী এলাকা থেকে পরে ফলসে তখন যে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় তা মেঘের কাছাকাছি যায় (দেখতে লাগে, জানি না আসলে লাগে কিনা)।
তারপর বোট রাইডে উঠি। মনে নাই ঠিক কত ডলার লেগেছিল। তবে টাকাটা কাজে লেগেছে। নায়াগ্রাকে সামনাসামনি এত উঁচু থেকে দেখতে সত্যিই মন্দ লাগে না। আর জলরাশি দেখে গা শিউরে উঠলেও একটা অজানা আনন্দ লাগছিল পুরো রাইডটাতেই। এত গরমের দিনেও শীত লাগছিল কিছুটা জলের ছটার কারণে। আমাদেরকে এক ধরনের রেইনকোট দেয়া হয় জলের ছটা থেকে রক্ষার জন্য।
সবার পেটই খিদায় অস্থির। তাই হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। গিয়ে সেখানে খাওয়া-দাওয়া, একটু রিফ্রেশমেন্ট করে সন্ধ্যা ছ'টার দিকে আবার আসি মূল এলাকাটাতে। হোটেলটা জলপ্রপাত থেকে ৫মিনিটের রাস্তা হেঁটে গেলে। যেহেতু সূর্য ডুবেছে প্রায়, তাই লাইটিং শুরু হয়ে গেছে। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনী রঙে উদ্ভাসিত। নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি পড়েছে কানাডা আর নিউ ইয়র্কের বর্ডার এলাকায়। ওপার থেকে কানাডীয়রা লাইটিং করে আমেরিকার সাইডে। ফলে তারাই ভালো দেখতে পারে এই রঙ-বেরঙের লাইটিং।
এরপর রাতে একটা ভারতীয় রেস্টুরেন্টে খাবার সেরে ফিরি হোটেলে। পরদিন যাবার ইচ্ছা আছে কানাডা। সেখান থেকে ভিউটা আরো বেটার।
সকালে নাস্তা সেরে ন'টার মধ্যে যাত্রা করি কানাডার উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটেই। ২০মিনিটের মধ্যেই কানাডায় পৌঁছাই। গ্রীণ কার্ড দেখালে কোন সমস্যাই করে না বর্ডার পেট্রলরা।
সেখান থেকেই বেশীরভাগ ছবি তুলি। একটা টাওয়ার আছে অনেক লম্বা। এটার চূড়ায় রাজকীয় স্টাইলের রেস্টুরেন্ট। খাবার না খেলেও এই টাওয়ারে উঠতে গেলে কানাডীয় প্রায় $৩০ লাগে জনপ্রতি। সেখান থেকে দেখা যায় কিভাবে তিনটি লেক মিলে এই নায়াগ্রা তৈরি হয়েছে।
এরপর দুপুর ১টার দিকে আবার আমাদের হোটেলের দিকে ফেরা। বাস ছাড়া হয় মধ্যাহ্নভোজ সারার পরে। বিকাল ৪-৫টা নাগাদ যাত্রা শুরুর পর রাত ১০টার দিকে পৌঁছাই বাসায়।

Thursday, August 07, 2008

বস্টন ও কেপ কেড ভ্রমণ

প্রায় প্রতি বছরই এখানকার একটা সংগঠনের মাধ্যমে যাওয়া হয় এখানে-সেখানে। এবার নির্ধারিত হয় বস্টন ও কেপ কড (Cape Cod)। এই কেপ কড হচ্ছে আমেরিকার সবচেয়ে পূর্বপ্রান্ত। যদিও নিউ ইয়র্ক বা নিউ জার্সী সাগরের তীরে অবস্থিত, তবুও কেপ কড হচ্ছে এগুলোর চেয়েও কিছুটা পূর্বের দিকে যা কিনা এমন এক জায়গায় যার সামনে আর দু'পাশে আটলান্টিক আর পেছন দিকে ভূমি।
তা আমরা প্রায় ৬০-৭০জনের এক দল লোক (পরিবার-পরিজন নিয়ে) শনিবার সকাল ৯:৪৫টায় রওয়ানা দেই বস্টনের উদ্দেশ্যে। সেখানে যাবার পথে আমাদের সকালের নাস্তা হিসেবে হালকা-পাতলা খাবার দেয়া হয়। এরপর প্রায় তিনটে নাগাদ বস্টন মূল শহরে আমরা পৌঁছাই। মূলত ডাউনটাউনটা বাসে চড়েই দেখতে হয়। এখানে থামানো যায় না। আর পার্কিং পাওয়াও কষ্টসাধ্য, তার ওপরে একটা বাস!
তারপর একটা Aquarium-এর নিকট এসে ভিড়লাম। সেখানে নেমে কেউ কেউ aquarium-এর উদ্দেশ্যে গেল। আর কেউ কেউ মধ্যাহ্নভোজন করতে রেস্টুরেন্টে ঢুকল। আমরা (আমার বাবা-মা, আর ভাই) খেতেই গেলাম। খিদেয় পেট চো চো করছে, কিসের একুয়েরিয়াম দেখব!
তারপর প্রায় ছ'টা নাগাদ আমরা রওয়ানা হলাম MIT আর Harvard-এর উদ্দেশ্যে। সেখানে প্রায় ঘন্টা দেড়েক ঘুরলাম ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন। জানি না কখনো এগুলোতে স্টুডেন্ট হিসেবে ঢুকতে পারব কিনা!
এরপর রাতের ভোজন করতে একটা বোম্বে রেস্তোরায় ঢুকলাম (এটাই বাঙালী হিসেবে সবচেয়ে নিকটতম স্বাদের খাবারের স্থাণ, অন্যগুলো সব বিদেশী; ভাত না খেলে বাঙালীর চলে?) সেখানে বুফে খেলাম সবাই $14 প্রতি প্লেট।
প্রায় রাত দশটা নাগাদ হোটেলের উদ্দেশ্যে গেলাম। রাতটা কাটালাম একটা বাংলাদেশের শেরাটন জাতীয় হোটেলে। ঘুমিয়েও শান্তি এমন জায়গায়।
পরদিন সকালে কেপ কডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। এর আগে অবশ্য সকালের নাস্তা সারলাম সেই হোটেলেই। সেই হোটেল থেকে একেবারে বিদায়ও নিয়ে এলাম। এত দামী হোটেলে বেশীক্ষণ থাকলে আরো বেশী ডলার খরচ।
প্রায় ১২টা নাগাদ সেখানে পৌঁছালাম। সাড়ে বারটায় ফেরী ছাড়বে। তাড়াতাড়ি সকলের জন্য টিকেট কাটা হলো। ২বছরের নিচের শিশুদের ফ্রী। আর এর পর থেকে ১৩ বছর $30 আর বড়দের $37। ও হ্যাঁ, এই ফেরী দিয়ে লোকে গভীর সাগরে গিয়ে তিমি দেখতে যায়। এটির জন্য দৈনিক প্রায় ৩০হাজারেরও বেশী মানুষ এখানে পাড়ি জমায়। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার এই রাইডে দেখলাম আমার চেয়ে হাজার গুণ বড় তিমিদের খেলা। যদিও সাধারণত এরা জলের উপর তেমন আসে না। তবে একটা বাচ্চা তিমি একবার লাফিয়ে উঠে (ওটার ছবি তুলতে পারিনি)। এত বড় জীবিত মাছ জীবনে কখনো দেখিনি মনে হয় আর দেখবও না।
যা হোক, এটা সেরে প্রায় ৪-৫টা নাগাদ নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে বাসায় পৌঁছাই রাত সাড়ে এগারটায়। জ্যামে পড়ে এত দেরী।