অতীতের রাষ্ট্র বিজ্ঞান আজকের দিনে ইতিহাস, আর
আজকের দিনের রাষ্ট্র বিজ্ঞান অনাগত দিনগুলিতে ইতিহাস হিসাবে পাঠ্য থাকবে।
পৌরনীতি বিষয়ে পাঠদানরত শিক্ষক মহোদয় কর্তৃক শ্রেণী কক্ষে তার
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এখনো বিরোধী দলীয়
নেত্রী, এটা বর্তমান এবং তিনি দেশের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন, এটা অতীত। ঠিক
তেমনি আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আজকের দিনের শাসন ব্যবস্থা একদিন অতীত হয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে।
আজকের বিশ্ব প্রযুক্তি সুপার কম্পিউটারের যুগে প্রবেশ করেছে।
প্রতিদিনই নিত্য নতুন প্রযুক্তি নতুন নতুন সুবিধা নিয়ে আসছে, পাশাপাশি
বিদ্যমান প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা খর্ব করে ক্রমান্তয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। অধিক
সুবিধা সম্পন্ন প্রযুক্তিকে আমরা গ্রহণ করি আর পুরোনো প্রযুক্তিকে ফেলে
দিই। একই ভাবে আজকের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি একদিন আমাদের অনাগত প্রজন্মের
কাছে পুরোনো হয়ে যাবে। আমরা যেমন আমাদের বাবা দাদাদেরকে মান্ধাতা আমল বা
মান্ধাতার প্রযুক্তি বলে তিরস্কার করছি, ঠিক একইভাবে একদিন আমাদের সন্তানগুলোও আমাদের শাসনামলকে মান্ধাতার শাসনামল বলবে এবং আমার আমাদের আজকের
দিনের কথিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিটিকে মান্ধাতা প্রযুক্তি বলে তিরস্কার করবে।
সুতরাং প্রযুক্তি সব সময়ই ছিলো এবং এখনো আছে, ভবিষ্যতে নিত্য নতুন
প্রযুক্তি বের করবে আমাদের অনাগত প্রজন্ম। এধারা সৃষ্টি থেকে শুরু হয়েছে আর
অনাদিকাল অবধি চলবে।
আমরা যদি আজকের শুধু কম্পিউটার প্রযুক্তির
দিকে তাকিয়ে দেখি, তাহলে দেখতে পাই, কম্পিউটার মার্কেটে সকাল বেলায় যে
ডিভাইসটি এসেছে, বিকেলের মার্কেটে আরো অধিকতর ক্ষমতা সম্পন্ন ডিভাইস এসে
সকাল বেলার ডিভাইটিকে পুরোনো করে দিচ্ছে। এধারণা থেকে আমরা ভাবতে পারি
বর্তমান কাল কত ক্ষণস্থানী। কিংবা একই বিষয়ে প্রযুক্তির পরপর আবিস্কার
কোনটিকেই বেশীক্ষণ স্থায়ী করছে না বলে অতি দ্রুত পুরোনো হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং
বিজ্ঞানের অতি ঘন ঘন আবিস্কারের দিকে তাকালে আমরা বলতে পারি বর্তমান কাল
বলে কোন কাল নেই। যা আছে, তাহলো কিছুক্ষণ আগে ঘটা সেটা “অতীত”, এবং অতিদ্রুত
আর একটি আসতে যাচ্ছে, সেটি “ভবিষ্যৎ”। বিজ্ঞানের আবিস্কারে বর্তমান কাল
নেই বললেই চলে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি মহাগ্রন্থ হলো মহাভারত।
এটিকে মহাপুরান হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এ মহাপুরানে উল্লেখ্যযোগ্য
চরিত্র গুলোর মধ্যে একটি হলো শ্রীকৃষ্ণ, যাকে আমরা ভগবান বলি, অন্যটি হলো
কৃষ্ণা, যাকে আমরা পঞ্চপান্ডবের স্ত্রী দৌপদী নামে জানি। এ দুজনের
আলাপচারিতায় শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বিষয়ে বলেছিলেন সময় বা কাল
বলতে দু প্রকারের হয়। প্রথমত অতীত ও দ্বিতীয়ত ভবিষ্যত। বর্তমান কাল বলতে
কিছুই নেই। কারণ বর্তমান কাল এত বেশী ক্ষণস্থায়ী যে এটির নাম উচ্চারণ করতে
করতে অতীত হয়ে যায়। আজের দিনের প্রযুক্তিও একই কথা বলে। যে বিষয়টি নতুন
আবিস্কৃত হয়েছে, এটি দেখতে না দেখতে একই উদ্ভাবক আরেকটি প্রযুক্তি মানুষকে
উপহার দিয়ে চলেছেন। তাই বর্তমানে প্রযুক্তি বলে কিছু থাকছে না।
এমনি ভাবে দেখলে দেখা যায় কাল বা সময় হলো দুটি অতীত এবং ভবিষ্যত।
বর্তমানকাল বলতে কিছু নেই। অথচ বাংলা কিংবা ইংরেজী ব্যাকরণ পড়ানো সময় আমাদের
মাষ্টার মশাইরা আমাদের সময় বা কালের তিন বিভাগ পড়িয়েছেন - অতীত, বর্তমান ও
ভবিষ্যত।
যে প্রযুক্তিটি এই মাত্র মানে ক্ষণকাল আগে এসেছে, এটি সব
সময় দামী হয়। সাধারনের ক্রয় সীমা বা ব্যবহারের উর্ধ্বে। এ কারণে যারা এ
প্রযুক্তিটি ব্যবহার না করতে পারে, এরপ্রতি আগ্রহ ও এর কার্যকারিতা দেখে
অত্যাশ্চর্য্য হবেন - এটাই স্বাভাবিক। এ অতি আধুনিক সদ্য প্রসূত বিজ্ঞান
প্রযুক্তিটিকে যদি অতি অনগ্রসর এলাকার মানুষের সামনে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে
এটিকে ঐ অনগ্রসর মানুষগুলি বিজ্ঞান প্রযুক্তি না বলে অলৌকিক ভাবাটা অসঙ্গতঃ
হবে না। আবার যারা এ প্রযুক্তিটি দেখেছেন এবং ব্যবহার করেছেন, তাদের কাছে
এটি সাধারণ এবং ভবিষ্যতে পরিবর্তনযোগ্য মনে হবে, অলৌকিক কিছু নয়।
আমরা আমাদের চারপাশের মানুষদের তার ধারণ করা মতাদর্শনের ভিত্তিতে হিন্দু,
মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ইত্যাদি বলি। একটু সমালোচনা হলেও বলি
এগুলি এক একটি দল বা গোষ্ঠী ভিত্তিক পরিচিতি। মানুষের আদি ধর্ম দর্শন হলো
মনুষ্যত্ব, যেটি সনাতন। সে যাইহোক, আমি সকল ধর্ম বিশ্বাসী দলের জন্য ধর্মের
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলির একটি উপাদান অলৌকিকত্ব নিয়ে আমার ভাবনার
বিষয়টি বলার চেষ্টা করবো। পৃথিবীর কম বেশী সকল ধর্মেই ধর্ম প্রচারকরা
অলৌকিকত্ব প্রকাশ করিয়ে অনুসারী বাড়িয়েছেন। ধর্ম প্রচারকের সেই অলৌকিকত্ব
জনশ্রুতিতে মহিয়ান হয়ে অনন্তকাল অবধি সেই ধর্ম বিশ্বাসীদের কাছে বহাল থাকবে
এটাই স্বাভাবিক। অথচ ঐ অলৌকিকত্বের মধ্যে যুক্তি তর্ক থাকুক বা না থাকুক
অন্ধ অনুসারীরা সেটি নিয়ে একদমই মাথা ঘামাবেন না। আমি অন্যান্য ধর্মের
অলৌকিকত্ব নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যেহেতু আমি একজন সনাতন ধর্মানুসারী, তাই
সঙ্গতঃ কারণে সনাতন (তথা হিন্দু) ধর্মের অলৌকিকত্বের সাথে বিজ্ঞানের সর্ম্পক
নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। হিন্দু পুরান গুলির দিকে গভীর ভাগে লক্ষ্য
করলে দেখা যায়, সনাতন ধর্মে অলৌকিকত্ব বলতে বুঝানো হয়েছে বিজ্ঞান ও
যুক্তিকে। কোন মন গড়া, কিংবা কোন সাধারন মানুষকে চমৎকৃত কিংবা আকৃষ্ট করার
জন্য ভৌতিক কিছু না।
০১) আমরা যারা হিন্দু, ত্রেতা যুগে অযোধ্যার
রাজা দশরথ পুত্র শ্রীরামকে আমরা অবতার হিসাবে জানি। তখনকার অযোধ্যাবাসীরাও
তাকে ভগবান হিসেবে জানত। তবে শ্রীরাম নিজেকে কখনো ভগবান হিসাবে দাবী
করেননি। কোন অলৌকিকত্ব দেখাননি। শ্রীরাম তাড়কা বধ করার পূর্বে ঋষি
বিশ্বামিত্র তাঁকে যুদ্ধ অস্ত্র-শস্ত্র বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যা দিয়ে
তিনি তাড়কা বধ করেন। যদি অলৌকিক ভাবে করা যেত, তাহলে ঋষি বিশ্বামিত্র
রাজপুত্র শ্রীরামের সাহায্য নিতেন না। তিনি নিজেই যোগবলে করতে পারতেন।
এছাড়া ঋষি বিশ্বামিত্র কর্তৃক শ্রীরামকে অস্ত্র বিদ্যা শিখিয়ে দেয়া এবং
শ্রীরাম কর্তৃক তাড়কা বধ থেকে আরো একটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধু বিদ্যাধারী
হলে চলবে না, এটি প্রয়োগ করার দত্ত্বা, মনোবল ও সাহস থাকা দরকার। এজন্যে ঋষি
বিশ্বামিত্রের তাড়কা বধের জন্য অস্ত্র বিদ্যা জানা থাকলেও তিনি প্রয়োগ না
করে শ্রীরামের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
০২) শ্রীরাম মাত্র ৮ বছর বয়সে
যুদ্ধ করে তাড়কা রাক্ষসী বধ করেছিলেন। অন্য দিকে নিজ পত্নী সীতাকে লংকার
রাজা রাবণ হরন করে নিয়ে যাবার পর তিনি যুদ্ধ করে উদ্ধার করেছিলেন। এজন্যে
তিনি বানর সেনা ব্যবহার করেছেন। সমুদ্রের উপর দিয়ে বাঁধ নির্মান করেছিলেন।
এগুলো রামায়ণে শ্রীরামের অলৌকিকত্ব মনে করে ভক্তকুল আবেগ আপ্লুত হন। কিন্তু
ভগবান শ্রীরামের এগুলো কোনটিই অলৌকিক কাজ ছিল না। আজকের নদী ও সমুদ্রের
উপর দিয়ে বড় বড় ব্রীজ নির্মানের ধারণা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আজকের
প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমরা ব্রীজ নির্মানের যে কাজ দেখিনি, শ্রীরাম
বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ত্রেতা যুগে সমুদ্রের উপর দিয়ে ব্রীজ
নির্মান করেছেন। এছাড়া Geography, Discovery, Animal Planet এর
মাধ্যমে দেখতে পাই, বানরকে প্রশিক্ষিত করে ভারতের নগর রক্ষক/পুলিশ বাহিনী
বন্য বানর নিয়ন্ত্রণে আনয়ন করে। প্রশিক্ষিত কুকুর আমাদের দেশেও 'ডগ স্কোয়াড'
হিসাবে আইনশৃংখলা রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে প্রশিক্ষিত
ঘোড়া দিয়ে গরুর পাল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সুতরাং এগুলোর মাধ্যমে বুঝতে অসুবিধা হয়
না, শ্রীরাম বানর সেনা ব্যবহার করে রাবণের সাথে যুদ্ধ জয় করেছেন সেটি
অমূলক কিংবা অলৌকিক। বরং স্পষ্টতঃ প্রমাণিত হয়, শ্রীরাম কর্তৃক সেই যুগেই
অবুঝ বানরদের কাজে লাগানোর জন্য উন্নত মনস্ত্বাত্বিক কৌশল প্রয়োগ করেছেন।
যেটি আজকের উন্নত বিশ্বে কুকুর, বানর, ঘোড়া প্রশিক্ষন কেন্দ্রে প্রয়োগ করা
হয়। সুতরাং ত্রেতাযুগে শ্রীরাম বাস্তুবিদ্যা ও মনস্ত্বাত্বিক জ্ঞানে যে
পরিমানে উন্নত ছিলেন, ঐ সময় একই ধরনের বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিতে তার সমকক্ষ কেহ
ছিলেন না বিধায় অন্যান্যদের কাছে এ সকল জ্ঞান অলৌকিক বলেই মনে হয়।
রামায়নের শ্রীরাম লংকার রাজাকে পরাজিত ও নিহত
করলেন। ১৪ বছর বনবাসের সময় শেষ হতে চলল। অন্যদিকে রামের অনুপস্থিতিতে ভরত
অযোধ্যায় রাজার দায়িত্ব পালন করছেন। ভ্রাতৃপ্রিয় ভরত বনবাস থেকে ফিরিয়ে আনায়
ব্যর্থ হয়ে শ্রীরামকে বলেছিলেন, ১৪ বছরের অধিক যদি একদিনও হয়, তাহলে তিনি
রাম বিহনে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেবেন। শ্রীরাম ছোটভাই ভরতের সেকথা
ভুলেননি বিধায় সীতাকে উদ্ধার করার পর অতি
অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে অযোধ্যায় ফেরার তাড়া অনুভব করে বিচলিত হয়েছিলেন।
কিন্তু তিনি কি করে যাবেন, যে সময়টুকু তার হাতে আছে, ঐ সময়ের মধ্যে
পদব্রজে, ঘোড়া কিংবা রথে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। সেজন্যে তিনি চিন্তিত
ছিলেন। লংকার বিজিত ও নিহত রাবণ রাজার ছোট ভাই বিভীষণ শ্রীরামকে এ ব্যাপারে
সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। তিনি শ্রীরামকে জানালেন, ভাই রাবণ আকাশ পথে
দ্রুত উড়ে যেতে পারে এমন একটি যান ব্যবহার করতেন, যাকে বলা হয় পুস্পকরথ।
শ্রীরামকে তিনি , তা দিয়ে সাহায্য করবেন। বিভীষণ লংকার রাজা এবং শ্রীরামের
মিত্র। তাই তিনি মিত্রের এ সহযোগিতামূলক প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং আকাশ
পথে তিনি অযোধ্যায় ফিরলেন।
আগে বলা হয়েছে, যে প্রযুক্তি
অতি ব্যয় বহুল ও সাধারণের ক্রয়সীমা ও ব্যবহারের ক্ষমতার বাইরে এবং যারা
সে প্রযুক্তি চোখেও দেখেনি, সেটা দেখার সুযোগ পেলে প্রযুক্তিটিকে যাদুকরী,
অত্যাশ্চর্য্য ও অতিপ্রাকৃত শক্তি বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক। এ ধরনের ধ্যান-ধারণা এখন যেমন আছে, অতীতেও ছিলো। সুতরাং ত্রেতা যুগে পৃথিবীতে সবচেয়ে অধিক
ধনশালী রাবণই শুধু আকাশ যান তথা পুস্পকরথ মানের বিমান ব্যবহার
করতো। আজকের অহরহ বিমান উড়াউড়ি দেখলে সে পুস্পকরথকে কখনো কল্পিত কিংবা
অলৌকিক বলে মনে করার কোন কারণ থাকে না। বরং বলা যায়, আজকের দিনের
প্রযুক্তিটি সে সময় রাবণ রাজা ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলো বিধায় তিনি ব্যবহার
করতেন।
এবারে একটু দ্বাপর যুগে আসা যাক। দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ
ভগবানের অবতার রূপে পূজিত হন। ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের শিশুকাল হতে যৌবনের পুরো
সময় পর্যন্ত অতিপ্রাকৃত শক্তি, বীর্য, তীক্ষ্ন বুদ্ধি প্রজ্ঞা দেখে অভিভূত
হন। প্রথমে আসা যাক ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাতা যশোদাকে তার মুখ গহ্বরের ভিতরে
বিশ্বরূপ দেখানোর কথায়। আজকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান
করে ঘরে বসে টেলিভিশনে Discovery বা Geography চ্যালেন যখন
বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের ডকুমেন্টারী দেখেন কিংবা দেখি তখন কি আমরা আশ্চর্য হই
না। আজ যেমন প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে আমাদের পৃথিবী সহ
অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান এবং প্রকৃতির নানান দুযোর্গ গুলি দেখতে এবং
অনুভব করে শিহরিত হই, তখন সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসাবে আমাদের কি একদমই মনে
হয় না, মা যশোদা আমাদের মতই টেলিভিশনের মত কোন পর্দায় বিশ্ব
বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের জ্যান্ত ছবির কোন ডকুমেন্টরী দেখেছেন। ধরে নিন তিনি
আজকের দিনের এ প্রযুক্তিটির মত কোন প্রযুক্তির মাধ্যমে মা যশোদা
বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের লয়, প্রলয় সহ নানান রকম প্রাকৃতিক উত্থান পতনের
ডকুমেন্টরী দেখেছেন এবং তিনিই একমাত্র যোগ্যদর্শক ছিলেন আর এ প্রযুক্তি
শুধুমাত্র বালক শ্রীকৃষ্ণের কাছে ছিল, যা তিনি মা যশোদাকে দেখতে দিয়েছিলেন।
তখন এটা আর অলৌকিক থাকে না, যা থাকে তা হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
অন্যদিকে মহাভারতের সমগোত্রীয় আরোও একটি ঘটনার বর্ণনা আছে। কুরুক্ষেত্রের
যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ঋষি ব্যাসদেব অন্ধরাজা ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা
শোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ব্যাসদেব ধৃতরাষ্ট্রের রথের সারথী সঞ্জয়কে
দিব্য দৃষ্টি দান করলেন। তার মানে ঘরে বসে সারথী সঞ্জয় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ
প্রত্যক্ষ করবেন এবং তদানুযায়ী তিনি ধারাভাষ্য বর্ণনা করে রাজাকে শোনাবেন।
এ ঘটনাকে অলৌকিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান কি বলে। Skype, 3G,
কিংবা নেহাৎ হরতালের সময় রাস্তার মারামারি আমরা ঘরে বসে দেখছি। মাঠের
খেলার দৃশ্য ও ধারা বিবরণী আমরা ঘরে টিভির বদৌলতে ঘরে বসে উপভোগ করছি। অতি
সম্প্রতি বিশ্বজিত নামের ছেলেটির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটনা শুধুদেশবাসী নয়,
বিশ্ববাসী সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আজকের টেলিভিশনে দেখা এধরনের ঘটনা গুলির সাথে সাথে ধৃতরাষ্ট্রের সারথী
সঞ্জয় কর্তৃক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের দৃশ্য দেখার ক্ষমতা মেলালে কি সারথী
সঞ্জয় কর্তৃক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের দৃশ্য দেখা ঘটনাবলী অলৌকিক বলে মনে হয়
না। যা মনে হয় তা হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। অর্থাৎ আমরা বিশ্বের অধিক
সংখ্যক মানুষ যেমন টেলিভিশন প্রযুক্তির মাধ্যমে এ সুবিধা ভোগ করছি, তখন
ব্যাসদেব শুধুমাত্র রাজাকে দেখতে দিয়েছিলেন। রাজা যেহেতু অন্ধ সেজন্যে
সারথী সঞ্জয় সে প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে রাজাকে যুদ্ধের ধারা বিবরনী
শুনিয়েছিলেন। যদি অলৌকিকই হতো তাহলে সঞ্জয় না, স্বয়ং রাজা দেখতে পেতেন।
সুতরাং ত্রেতা যুগে পুস্পকরথে করে শ্রীরামের অযোধ্যায় নিদিষ্ট সময়ের
মধ্যে পৌঁছা, শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক মা যশোদাকে মাটি খাওয়া ছলে শিশুকৃষ্ণের মুখ
গহ্বরে বিশ্বরূপ (ডকুমেন্টরী) দেখানো, ধৃতরাষ্ট্রকে সারথী সঞ্জয় কর্তৃক
দিব্য দৃষ্টিতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করে ধারা বিবরনী শোনানো
এগুলো আপাতঃ দৃষ্টিতে অলৌকিক মনে হলেও এগুলো সবই আজকের দিনে আমাদের কর্তৃক
ভোগ করা বিজ্ঞানের সুবিধা গুলিই ছিলো, যা সেই সময়ের আধুনিক বিজ্ঞান বলুন
আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, যাই বলুন না কেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও বিভিন্ন সংবাদ
মাধ্যমের ভিত্তিতে জানা যায় প্রতি বছর ইউরোপের প্রচুর লোক ভারতে আসেন
সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে গর্ভ ভাড়া পাবার আসায়। যে পরিমান লোক এ উদ্দেশ্যে
ভারতে আসেন, এরমধ্যে শুধু পশ্চিম বঙ্গে অবস্থান করে কয়েক শত কিংবা হাজার
খানেক। গাড়ী ভাড়া, বাড়ী ভাড়া, বাসা ভাড়া হয়, এমনকি যে কোন ধরনের কায়িক কাজ
করার জন্য লোকবল ভাড়া করা যায়। কিন্তু
গর্ভ ভাড়া! শব্দটা শুনতেই আশ্চর্য হতে হয়। অথচ অবিশ্বাস্য হলেও মানুষ এখন
বিশ্বাস করে গর্ভ মানে মাতৃগর্ভও ভাড়ায় চলে। বিষয়টা একটু খুলে বলা যাক। যে
সকল নারী পুরুষ উভয়ের সন্তান ধারন করার জন্য স্ব স্ব ক্ষমতা আছে, যেমন
স্ত্রীলোকটির প্রতিমাসে যথা নিয়মে ঋতুমতি হন, অন্য দিকে পুরুষ লোকটির
বীর্যে যথাযথ পরিমানে জীবিত শুক্রানুর উপস্থিতি থাকে। অথচ উভয়ে মিলিত হবার
পর কোন এক অজানা কারণে স্ত্রীলোকটির গর্ভে ডিম্বকোষ ও পুরুষের শুক্রানুর
মিলনের মাধ্যমে এব্যুউলেশনটা যথামাফিক হয় না, ফলে স্ত্রী লোকটির গর্ভে
সন্তান আসে না। এমন অবস্থায় স্ত্রী-পুরুষ সন্তান লাভের জন্য অন্যকোন স্ত্রী
লোকের সাহায্য নিতে হয়। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মা হতে আগ্রহী
স্ত্রীলোকটির ডিম্বকোষ এবং তার স্বামীর শুক্রানু বিশেষ কায়দায় গ্রহণ করে এ
দুটিকে অপর কোন মহিলার গর্ভে স্থাপন করে এব্যুউলেশন ঘটনার মাধ্যমে
সন্তানের জন্ম দেন। এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী এ দুজনের বাইরে অপর মহিলার কোন
ভূমিকা থাকে না, শুধুমাত্র তার নিজ গর্ভে অপর দুটি নারী পূরুষের সন্তান ৩৯
সপ্তাহ যাবৎ ধারণ করা ব্যতীত। সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর প্রকৃত বাবা মা
তাদের সন্তান নিয়ে যান। সন্তান ধারণ করা মহিলাটি বিনিময়ে বড় অংকের অর্থ পায়।
খরবে জানা যায়, বিশেষতঃ দরিদ্র ও পেছনে পড়া মহিলারা শুধু অর্থের বিনিময়ে এ
ধরনের কাজে আগ্রহী হন।
বিগত প্রায় এক দশক ধরে চলা উপরের
বর্ণনাটা শুধু জানানো জন্য অবতারনা করছি না। এর কারণ হিসাবে বলছি এ রকম
ঘটনার বিবরণ হিন্দু ধর্মের অলৌকিকত্বে বিদ্যমান । আমরা আজ যারা
হিন্দু ধর্মাবলম্বী নামে পরিচিত, তারা সবাই জানি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর মা
দেবকী অষ্টম গর্ভজাত সন্তান। দেবকী ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের বাবা বসুদেবের আরো
এক স্ত্রী ছিলেন নাম রোহিনী, যিনি কংসের হাত থেকে বাঁচার জন্য আগেই পালিয়ে
বৃন্দাবনের নন্দরাজ ও যশোদার আশ্রয়ে আশ্রিত ছিলেন। বলা বাহুল্য বৃন্দাবনের
নন্দরাজ ও যশোদা বসুদেবের আত্মীয় ছিলেন। এদিকে কারাগারে বসুদেবের স্ত্রী
দেবকীর একে একে ৬টি সন্তান জন্ম নেবার পর পরই কংস হত্যা করার পর দেবকী ৭ম
বারের মত গর্ভবতী হন। কিন্তু গর্ভবতী হবার মাত্র কিছু দিনের মধ্যে দেখা গেল
দেবকীর গর্ভ স্বাভাবিক মনে হতে লাগল। কংস দাইয়ের মাধ্যমে বিষয়টি পরীক্ষা
করে নিশ্চিত হল, দেবকীর ৭ম গর্ভে কিছু নেই এবং কংস ও এরসাথে সবাই ধরে নিল
দেবকীর ৭ম গর্ভ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে একই সময়ে বৃন্দাবনে নন্দরাজের ঘরে
আশ্রিতা রোহিনীর গর্ভে সন্তানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। রোহিনী এর কাছে
বিষয়টি অস্বাভাবিক ছিলো এজন্যে যে, সে তার স্বামী বসুদেবের সান্নিধ্য থেকে
অনেক দিন ধরে বঞ্চিত। কেননা বসুদেব কংসের কারাগারে বন্দি। সুতরাং তার
গর্ভে সন্তান আসার কোন কারণই নেই। এমতাবস্থায় হত বিহ্বল হয়ে রোহিনী এ
অস্বাভাবিক ঘটনাটি নন্দরাজ ও তাঁর স্ত্রী যশোদাকে জানালে তিনজনই তাদের কুল
গুরুর শরণাপন্ন হন (সম্ভবতঃ ঋষি ভাগর্ব, তবে এ মুহুর্তে সঠিক নাম মনে
নেই)। কুলগুরু তিনজনকেই জানালেন এটি রোহিনীর সন্তান নয়, এটি কংসের কারাগারে
আটক বসুদেবের ঔরসে একই কারাগারে আটক তার স্ত্রী দেবী দেবকীর ৭ম গর্ভ জাত
সন্তান। শুধুমাত্র কংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ঐশ্বরিক ভাবে রোহিনীর
গর্ভে অবস্থান করছে এবং বেড়ে উঠছে। সুতরাং বুঝতেই তো পারছেন, বসুদেব আর
দেবকী ৭ম গর্ভ জাত সন্তান যেভাবে রোহিনীর গর্ভে বড় হয়ে ৩৯ সপ্তাহ পর
ভূমিষ্ট হয়েছেন, ঠিক তেমনি আজকের দিনে প্রসূতি ও ধাতৃবিদ্যা বিজ্ঞানে ভারতে
গর্ভ ভাড়া করে সন্তান ভূমিষ্ট করানো হয়। সুতরাং দেবকী ও বসুদেবের ৭ সন্তান
জন্ম নেবার ঘটনা যদিও অলৌকিক হয়, তবে একই কায়দায় আজকের দিনের বাচ্চা গুলিকে
অলৌকিক না বলে বিজ্ঞানের উন্নতির ফসল বলা হচ্ছে। তার মানে কি এই হচ্ছে না,
এ সংক্রান্ত যে বিজ্ঞান একবিংশ শতাব্দিতে আমরা ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছি,
সেটি আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে আমাদের পূর্ব পূরুষরা ব্যবহার করেছেন,
যেটি আমাদের পুরান মহাভারতে উল্লেখ আছে।
বিগত প্রায় দেড় দশক আগে থেকে বিশ্বে একটি শব্দ বহুল প্রচলিত হয়ে আসছে,
সেটি হল ক্লোনিং (cloning)। ক্লোনিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা প্রথম ডলি নামে একটি ভেড়া জন্ম
দিয়েছিল। ক্লোনিং হল এমন একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি শুক্রানুকে
বহু খন্ডে বিভক্ত করে একই ধরনের বহু জন্ম দেয়া সম্ভব। একটু শুক্রানু
খন্ডিত করে এর অংশ রেখে দিয়ে পঞ্চাশ বছর পর সমপরিমান বর্ষের আগে জন্ম
জন্তুটির মত আরো অনেক গুলি প্রাণী তৈরী করা সম্ভব। এভাবে নাকি মানুষ তৈরী
করাও সম্ভব।
একই ধরনের ঘটনার বিবরণ মহাভারতেও বর্ণিত আছে। যারা
হিন্দু তারা কম বেশী জানেন, যুবরাজ যুধিষ্ঠির ও যুবরাজ দূর্যোধন হলেন
জেঠাতু খুড়াতো ভাই। ঐ সময়ের রীতি অনুযায়ী বংশের যে বড় হবেন সেই হবে পরবর্তী
রাজা। পান্ডু ও অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র দুজনে ভাই। পান্ডুর স্ত্রী কুন্তী যখন
অন্ত্বঃসত্তা, ঠিক একই সময়ে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী গান্ধারীও ঠিক একই সময়ে
অন্ত্বঃসত্তা। ধৃতরাষ্ট্র মনে প্রাণে চেয়েছিলেন তার সন্তান আগে ভূমিষ্ট হয়ে
জ্যেষ্টত্ব অর্জন করুক, যাতে পরবর্তীতে রাজা হতে কোন অসুবিধে না হয়। কিন্তু
বিধিবাম, পান্ডুর স্ত্রী কুন্তী প্রথম সন্তান যুধিষ্ঠির জন্ম নিয়েছে - এমন
বার্তা ধৃতরাষ্ট্রের কাছে পৌঁছা মাত্র ধৃতরাষ্ট্র রেগে তার স্ত্রী
গান্ধারীর পেটে লাথি মারলেন। সঙ্গে সঙ্গে গান্ধারী পেট থেকে অকালে মাংস
পিন্ডরূপ সন্তান ভূমিষ্ট হল। আজকাল হাসপাতাল গুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়
মাতৃগর্ভে ২৮ সপ্তাহের অবস্থান করার পর যে সন্তান ভূমিষ্ট হয়, তা পরিপুষ্ঠ
না হলেও ইনকিউভেটরের (incubator) মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। সুতরাং রাজা ধৃতরাষ্ট্র
তার অকালে ভূমিষ্ট হওয়া অপরিপুষ্ঠ সদ্য জন্ম নেয়া মাংস পিন্ডরূপ সন্তান
দুর্যোধনকের বাঁচিয়ে রাখার সব রকম ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিলেন। সদ্য জন্ম
নেয়া সন্তান এতই বাঁচিয়ে রাখা যায় কিনা এ নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তখন মাংস
পিন্ডরূপ দুর্যোধনের শরীর হতে একটু একটু করে বিভিন্ন ভাবে সংরন করতে করতে
শত ভাগে সংরক্ষণ করা হয় এবং এভাবে এক দুর্যোধনের মাংস পিন্ড থেকে
ধৃতরাষ্ট্রের শত পুত্রের জন্ম হয়। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে আপনারা কি
ভাবছেন, এ যুগের বিজ্ঞানীরা ক্লোনিং এর ধারণাটা কি মহাভারত থেকে ধার করে
নিয়েছেন? নাকি মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব আজকের যুগের বিজ্ঞানীদের থেকে
নিয়েছেন?
এবারে একটু যুদ্ধ বিগ্রহের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের দিকে আসা যাক । অতি
সংক্ষেপে এর শিরোনাম দেয়া যায় বৈদিক অস্ত্রশস্ত্র বনাম আধুনিক সমর সরঞ্জাম
(modern weaponology)। এ পর্বে বৈদিক অস্ত্রশস্ত্রের সাথে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের
সর্ম্পক বা মিল গুলি অতি সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
বৈদিক অস্ত্রশস্ত্র বনাম আধুনিক সমর সরঞ্জাম (মর্ডান উইপনোলজী)
আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে উন্নত বিশ্ব জুড়ে (ইউরোপ ও আমেরিকার কথা বলছি)
গবেষণাগারে যে বিষয়ে বেশী গবেষণা হয়, তা হল টিস্যু কালচার গবেষণা। এর কারণ
হল বিশ্বে মানুষ যে হারে বাড়ছে সে হারে খাদ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ না হয়ে
কিভাবে অধিক খাদ্য ফলানো যায় এবং ভবিষ্যতে কি করে আরো অধিক খাদ্য ফলানো
যাবে এ নিয়ে নিত্য নতুন গবেষণার শেষ নেই। কারণ মানুষের food chain তথা খাদ্য
সরবরাহের ধারাবাহিকতা যদি বন্ধ হয়, তাহলে মুহুর্তে সমগ্র বিশ্বে হানাহানি,
মারামারি কাটা কাটি বেড়ে যাবে। বিশ্ব সভ্যতা খুব দ্রুতই পেছনের দিকে মোড়
নেবে বলে এতদ বিষয়ে গবেষকদের ধারণা। সুতরাং বিজ্ঞান সর্বাগ্রে ভাববে খাদ্য
নিয়ে।
উন্নত বিশ্ব জুড়ে (বলতে ইউরোপ, আমেরিকার ও চীন সহ ধনী দেশ
গুলির কথা বলছি) খাদ্য উৎপাদন নিয়ে চিন্তা বা গবেষণার পাশাপাশি নিজেদের
শক্তি সামর্থ প্রদর্শন ও নিজ দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা হয়। এটি
সম্ভবতঃ উন্নত বিশ্বগুলিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। এজন্য সর্বাধুনিক
প্রযুক্তির মাধ্যমে কি করে মারনাস্ত্র তৈরী করা যাবে এ নিয়ে কোন কোন দেশ
খাদ্য উৎপাদন গবেষণার চাইতে বেশী গুরুত্ব দেয়। কেননা তারা জানে অত্যাধুনিক ও
বেশী পরিমানে মারনাস্ত্র উৎপাদন বিশ্বে ঐ দেশকে শক্তিশালী মর্যাদার আসন
যেমন দেবে ঠিক তেমনি ঐ অস্ত্র বিপননের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা তথা
প্রয়োজনীয় খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানী করা যাবে। সুতরাং মারনাস্ত্র গবেষণা,
উৎপাদন ও বিপননে আমেরিকা, চীন, ইসরাইল ও ইউরোপের কিছু দেশের নাম সর্বাগ্রে
নেয়া যেতে পারে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল থেকে বলা যায় আমেরিকা
এক্ষেত্রে খুব বেশী এগিয়ে আছে। এর প্রমাণ হিসাবে বলা যায়, এরাই প্রথম আণবিক
বোমা সফল প্রয়োগ করে জাপানের দুটি শহরকে ধ্বংস করার পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে
তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তাড়াতাড়ি পরিসমাপ্ত হয়।
আমেরিকা নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদনের এখনো অবধি পারমঙ্গম এবং এর সফল
প্রয়োগ করতে পারে সেটা বিশ্ববাসীকে ১৯৯০ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ, পরবর্তীতে
আমেরিকার উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকে প্রয়োগ, অতিসম্প্রতি আফগানিস্থানে ওসামা বিন
লাদেন দমন নামে বিচিত্র সব অস্ত্রশস্ত্রের সফল প্রয়োগ করে অস্ত্রগুলির
দত্ত্বার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেছে।
১৯৯০ সাল হতে এ যাবৎ অবধি বিশ্ববাসী
নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র দেখেছে এগুলোর মধ্যে cruise ক্ষেপনাস্ত্র, cluster
বোমা, laser-guided missile, চালক বিহীন বিমানে করে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ drone ইত্যাদি উল্লেখ করার মত। cruise ক্ষেপনাস্ত্রের
মাধ্যমে অনেকটা ঘরে বসে শত্রুর বাড়ির ঠিক নিশানায় নির্ভুল ঠিকানা লাগানোর
মত অব্যর্থ একটি যন্ত্র। অন্যদিকে cluster বোমা হলো যুদ্ধ বিমানের সাহায্যে
শত্রুর বাড়ির উপরে ছেড়ে দেয়া একটি বোমা, যা মাটিতে পড়ার পূর্বে এক থেকে
বহুতে পরিনত হয়ে শত্রুর বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে জান ও মালের ক্ষতি করতে সক্ষম অস্ত্র। laser-guided missile হলো এমন একটি অস্ত্র যা লক্ষ্য বস্তুকে
আকাশে স্যাটেলাইট দ্বারা নজরে রাখা হয় এবং মিসাইলটি আকাশে ওড়ার পর কোন
কারণে লক্ষ্য বস্তু নির্ধারিত স্থান হতে অন্যত্র নড়ে চড়ে গেলেও সমস্যা নেই,
মিসাইলটি আকাশে বাক নিয়ে সময়মত লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আধুনিক
সমরাস্ত্র গুলি এ ধরনের বর্ণনা দেয়া আমরা জন্য বাতুলতা মাত্র। আমার বিশ্বাস
ছোট থেকে বড় শত সহস্র রকমের মারনাস্ত্র প্রতিদিনই ভয়ংকর হয়ে উঠছে এ
সংক্রান্ত গবেষকদের গবেষণা কার্যের ফলে।
আমি উপরের যে কয়টি ভয়ংকর
অস্ত্রের বর্ণনা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম, এগুলোর সাথে বৈদিক যুগের অস্ত্রের
মিল গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব। প্রথমে বৈদিক যুগের যুদ্ধের বর্ণনায় যে সকল
অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি সমরাস্ত্রের নাম বলব।
যেমন - বরুন বান, পশুপতি বান, ব্রম্মাস্ত্র, নাগপাশ, পাতাল বেদী, শব্দ বেদী, ইত্যাদি।
১. বিমান: আমরা জানি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অতি অল্প
পরিমানে আকাশ পথে যুদ্ধ হয়েছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের আগে স্থল ও জল পথে
শত্রুপক্ষের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল। কালক্রমে নতুন নতুন সমরাস্ত্রের
উদ্ভাবনের পাশাপাশি স্থলপথ জল পথ ও আকাশ বিমান ব্যবহারের মাধ্যমে যুদ্ধ
কৌশল শুরু হয়। রামায়নে আমরা রাম চন্দ্রের অনুজ লক্ষণের সাথে রাবণ পুত্র
মেঘনাদের যুদ্ধের বর্ণনাতে দেখতে পাই, মেঘনাদ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যুদ্ধ
করত। এখন প্রশ্ন হল আকাশে ভেসে থাকতে না পারলে কি করে যুদ্ধ করা যাবে?
সুতরাং আকাশে ভেসে থাকার যানটি হল বিমান। এ বিমান শব্দটি সনাতন
ধর্মাবলম্বীদের পুরান রামায়ন ও মহাভারতে আছে। তাহলে রামায়নের রাবণ পুত্র
মেঘনাদের মেঘের আড়াল হতে যুদ্ধ করার মানে মেঘনাদ আজদের দিনের মত
হেলিক্প্টার কিংবা জঙ্গী বিমানের মত কোন যান ব্যবহার করেছেন।
আজকাল বিশ্বের সামরিক ক্ষমতাশালী প্রতিটি দেশের নিজস্ব যুদ্ধ বিমান বাহিনী
আছে। আছে প্রতিটি দেশের নিজস্ব প্রযুক্তিগত উৎপাদন ব্যবস্থা। যে সকল দেশের
যুদ্ধ বিমান উৎপাদনের ক্ষমতা নেই, এ সকল দেশ অন্ততঃ তাদের আর্থিক ক্রয়সীমার মধ্যে যুদ্ধ বিমান বহর কিনে ব্যবহার করেছে। আবার যে সকল দেশের আর্থিক ও
বিমান উড়ানোর মত যথেষ্ঠ অবকাঠামো নেই সে সকল দেশকে স্থল পথের সামরিক বাহিনীর
উপর নির্ভর করতে হয় এবং এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। বিমান বাহিনীর
আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যুদ্ধ বিমান নেই এমন দেশ স্থল ভাগ থেকে আকাশ পথে
আক্রমণ করা যুদ্ধ বিমান গুলিকে গোলার মাধ্যমে ভূপাতিত করে নিজ অবস্থান
রক্ষা করবে এটাও তেমনই একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
রামায়নের রাম ও
লক্ষণ সীতাকে উদ্ধার করার জন্য লংকায় অত্যন্ত দীনহীন ভাবে অথচ নীতিগত
অধিক মানসিক শক্তি নিয়ে লংকা আক্রমণ করেছেন। একদিকে লংকার রাজা, সৈন্য
সামন্ত, অস্ত্রশস্ত্রের অভাব নেই। সুতরাং লংকার রাজার রাজপুত্র মেঘনাদ
যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে ব্যয় বহুল ও আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করবে
- এটাও স্বাভাবিক ঘটনা। সুতরাং এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আজকের বিমান দিয়ে
আক্রমণ বিংশ শতাব্দির প্রযুক্তি নয়, এ প্রযুক্তি ত্রেতা যুগে রাবণ রাজপুত্র
মেঘনাদ তথা ইন্দ্রজিৎ ব্যবহার করেছিল লক্ষণের সাথে যুদ্ধ করার সময়, আর লক্ষণ
এখনকার স্থল বাহিনীর মতো ভূমিতে থেকে ইন্দ্রজিতকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা
করেছিল। এছাড়াও আমরা জানি আজকের যুগে বিমান যে গোলা ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়
এটিকে শেল (shell) বলা হয়। রামায়নের লক্ষণ ও ইন্দ্রজিতের যুদ্ধের ফলাফল হিসাবে
বর্ণিত আছে লক্ষণ শেল বিদ্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। সুতরাং আজকের এ শেল
শব্দটিও সেই রামায়ন থেকে নেয়া।
২. Cluster Bomb: আমেরিকায় আফগানিস্তান যুদ্ধে ক্লাষ্টার বোমার ব্যবহার করেছে। আগেই বলা হয়েছে এ ক্লাস্টার বোমা জঙ্গী বিমানের
মাধ্যমে শত্রুর অবস্থানে নিচের দিকে একটা ছুড়ে মারলে মাটিতে পড়ার
পূর্বেই এক থেকে বহুতে পরিণত হয়ে বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে জন-মানুষ ও সম্পদের
ক্ষতি করে। রামায়ন ও মহাভারতের বর্ণিত যুদ্ধ গুলিতে যে সব বৈদিক অস্ত্র
ব্যবহার করা হয়েছে, দেখা গেছে শ্রীরাম, লক্ষণ, অর্জুন ও অন্যান্য
পান্ডবগন একটি মাত্র তীর (ক্ষেপনযোগ্য অস্ত্র) নিক্ষেপ করেছে, আর ঐ অস্ত্র
মাটিতে পড়ার পর বহু হয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের ব্যাপক এলাক জুড়ে অনেক
যোদ্ধা হতাহত হয়েছেন। যারা মহাভারত ও রামায়ন পড়েছেন, সেই বৈদিক যুগের ঐ
অস্ত্রটির সাথে ক্লাষ্টার বোমার মিল পান কিনা?
৩. পাতাল বেদী: আমরা জানি
আফগানিস্তানন যুদ্ধে বিন লাদেনকে মারার জন্য আমেরিকা আকাশ থেকে এমন সব
শেল/ক্ষেপনাস্ত্র ফেলেছে যে গুলি ২০/২৫ ফিট মাটির গভীর গিয়ে ফেটেছে।
বৈদিক যুগে পাতাল বেদী বানের নাম, ব্যবহার ও এটির ক্ষমতার সাথে এরা মিল আছে
কিনা একটু ভাবুন তো। পাতাল বেদী বান, মাটি ফুটে পাতালে গিয়ে শত্রু নিধন
করত। বৈদিক পুরান গুলোতে আমরা দেখি কোনো দেবতা যোদ্ধার ভয়ে কোনো কোনো দানব
পাতাল নগরী গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। পুরান গুলিতে পাতাল নগরীর নাম শুনে অনেককে
অদ্ভূত বলে নাক শিটকিয়ে উঠতে দেখেছি। হালের লিবিয়ার নগরী সমতূল্য মাটির
নিচের গাদ্দাফির প্রাসাদতূল্য বাঙ্কার, কিংবা তোরাবোরা পাহাড়ের গুহায়
লাদেনের আস্তানার সাথে পুরান গুলির পাতাল নগরীর মিল আছে কি না একটু ভাবুন
তো। আর তোরাবোর পাহাড়ের বাঙ্কার ধ্বংস করার জন্য যে ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করা
হয়েছে, সেটির সাথে বৈদিক পাতাল বেদী বানের মিল আছে কি না খেয়াল করুন তো!
৪. শব্দভেরী: মহাভারত ও রামায়নে শব্দভেরী বানের কথা উল্লেখ আছে। বিপক্ষ শক্তির
উপস্থিতির শব্দ লক্ষ করে এটি চালাতে হতো এবং যেখানে শব্দের উপস্থিতি সে
স্থলে গিয়ে এ বৈদিক অস্ত্রটি কাজ করত। বিংশ শতকের শেষ দিকের তৈরী আমরা কিছু
কিছু ক্ষেপনাস্ত্র সম্পর্কে জানি, যেগুলি আকাশ থেকে আকাশে, আবার ভূমি থেকে
আকাশে ছোড়া হয়। বিশেষতঃ জঙ্গী বিমান ধ্বংসের জন্য এ ক্ষেপনাস্ত্র গুলি
প্রয়োগ করা হয়। Geography চ্যানেলের কল্যাণে এ সমরাস্ত্র বিষয়ে জানার
সুযোগ হয়েছে, এটি যে টার্গেকটিকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়, সে টার্গেটটি যদি
পেছনে তেড়ে আসা ক্ষেপনাস্ত্র থেকে বাঁচতে আকাশে দ্রুত চলার গতিতে উপর নিচ
কিংবা ডান বামদিকে বাঁক নেয়, তবে পেছনে তাড়িয়ে বেড়া ক্ষেপনাস্ত্রটিও উপর-নিচ,
ডান বাম মোড় নিয়ে বিমানটিকে ধ্বংস করে। এর মূল রহস্য হলো ক্ষেপনাস্ত্রটি
বিমানটি টার্গেট করে না, যেটি লক্ষ্য করে ক্ষেপনাস্ত্র আমনের দিকে অগ্রসর
হয়, সেটি হলো ধাবমান বিমানের তাপ ও শব্দ। সুতরাং একটু ভাবুন তো,
রামায়ন-মহাভাতের শব্দভেরী বানের সাথে যুদ্ধ বিমান ধবংসের জন্য ব্যবহৃত এ
ধরনের ক্ষেপনাস্ত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায় কি না।
৫. বরুন বান: বরুন বান নামে
মহাভারত ও রামায়নের একটি সমরাস্ত্রের বর্ণনা আছে। বিশেষতঃ প্রতিপক্ষ যখন
অগ্নিবান নিক্ষেপ করত, তখন অগ্নিবান থেকে রক্ষা পাবার জন্য এ বানটির প্রয়োগ
করা হত। অগ্নিবান মানে হলো আগুলে গোলা নিক্ষেপ করার ফলে সব কিছুতে আগুন
ধরে যেত। আমরা জানি বরুন শব্দের অর্থ হলো জল, যা আগুন নির্বাপনে সাহায্য
করে। আমাদের ঢাকায় হরতাল পিকেটিং করার সময় পিকেটাররা গাড়ী বা স্থাপনায় আগুন
লাগিয়ে দেয় কিনা? আর সে আগুন নির্বাপনের জন্য জল নিক্ষেপনের জন্য জলকামান
ব্যবহার করা হয় কি না? এছাড়া পুলিশ একসাথে জড়ো হওয়া মানুষগুলো উন্মাদনার
আগুন নেভানোর জন্য জড়ো হওয়া মানুষগুলোকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য জলকামান
ব্যবহার করে কি না? সুতরাং আজকের জলকামান প্রযুক্তিটির সাথে বৈদিক যুগের
বরুন বানের মিল আছে কি না পাঠকই বিচার করুন।
৬. ব্রহ্মাস্ত্র: বৈদিক যুগে
ব্রম্মাস্ত্রের নাম শোনা যায়। এটি সকল অস্ত্রের সেরা ও সর্বশেষ অস্ত্র নামে
পরিচিত। বৈদিক যুগের এ অস্ত্রটির মালিকানা যে কেহ ইচ্ছা করলেই হতো পারতো
না। যারা ব্রম্মাস্ত্র লাভ করেছেন, এদের প্রত্যেকের জ্ঞান, গরিমা, চিন্তা
চেতনায় উন্নতির চরম শেখরে উপনিত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কেননা, এ অস্ত্রটি ছিল
অব্যর্থ এবং তীব্র ভয়াবহতাসহ সবকিছুকে ছাড়িয়ে যেত। এজন্য এ অস্ত্রের অধিকারী এ
সকল ব্যক্তিই হতো যারা বিচক্ষণ। শুরুমাত্র অনন্যপায় হয়ে সৎ কাজে এটি ব্যবহার
করা হতো। এ ছিল বৈদিক যুগের সর্ব সেরা যুদ্ধাস্ত্র । কিন্তু বর্তমানে যত
প্রকারের যুদ্ধাস্ত্র আছে এর মধ্যে সেরা নিউক্লীয়ার বোমা। দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের দুটি শহরে দুটি বোমা ব্যবহার করে এর ভয়াবহতা
সম্পর্কে ধারণা বিশ্ববাসী প্রথমবারের মত পেয়েছে। এ মারনাস্ত্র পৃথিবীর সকল
দেশের কাছে থাকা উচিত নয়, এ লক্ষ্যে বিশ্ব যুদ্ধের পরবর্তী সময় এ
প্রযুক্তিতে তখনকার সময়ের ক্ষমতাধর দেশের জোট গুলি এখন অবধি নিউক্লীয়ার শক্তি অপব্যবহার রোধে কাজ করে আসছে।
এবার মিলিয়ে দেখার অনুরোধ
রইল, বৈদিক যুগের ব্রম্মাস্ত্রের সাথে আজকের দিনের নিউক্লীয়ার বোমা বা
প্রযুক্তির মর্যাদা, ব্যবহারের কৌশল, সংরক্ষণকারী দেশ গুলির মর্যাদার সাথে
মিল আছে কি না।
উপসংহার:
এভাবে চিন্তা করতে গেলে সনাতন
ধর্মের পুরান গুলিতে পদ্যকাব্য ধারায় বর্ণিত সব কিছুতেই আধুনিক বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে। আমার বক্তব্য অনেকের কাছে হাস্যপদ
হবে, তবুও বলছি আমরা অনেকেই জানি না, আমরা যাদেরকে উন্নত বিশ্ব বলছি, এরা
কেহই সনাতন ধর্মানুসারী নয়, তবে তারা তাদের গবেষনা কাজে হিন্দু পুরান ও
হিন্দু শাস্ত্রাধি থেকে ধারণা ও সমরাস্ত্র ও যন্ত্রের বর্ননা ধারন করে
আধুনিক সমরাস্ত্রগুলির রূপ দিয়েছে এবং এখনো অবধি সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিশ্বে আমেরিকার নাসা (NASA) এটি অতিপরিচিত মহাকাশ নিয়ে গবেষনার অন্যতম স্থান।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নাসার প্রযুক্তিবিদগণও সনাতন শাস্ত্রাধি থেকে
মহাকাশ যান তৈরী সুত্র খোঁজেন। এর প্রমাণ হিসাবে বলতে পারি, বিশ্বের এ
প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দ্রুত চলাচলের বিমান একটি নির্ভর জন্য যান হিসাবে
বিবেচিত। অথচ বিমান শব্দটি ৫০০০/৭০০০ বছর আগে প্রণীত হিন্দু পুরান গুলিতে
উল্লেখ আছে। তাহলে ভাবুন তো যারা এ যানটি আবিস্কার করেছেন, ঐ সকল মহিষীগন
সনাতন পুরান গুলি ধারন না করলে আকাশ পথে চলাচলের এ যানটি বিমান হলো কেন?
ধর্মের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে মিথ (myth) বা অলৌকিকত্ব গুরুত্বপূর্ণ
একটি অংশ বলে বিবেচিত। আধ্যাত্বিক শক্তি সম্পন্ন মানুষ গুলি অলৌককত্ব প্রকাশ
করে ভক্তকুলের মাঝে প্রশংসিত হয়ে বহু দিন ভক্তের মনে বেঁচে থাকে। আমাদের
প্রতিবেশী ইসলাম ধর্মেরও অলৌকিকত্ব বিষয়ে আছে নবীজি বোরাক নাম যানে চড়ে
মেরাজে গেছেন। খ্রিষ্টধর্মের লাষ্ট সাপার নিয়ে তো খ্রিষ্টদের মাঝে মোটামুটি
হুলস্থল ব্যাপার। এভাবে খোঁজ করলে দেখা যায়, সনাতন ব্যতীত পৃথিবীতে
ক্রমান্বয়ে প্রবর্তিত ও প্রচলিত অন্যান ধর্ম গুলিতেও একই রকম অলৌকিকত্বের
তত্ত্ব বিদ্যমান। সনাতন ধর্ম ছাড়াও আমাদের আশপাশে প্রতিবেশীদের ধর্মে কিছু
কিছু ওলামামাসায়েক, হিন্দু ধর্মের গুরুর তাদের চেলাদেরকে অলৌকিকত্ব মতা
প্রদর্শন করে ভক্তদের বিমোহিত করেন। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার হলো এধরনের
চমৎকারিত্ব প্রদর্শনকারী মানুষটি কোন না কোন ভাবে সমস্যায় ভুগেছেন এবং
নিজেদের জীবন যখন বিপন্ন হয়েছে, তখন এরা সে বিপন্ন অবস্থা থেকে নিজেদেরকেই
মুক্ত করতে পারেননি। যে মানুষটি চমৎকারিত্ব প্রদর্শন করে অন্যের উপকার
করেছেন বলে ভক্তকুলের মাঝে এতো জোড়, সে মানুষটি নিজের সমস্যা দূর করতে
পারেননি, ইতিহাস স্যাদেয়। এটি শুধু এখনকার চিত্র নয়, এটি অতি পুরাতন।
আমাদের চারপাশে যে সকল ধর্ম গুলি বিদ্যমান এবং তাদের মূল প্রচারকদের
ব্যাপারেও একই কথা বলা চলে। মাফ করবেন, ভগবান যিশু লাষ্ট সাপারের মাধ্যমে
কয়েকখন্ড মাছ ও রুটি দিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে পেট পুরিয়ে খাইয়েছেন, ক্রন্দনরর মায়ের মৃত শিশুকে জীবনদান করেছেন, অথচ তিনি রোমান রোসানলে
ক্রশবিদ্দ হয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এখানে জীবন বাঁচানোতে তার অলৌকিকত্ব মতা
কাজ করেনি। আমাকে মাফ করবেন, আমি ছোট, খ্রিষ্টদের ভগবান যিশুকে খাটো করার জন্য
কথাটি বলিনি।
অথচ সনাতন ধর্মের ত্রেতাযুগের শ্রীরাম ভগবান হয়েও
ত্যাগ, বৈরাগ্য, কর্ম, সাহস ও কর্তব্য পরায়নতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। কোন অলৌককত্বের জন্য
নয়। দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণ, বীরত্ব, ন্যায়, কর্তব্যনিষ্ঠ কঠোরতার ও অন্যায়ের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কঠোর মনোবল ও সাহসের কারণে আমাদের ভগবান হয়েছেন।
সনাতন হলো চির আধুনিক, মানুষের বস্তুগত কিংবা অবস্তুগত এমন কোন ধারনা নেই,
যা এ ধর্মের পৌরানিক অথচ আধুনিক ব্যাখ্যা নেই। তথাপি আমাদের যুব সমাজ হতাশায়
ভোগেন শুধুমাত্র অজ্ঞানতায়। যে ধর্মের ছায়া তলে জন্ম নিয়েছেন, যে বংশে
জন্ম নিয়েছেন, শুধুমাত্র অজ্ঞানতার কারণে হতাশা থেকে ধর্ম ও নিজ বংশের
কুৎসা রচনা করেন।
(লেখক: অরুন মজুমদার)