Showing posts with label bangla. Show all posts
Showing posts with label bangla. Show all posts

Wednesday, April 15, 2015

পহেলা বৈশাখ প্রসঙ্গ

সেদিন এক ভাইয়ের শেয়ার করা লিংক থেকে পড়ে বিস্তারিত জানলাম আজকের পহেলা বৈশাখের অসংগতির বিষয়ে। মুঘল সম্রাট আকবর কর আদায় করার সুবিধার্থে হিন্দু প্রজাগণের সাথে তাল মিলিয়ে পন্ডিতের পরামর্শে ইসলামিক পঞ্জিকার সাথে মিলিয়ে হিন্দু পঞ্জিকা একত্র করেই বর্তমান বাংলা পঞ্জিকার এখনকার রূপ দেন। মজার বিষয় হলো এটি যদিও আকবর সেসময় চেয়েছিলেন হিন্দু-মুসলিম সকল বাঙালীই পালন করবে, কিন্তু পরবর্তীকালে, বিশেষকরে বর্তমান সময়ে হিন্দুদেরই প্রধান পঞ্জিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পূজা-পার্বণ থেকে শুরু করে বিয়ে-অন্নপ্রাশন, সৎকারাদি সকল কিছুতেই হিন্দু সমাজ আজকের ১৪২২ সনেও বাংলা পঞ্জিকাই ব্যবহার করে। কিন্তু বাঙালী মুসলিমরা তাদের ঈদ, শব-এ-বরাত ইত্যাদি অনুষ্ঠানাদি ঠিক আরবি পঞ্জিকা অনুসারেই করে। এ থেকে কি বোঝা যায় না আকবর নিজে যদিও চেয়েছিলেন বাঙালী হিন্দু-মুসলিমরা একত্রে বাস করুক, একই ধরণের ক্রমানুসারে, কিন্তু আজকালকার মুসলিমরা (বিশেষকরে বাংলাদেশের একসংখ্যক মুসলিমরা) তা একেবারেই চায় না। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখে ছেলে-মেয়ে, পুরুষ-নারীরা যেসব পোশাক-আশাক, খাবার-দাবার, আচার-আচরণ পালন করে তা কিছু মুসলিমের কাছে একদমই গুণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত এদের সংখ্যা বাড়ছেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর। দেখার বিষয় কতদিন এই নিয়ম-নিষ্ঠা বাংলাদেশের বাঙালীরা পালন করে?

আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, হায় রে......
গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম......

Saturday, February 21, 2015

আমি বাঙালী হয়ে গর্বিত ...



বাংলাকে ষষ্ঠতম বহুল প্রচলিত ভাষা হিসেবে দেখে বাঙালী হিসেবে গর্ববোধ করছি


[সংগৃহীত]

Saturday, November 22, 2014

বাংলা বারের নামকরণ ইতিহাস

আপনি কি জানেন?

বাংলা সাত বারের নাম ও বাংলা বার মাসের নাম হিন্দু দেবতাদের নাম অনুসারে হয়েছে?
তাহলে দেখুন:
শনিবার- শনি দেবতার নাম অনুসারে
রবিবার- রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
সোমবার- সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে
মঙ্গলবার- ধূপ বা দ্বিপের নাম অনুসারে
বুধবার-বৃহস্পতিবার-শুক্রবার- গ্রহের নাম অনুসারে

বৈশাখ- কীর্ত্তন নাম অনুসারে
জৈষ্ঠ্য- অগ্নি দেবতার নাম অনুসারে
আষাঢ়- আষাঢ়ি পূর্ণিমার নাম অনুসারে
শ্রাবণ- ব্রাক্ষ্ মা দেবের নাম হতে
ভাদ্র- শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি হতে
আশ্বিন- অশ্বিনী কুমারের নাম হতে
কার্তিক- কার্তিক দেবতার নাম অনুসারে
অগ্রহায়ন- সূর্য দেবতার আবর্তন হতে
পৌষ- পার্বন হতে আগত
মাঘ- তীর্থস্হান হতে আগত
ফাল্গুন- জলন্ত কাঠ বা যজ্ঞ হতে আগত
চৈত্র- বাসন্তী দেবীর শাড়ি হতে আগত

মূলত সূর্যকে কেন্দ্র করে এসব নামের উৎপত্তি । সম্রাট আকবর আরবের সাথে হাত মিলিয়েও এই নামগুলি পরিবর্তন করতে পারেন নাই । আর পারবেও না............. ....

(মূল লেখাঃ নয়ন)
[প্রকাশেঃ শোভন]

Thursday, August 01, 2013

বাংলা মাসের নাম যেভাবে এলো

খ্রীষ্টাব্দের মত বঙ্গাব্দেও ৩৬৫ দিনে বছর হয়। কিন্তু পৃথিবী তো সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে ৩৬৫ দিনের থেকে একটু বেশি সময় নেয়। ঐ বেশি সময়টুকু যোগ করে চার বছর বাদে একবার করে লিপ ইয়ার হয়। সেই বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ দিন হয়, তাহলে?

প্রথমদিকে বাংলা পঞ্জিকা ঐ বেশি সময়ের হিসাব রাখত না। ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা হয়। এই মতে, বৈশাখ থেকে ভাদ্র, প্রতি মাস হয় ৩১ দিনে। আশ্বিন থেকে চৈত্র, প্রতি মাস হয় ৩০ দিনে। চার বছর পরে পরে চৈত্র মাসে ৩১ দিন হয়।

৭. বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । এই নাম সমূহ গৃহীত হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাচীন গ্রন্থ "সূর্যসিদ্ধান্ত" থেকে।বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছে -
• বৈশাখ - বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• জ্যৈষ্ঠ - জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আষাঢ় - উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• শ্রাবণ - শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আশ্বিন - অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• কার্তিক - কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) - মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• পৌষ - পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• মাঘ - মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ফাল্গুন - উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• চৈত্র - চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে

৮. বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
• সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে কারো মতে চাঁদের নাম অনুসারে
• মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
• বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে
• বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
• শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে
• শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
• রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে

বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।
৫৫০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বরাহমিহির পঞ্চসিদ্ধান্তিকা নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। গ্রন্থটি পাঁচটি খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সংক্ষিপ্তসার বলে অভিহিত করা হয়। পঞ্চসিদ্ধান্তিকার পাঁচটি খণ্ডের নাম– এই সিদ্ধান্তগুলো হলো– সূর্যসিদ্ধান্ত, বশিষ্ঠসিদ্ধান্ত, পৌলিশ সিদ্ধান্ত, রোমক সিদ্ধান্ত ও ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত। প্রাচীন ভারতে দিন, মাস, বৎসর গণনার ক্ষেত্রে 'সূর্যসিদ্ধান্ত' একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বরাহমিহিরের পরে ব্রহ্মগুপ্ত নামক অপর একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী (জন্ম ৫৯৮) একটি সিদ্ধান্ত রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থটির নাম ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত। এই গ্রন্থটি খলিফা আল-মনসুরের আদেশে সিন্দহিন্দ নামে আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে সৌর-মাস নির্ধারিত হয়, সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে। সূর্যের ভিন্ন অবস্থান নির্ণয় করা হয় আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের বিচারে। প্রাচীন কালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যের বার্ষিক অবস্থান অনুসারে আকাশকে ১২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। এর একটি ভাগকে তাঁরা নাম দিয়েছিলেন রাশি। আর ১২টি রাশির সমন্বয়ে যে পূর্ণ আবর্তন চক্র সম্পন্ন হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে রাশিচক্র। এই রাশিগুলোর নাম হলো– মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। সূর্যের বার্ষিক অবস্থানের বিচারে, সূর্য কোনো না কোন রাশির ভিতরে অবস্থান করে। এই বিচারে সূর্য পরিক্রমা অনুসারে, সূর্য যখন একটি রাশি থেকে অন্য রাশিতে যায়, তখন তাকে সংক্রান্তি বলা হয়। এই বিচারে এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি পাওয়া যায়। একেকটি সংক্রান্তিকে একেকটি মাসের শেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।[৪] যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সূর্য্য ০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে প্রবেশ করে তার পরদিনই ১ বৈশাখ (পয়লা বৈশাখ) হয়। যেদিন রাত্রি ১২টার মধ্যে সংক্রান্তি হয় তার পরদিনই মাসের প্রথম দিন।[৫] মূলত একটি সংক্রান্তির পরের দিন থেকে অপর সংক্রান্ত পর্যন্ত সময়কে এক সৌর মাস বলা হয়। লক্ষ্য করা যায় সূর্য পরিক্রমণ অনুসারে সূর্য প্রতিটি রাশি অতিক্রম করতে একই সময় নেয় না। এক্ষেত্রে মাসভেদে সূর্যের একেকটি রাশি অতিক্রম করতে সময় লাগতে পারে, ২৯, ৩০, ৩১ বা ৩২ দিন। সেই কারণে প্রতি বছর বিভিন্ন মাসের দিনসংখ্যা সমান হয় না। এই সনাতন বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর ঋতুভিত্তিক থাকে না। একেকটি মাস ক্রমশঃ মূল ঋতু থেকে পিছিয়ে যেতে থাকে।
(By: Dr. Kathak Das)

Sunday, February 03, 2013

সিগারেট যদি "গু" হত?

আসুন দেখি যদি সিগারেটের নাম ''গু'' হত তাহলে সবাই কি বলত :
  • দোকানদারকে কাস্টমার: মামা বেনসন/গোল্ডলিফ গু আছে?
  • অনেকদিন পর বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুর দেখা হলে: কিরে দোস্ত তুই গু খাস? আগে না ভালো ছিলি গু খাওয়া ধরলি কবে?
  • গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডকে: সেকি কিছলু তুমি আবার গু খেয়ে আমার ঠোঁটে কিস করেছ?
  • স্ত্রী স্বামীকে: হয় গু খাওয়া ছাড়বে না হয় আমাকে ! ল্যাও ঠ্যালা...
  • সন্তান মাকে: আম্মু দেখ বাবা আবার টয়লেটে বসে গু খাচ্ছে!
  • চলন্ত বাসে জনৈক মহিলা: উঃ গুয়ের গন্ধে বমি আসতেছে!
  • জনৈক আঁতেল: শুনলাম বাজেটে গুয়ের দাম বাড়াচ্ছে! ভাবছি কয়েকশো প্যাকেট গু কিনে রাখুম!
  • জনৈক মাতাল: এত গু দিয়ে কি করবি ! কিছু গুয়ের প্যাকেট আমাকেও দিস না হলে ড্যাম হয়ে যাবে!
  • জ্ঞানী গুণীরা কহেন- সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: গু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!

Wednesday, November 21, 2012

আবুলনাচের ইতিকথা


বাংলার ইতিহাস আবুলের ইতিহাস, বাংলার আকাশ-বাতাস বাতাস-আকাশ বরাবরই আবুলময়। আবুলেরাই বাংলাদেশকে (বা ভারতীয় উপমহাদেশকে) করে গেছেন মহিমান্বিত, আবুলেরাই বাংলাদেশকে করে গেছেন ও করে চলছেন অপমানিত। আবুলে আবুলে হালি, এক আবুলে বিয়ে করে আরেক আবুলের শালি।

রাজনীতিক-বহুভাষাবিদ পণ্ডিত মওলানা আবুল কালাম আজাদ আজীবন ভারতের স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করে গেছেন, লিখে গেছেন India Wins Freedom (ভারত যখন স্বাধীন হলো) নামক বহুলপঠিত এক বই, পেয়েছেন ভারত সরকার কর্তৃক 'ভারতরত্ন' খেতাব।

বরিশালের চাখারের আবুল কাশেম ফজলুল হক স্বাধীন ভারতের আরেক শক্তিমান রূপকার, প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিক, বাংলার বাঘ -- শের-ই-বাংলা। আবুল মনসুর আহমদও ছিলেন প্রখ্যাত লেখক-রাজনীতিক-সাংবাদিক। আবুল কালাম শামসুদ্দিন, আবুল ফজল বাংলার দুই সুসাহিত্যিক; আবুল হাসান, আবুল হোসেন বাংলার দুই আধুনিক কবি; সৈয়দ আবুল মকসুদ হালের প্রধান কলামলেখক। ভাষাসৈনিক আবুল বরকত বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার মান রেখেছেন।
পিতা চরিত্রে এত বেশি অভিনয় করেছেন যে, আবুল হায়াত রীতিমতো বাংলাদেশের নাট্যজগতের 'জাতির পিতা'! আমার প্রয়াত নানার নাম আবুল কাশেম রাঢ়ী।

আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ স্বেচ্ছানির্বাসিত অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কবি আবুল হাসনাত্‍ মিল্টন। অস্ট্রেলিয়ায় কোনো ব্যক্তিকে ডাকা হয় নামেরপ্রথম অংশ ধরে। লোকজন যেন তাকে তার নামের প্রথম অংশ ধরে 'মিস্টার আবুল' ডাকতে না পারে, সেজন্য তিনি তার ওয়েবসাইট ও ফেসবুক আইডি খুলেছেন নাম উলটে 'মিল্টন হাসনাত্' নামে। কারণ 'আবুল' নামের সেই আগের যশ বা জোশ এখন আর নেই। 'আবুল' এখন বোকামির প্রতিশব্দ। 'আবুল' নামের সেই যশে চূড়ান্ত ধস নামিয়ে দিয়েছেন হাল আমলের জনপ্রিয় আবুলজুটি -- আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং সৈয়দ আবুল হোসেন!
একবনে দুই বাঘ থাকতে না পারলেও একদেশে এই দুই আবুল বহাল তবিয়তে বিদ্যমান ছিলেন। শেয়ারবাজার, গ্রামীণ ব্যাংক, ডক্টর ইউনূস, নোবেল পদক ও পদ্মাসেতু নিয়ে বিভিন্ন আবুলসুলভ বক্তব্য দিয়ে আবুল মাল তার আবুলত্ব বজায় রেখে চলছেন। আর মাদারিপুরের কালকিনির সৈয়দবংশের ছেলে সৈয়দ আবুল হোসেনকে তো আবুলদের মধ্যে সর্বকালের সেরা 'আবুল' বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হবে না! কথিত আছে দৌড়প্রতিযোগিতায় জিতে তিনি এবার মন্ত্রী হয়েছিলেন, আগের বার ব্যক্তিগত পাসপোর্টে বিদেশসফর করে তিনি মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন। এবার তিনি দেশের
যোগাযোগব্যবস্থাকে নিকৃষ্টতম অবস্থায় নিয়ে যাওয়ায় জনগণ তার পদত্যাগের জন্য গত বছর ইদের দিন শহিদমিনারে বিক্ষোভ করেছিল সৈয়দবংশেরই আরেক আবুল সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতৃত্বে। পদ্মাসেতু ইশুতে কালের পরিক্রমায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয় গত ২৩শে জুলাই, ২৩শে আগস্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবুলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন, সমাপ্তি ঘটেছে একটি করুণ আবুল-উপাখ্যানের ! এই আবুলের এখন দুটো পদক প্রাপ্য হয়ে গেছে, দৌড়ে জিতে একমাত্র আবুলই মন্ত্রিত্ব পেয়ে রেকর্ড গড়ায় প্রথম পদক এবং দুই-দুইবার মন্ত্রিত্বখোয়ানো বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি হিশেবে তার দ্বিতীয় পদকটি প্রাপ্য। এছাড়া, সৈয়দ আবুল হোসেনের এখন দুটো ক্রাচও দরকার, যার ওপর ভর দিয়ে দু বার দুটো 'পদ' হারানো আবুল হাঁটতে পারেন।

আজ আবুল হাসান নামক জনৈক ক্রিকেটার পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের বিরুদ্ধে শতরান করে আবুলদের চলমান আবুলামিতে ছেদ ঘটিয়ে দিলেন, আবুল হাসান দেখি গোবরে পদ্মফুলের মতো আবুলে পদ্মফুল!


(লেখক: আখতারুজ্জামান আজাদ)

Monday, October 01, 2012

রামুতে সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য

সাম্প্রতিককালে রামু, পটিয়াসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৌদ্ধ ও হিন্দুসম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ভাঙচুর, জ্বালানো-পোড়ানোর ঘটনা মন্ত্রীসহ সকলে বলছে এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু তাতেই কি শেষ? হয়ত মামলা যাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, এ নিয়ে তদন্ত হবে, কিন্তু বাংলাদেশে আদৌ কি প্রকৃত অপরাধী শাস্তি পায়? আইনের ফাঁক-ফোকরে ঠিকই বের হয়ে যায় কোনো না কোনোভাবে।

কিন্তু আসলে এক মুসলিমই "Instant Allah" নামের  ফেইসবুক আইডি দিয়ে ফেইসবুক থেকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার হাইটুপী গ্রামের উত্তম কুমার বড়ুয়া নামক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর ফেইসবুক প্রোফাইলে আপত্তিকর ছবি ট্যাগ করা হয়। ছবিতে 'কোরআনের উপর মহিলার দুটি পা', 'আল্লাহ শব্দের বিকৃতি', 'পবিত্র কাবা শরীফে কেউ নামাজ পড়ছেন, কেউ পূজা করছেন' এমন দেখানো হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, দোষ কার? উত্তম কুমার বড়ুয়াকে যে ট্যাগ করেছে? নাকি উত্তম কুমার বড়ুয়ার? এর পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরেও হামলা হয়েছে। এর দোষ কার?

মুসলিমরা যদি শান্তিপ্রিয় হয়ে থাকে তাহলে অশান্তির কেন এমন কাজ করবে? আর যদি প্রকৃত মুসলিমরা মনে করেন এসব অপকর্ম যারা করেন তার আসলে মুসলিমই নন, তাহলে এদেরকে টার্গেট করে প্রকৃত মুসলিমরা কোনো ব্যবস্থা কেন নিচ্ছে না? মায়ানমারে যখন বৌদ্ধরা মুসলিমদের অত্যাচার করে, তখন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের মুসলিমরা (সেটা প্রকৃতই হোক আর অপ্রকৃতই হোক) সোচ্চার কন্ঠে এর নিন্দা, প্রতিবাদ, সমাবেশ, নানা কিছু করে। কিন্তু কই, যখন নিজের দেশে বৌদ্ধ-হিন্দুরা নির্যাতিত হয়, তখন বেশীরভাগ মুসলিমই চুপ কেন?

আসলে হুমায়ুন আজাদের একটা কথা মনে পড়ছে ---
মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দিরও ভাঙে ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবী করে তারা ধার্মিক; আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই, তারা অধার্মিক বা নাস্তিক।

এক্ষেত্রে আমার এক বন্ধুর বন্ধু (তাশফি মাহমুদের) ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জামায়াতের সংস্পর্শের ইঙ্গিত পেলাম ---

রামুতে ধর্মীয় যে সহিংসতা ঘটলো তাতে জড়িয়ে গেছে ফেসবুক। এবং এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বেশ ক'জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মন্তব্য ছিলো যে এটা স্বাভাবিক এবং তেমন কোনো ঘটনা নয় কারণ বার্মাতে বৌদ্ধরা মুসলমানদের উপর নির্মম অত্যাচার করেছে, বাঙালীরা এত নির্দয় না। যে এবং যারা বলেছে তাদের এসব মন্তব্য যে কত নির্দয় তা হয়তো এরা ভেবেও দেখেনি। আর এই নির্মমভাব, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা এদের মধ্যে সিস্টেমেটিকালি ছড়ানো হয়েছে মিথ্যা ছবি দিয়ে মিথ্যা নিউজ দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাইলাই হত্যাকান্ডের ছবি চালানো হয়েছে বার্মায় মুসলমান হত্যা বলে। থাইল্যান্ডের উপকুলে আটক জেলেদের (যাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দাত কেলিয়ে হাসছিলো) চালানো হয়েছে গণহত্যার শিকার বলে। ফেসবুকে যেসব পেইজ এই জঘন্য মিথ্যাচার চালিয়েছে তারা আল্লাহর নামে ইসলামের নামে এই মোনাফেকি এবং কবিরা গুনাহ করে যাচ্ছে সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে। তাদের স্পনসর জামাতে ইসলামী। রোহিঙ্গাদের তাদের দরকার। কারণ রোহিঙ্গারা থাকলে তাদের দেখিয়ে সাহায্য আনতে পারবে বিদেশ থেকে, বাঙালী পাসপোর্টে বিদেশ পাঠিয়ে বায়তুল মালের চাদা নিশ্চিত করতে পারবে, আর এদের ঘাতক ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তাই ভাইয়েরা। ধর্ম কর্ম করতে ফেসবুকে আসার দরকার নাই। ওইটার জন্য আল্লাহর ঘর আছে, মসজিদ আছে, জায়নামাজ আছে। মোনাফেকদের ফাদে পড়ে মোনাফেক হইয়েন না। কবিরা গুনাহর ভাগীদার হইয়েন না। বর্জন করেন এইসব ছাগু পেইজ। আর প্রতিহত করেন এই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরে। উস্টার উপর রাখেন, রাস্তায় পাইলে রাস্তায়, ফেসবুকে পাইলে ফেসবুকে। এদের বন্ধু বানাইছেন তো আমার বন্ধুত্ব হারাইছেন। খিয়াল কইরা...
এই প্রশ্নটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ যে- ইসলামের কোন তরিকানুযায়ী বা কোরআনের কোন আয়াতে বলা হয়েছে অন্যের ঘরবাড়িতে অগ্নিসঙযোগ কিঙবা লুটপাট করার কথা? যদি তা না হয়- তবে কেনো এই নীরবতা? কিছুদিন আগেও যারা জিহাদি জোশে নানা পন্থায় রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেবার বিষয়ে উচ্চকিত ছিলেন তাদের তো কোনো দেখা পাই না, ভুল ছবি-ভুল তথ্য দিয়ে যারা বার্মার ঘটনাকে বাঙলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে সঙশ্লিষ্ট করার অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন রামুর ঘটনায় তাদের কোনো রা নেই। একেই বলে সভ্যতা!
অন্য দেশের ‘মুসলিম’ আক্রান্তের ঘটনায় মুমিন মুসলমানরা যতোটা সোচ্চার হয়েছিলেন, নিজের দেশের ‘মানুষ’ আক্রান্তের ঘটনায় তাদের এই বিভৎস নীরবতা সত্যিই সন্দেহজনক। যারা শুধু ‘মুসলমান’ চেনেন কিন্তু ‘মানুষ’ চেনেন না- তাদের আসলে রিটায়ার্ড করার টাইম চলে আসছে।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে তৎকালীন সময়েই নানা জনে নানা জিহাদি বক্তব্য দিয়েছে, রামুতে বৌদ্ধ বসতি আক্রান্ত হবার ঘটনায় তাদের প্রচ্ছন্ন মদদ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক যে নয় তার দুটো কারণের একটি হলো- ওইসব জিহাদি স্ট্যাটাসধারীদের নীরবতা, আর অন্যটি হলো- রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে সরকার ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী’র কূটচালের বাড়া ভাতে ছাই ছুড়ে দিলো। রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী’ সারাদেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ায়, মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবঙ সবশেষে ‘দাড়িপাল্লা’ ভারি করে।
সেই ‘একটি বিশেষ গোষ্ঠী’র নাম জামায়াতে ইসলাম। অনলাইন গণমাধ্যম পুলিশের বরাত দিয়ে জানিয়েছে-
“জামায়াতের লোকজন হামলার জন্য আবার জড়ো হওয়া চেষ্টা করছে।”
অতএব সাধু সাবধান!
 
 

Friday, August 03, 2012

মাহমুদুর রহমানের বিচার চাই

সম্প্রতি দৈনিক 'আমার দেশ' পত্রিকার সম্পাদক একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন ভ্রমণ ও অন্যান্য জাতীয় ইস্যু নিয়ে। প্রথম থেকে লেখাটি পড়লে দেখা যায়, উনি প্রধানমন্ত্রীর নানা সিদ্ধান্ত ও জাতীয় সমস্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে লেখাটি লেখেন। পড়তে পড়তে শেষ অনুচ্ছেদে এসে থমকে গেলাম।

উনি বলেছেন শেখ হাসিনা নাকি লন্ডনে এক নৈশভোজে বিড়বিড় করে "কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে" গানটি গুনগুনাচ্ছিলেন। সাথে নাকি অন্যান্য কিছু আওয়ামী নেতারাও এমনটি করছিলেন। কিন্তু এরপরে লেখক মন্তব্য করলেন যে, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম নাকি "উদ্দাম ও অবৈধ"। কোন ভিত্তিতে উনি এমন মন্তব্য করলেন? উনি কতটুকু জানেন রাধা-কৃষ্ণের প্রেমময় সম্পর্ক সম্বন্ধে? উনার কি এমন অধিকার আছে একটি ধর্মের পূজ্যজনকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন? উনি কি দেশের স্বল্প যে ক'জন সংখ্যালঘু হিন্দু আছেন তাদের ক্ষেপিয়ে দেবার জন্যই এমন মন্তব্য করলেন? উনার মত কতিপয় শিক্ষিত সমাজের বিদ্বান ব্যক্তিরা যদি না জেনে শুনে এমন মন্তব্য করেন, তাহলে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে তো যাচ্ছেতাই সাংবাদিকতা ছড়িয়ে যাবে; তাই নয় কি? নাকি উনি হিন্দুদের উষ্কানী দেবার জন্যই এই লেখা লিখেছেন?

যদিও আমি বেশী জানতাম না, তবুও ওই লেখার মন্তব্যতে গিয়ে কিছু মুসলিমদের থেকেই জানতে পারলাম যে, নবীজী নাকি ৪০ বছর বয়সে ৬ বছর বয়সের আয়েশাকে বিয়ে করেন। তাহলে আজ যদি একজন হিন্দু এই উদাহরণ দেখিয়ে রেষারেষী শুরু করে, তাহলে এর দায় কার উপর বর্তাবে?

আমি আপনাদের মতামত জানতে চাই এ বিষয়ে। ইতিমধ্যে আমি শেখ হাসিনার হটমেইলের ইমেলে এ নিয়ে একটি ইমেল করে দিয়েছি। কিন্তু আপনারা কি মনে করেন? এই লোকের কিরকম শাস্তি প্রয়োজন যাতে অন্য কেউ উনার মতন এমনটি না করে দ্বিতীয়বার?

আরেক দাদা থেকে কিছু তথ্য জানতে পারলাম রাধা-কৃষ্ণ সম্পর্ক সম্বন্ধে। আপনারাও জেনে নিন না জানা থাকলে

Thursday, August 02, 2012

শ্রীকৃষ্ণই ভগবান । তবুও মন্দিরে রাধারানী এবং সখীবৃন্দেরও উপাসনা হয় কেন ?



শ্রীকৃষ্ণ ভগবান । রাধারাণী হচ্ছেন মূর্তিমতী ভক্তি । সখীবৃন্দ হচ্ছেন রাধারাণীর বিস্তার বা কায়ব্যূহ । মূর্তিমতী ভক্তির মাধ্যমে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করা সম্ভব হয় । শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যদি কেউ আমাকে জানতে চায় তবে তাকে অবশ্য ভক্তির আশ্রয়ে থাকতে হবে । ভক্ত্যা মাম্ অভিজানাতি । হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রে প্রথমেই ‘হরে’ কথাটি বলতে ‘হে রাধারাণী’ বা ‘হে শ্রীকৃষ্ণের আনন্দদায়িনী’ বা হরা শক্তিকে বোঝায় । অভিমানী ব্যাক্তিরা আগে কৃষ্ণকে ভগবান মনে করে আর নিজেকে ভক্ত মনে করে । কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শিখিয়েছেন যারা কৃষ্ণের সেবা করছেন সর্বক্ষণ সর্বভাবে তাঁদের দাসানুদাস শ্রীহতে । তাই সেই নিত্য সেবাভাব পরিস্ফুট করবার জন্য শ্রীকৃষ্ণের চতুস্পার্শে তাঁর সেবাপরায়ণা শক্তি সমূহ বিরাজ করছেন । তাছাড়া কৃষ্ণ কখনও একাকী থাকতে চান না, সর্বদা তাঁর সঙ্গে কেউ না কেউ থাকবেনই । অতএব সেইভাবে শ্রীকৃষ্ণ উপাসনাই পূর্ণ ও যথার্থ বলে স্বীকার্য ।

রাধারাণী বিবাহিতা হয়েও কৃষ্ণকে আবার কিভাবে বিবাহ করলেন ?

লহ্মীদেবী যেমন নারায়ণের নিত্যশক্তি । কখনও লহ্মীদেবীকে বিবাহ করে নারায়ণ পত্নীত্বে বরণ করেছিলেন-এমন নয় । তারা চিরকাল নিত্য পতি পত্নী রূপেই বিরাজমান । তেমনই গোলোকে শ্রীরাধারাণী ও শ্রীকৃষ্ণ নিত্য দম্পতিরূপে বিরাজমান । কিন্তু ভৌম ব্রজলীলায় রাধারাণীর সঙ্গে অভিমন্যু বা আয়ান ঘোষের যে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল তা বিশেষ লীলারস আস্বাদন করার জন্য ভগবানের যোগমায়া শক্তির অঘটন-ঘটন পটীয়সী ব্যবস্থাপনা মাত্র । ভগবান শ্রীহরিকে দর্শনের জন্য অভিমন্যু পূর্ব জীবনে কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন । তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীহরি তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং প্রশ্ন করেছিলেন, “তুমি কি বর চাও ? যখন তপস্বী বলেছিলেন, “হে ভগবান ! আপনি আমাকে কি দিতে পারেন ?” শ্রীহরি বলেছিলেন, “তুমি যা চাইবে তাই দেবো ।” শ্রীহরির এই বাক্যের সততাকে পরীক্ষা করবার জন্য তপস্বী বলেছিলেন, “আমি চাই লহ্মীদেবীকে পত্নীরূপে লাভ করতে ।”
তপস্বীর এই রকম অদ্ভূত বর শুনে পরমেশ্বর শ্রীহরি বলেছিলেন, “হে তপস্বী ! তুমি যখন দ্বাপরে জটিলার পুত্ররূপে জন্মগ্রহন করবে তখন তোমার বাসনা পূর্ণ হবে, কিন্তু কখনও তুমি লহ্মীকে স্পর্শ করতে পারবে না ।” এই বলে শ্রীহরি অদৃশ্য হলেন ।
পরবর্তীতে সেই তপস্বী জটিলাদেবীর পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন । কিন্তু বিবাহ লগ্নে তাঁর বুদ্ধিভ্রম হয় । তিনি দর্শকের মতোই বসে থাকেন । রাধারানী শ্রীকৃষ্ণের কাছে বহু মিনতি করেছিলেন যাতে শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া তার বরণ মালা কেউ যেন গ্রহণ না করে । ঘটনা ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণই বিবাহ বেদীতে রাধারাণীর মালা গ্রহণ করেছিলেন । কিন্তু উপস্থিত জনতার কাছে শ্রীকৃষ্ণ অভিমন্যু রূপেই প্রতিভাত হন । যেভাবে মথুরায় কংসযুদ্ধে তিনি বিভিন্নরূপে প্রতিভাত হয়েছিলেন ।
শ্রীকৃষ্ণ কাউকেই বিরক্ত করতে চাননি । কিন্তু লীলার খাতিরে পূর্বে রাধারাণী অভিশপ্ত হয়েছিলেন যে, শতবর্ষ তাকে কৃষ্ণবিরহে থাকতে হবে । তাই অভিমন্যুর ঘরেই শ্রীমতী রাধারাণী গৃহিণীমাত্র হয়ে দিন অতিবাহিত করে সর্বক্ষণ শ্রীকৃষ্ণ চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন । এটিই ছিল অভিমন্যুর পূর্বজীবনের তপস্যার ফল স্বরূপ । প্রকৃতপক্ষে শ্রীরাধারাণীর বিবাহ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গেই হয়েছিল, অভিমন্যুর সঙ্গে কদাপি নয় ।

রাসলীলার নামে পুরুষ-মহিলার নৃত্যকীর্তনের যৌক্তিকতা কি ?

রাসলীলা কখনই অনুকরণীয় নয় । প্রজাপতি ব্রহ্মা, মহাদেব শিব, স্বর্গরাজ ইন্দ্র, সমস্ত দেব-দেবী, গন্ধর্ব, অপ্সরা-কারও পক্ষে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর হ্লাদিনী শক্তি শ্রীরাধারাণীর রাসলীলা অনুপ্রবেশ বা অনুকরনের যোগ্য নয় । তবে সে বিষয়ে মানুষের পক্ষে আর কি কথা ? শ্রীব্রহ্মা ষাট হাজার বছর তপস্যা করেও ভগবদহ্লাদিনী শক্তি ব্রজগোপিকাগণের চরণের ধূলিকণা মাত্র লাভ করার আকাঙ্ক্ষাও পূরণ করতে সক্ষম হননি । বৈকুন্ঠের লহ্মীদেবী শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলায় প্রবেশ করার সৌভাগ্য পর্যন্ত লাভ করতে পারেননি, তাই তিনি যমুনার অপর পারে কৃষ্ণপাদপদ্ম ধ্যানেই উপবিষ্ট হয়ে থাকলেন । মহাদেব শিব রাসলীলা দর্শনে গিয়েই বঞ্চিত হয়েছিলেন । অতএব যেখানে এইরকম অবস্থা ঘটে, সেই ক্ষেত্রে কি করে মল-মূত্র-কফ-পিত্ত বিশিষ্ট আধিব্যাধিযুক্ত, ধর্মনিষ্ঠাহীন, ব্রতহীন, কামুক লম্পট দুরাচারী, মদ্যমাংস প্রিয়, নেশাসেবী, জড়বুদ্ধিসর্বস্ব এঁচড়ে পাকাদের দল নিজেরাই রাধাকৃষ্ণ সেজে রাসলীলা করতে পারে ? বা রাধাকৃষ্ণ তত্ত্ব সম্বন্ধে বাজে কথা বলতে পারে……

রাধারাণী কি কৃষ্ণের মামী ?

শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে –
কৃষ্ণবাঞ্ছা-পূর্তি হেতু করে আরাধনে ।
অতএব রাধিকা নাম পুরাণে বাখানে ।।
পুরাণে বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত হয়ে সহসা তার শ্রীপাদপদ্ম সেবার জন্য যিনি ধাবিত হয়ে পুস্পচয়ন করে শ্রীকৃষ্ণের প্রথম আরাধনার বিধান করলেন তিনি হচ্ছেন রাধা ।
শ্রীমতী রাধারাণী সম্বন্ধে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন –
মহাভাবস্বরূপ শ্রীরাধাঠাকুরাণী ।
সর্বগুণখনি কৃষ্ণকান্তা-শিরোমণি ।।
অর্থাৎ, “মহাভাব-স্বরূপিনী শ্রীমতী রাধারাণী হচ্ছেন সমস্ত গুণের আধার এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রেয়সীগণের শিরোমণি ।”
গোলকে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধা নিত্য কান্ত ও কান্তারূপে বিরাজমান । সেই কথা শ্রীব্রহ্মা ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৭ শ্লোকে) বর্ণনা করেছেন, “পরম আনন্দদায়িনী শ্রীমতী রাধারাণীর সঙ্গে যিনি স্বীয় ধাম গোলকে অবস্থান করেন এবং শ্রীমতী রাধারাণীর অংশ-প্রকাশ চিন্ময় রসের আনন্দে পরিপূর্ণ ব্রজগোপীরা যার নিত্য লীলাসঙ্গিনী, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি ।”
ভগবানের ভক্ত পার্ষদগণ কত সুন্দরভাবেই শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সেই সব সুন্দর সরল কথাগুলি জেনেও ‘সাতকান্ড রামায়ণ পড়ে সীতা রামের মাসী’ বলে চিন্তাকরতে থাকেন । জটিল আর কুটিল মানসিকতা সম্পন্ন লোকেরাই রাধারাণীকে কৃষ্ণের মামী বলে ব্যাখ্যা করতেই পারেন । কারণ আপন লাম্পট্য ভাবধারা দিয়ে ভগবানের চরিত্র ব্যাখ্যা করে তারা আমোদ পেতে খুবই আগ্রহী । ষড় গোস্বামীর গ্রন্থ অধ্যয়ন করলে তারা কখনও অনর্থক কথাগুলি বলতে পারেন না । শ্রী রাধারাণী হচ্ছেন কৃষ্ণপ্রিয়া আর শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন রাধানাথ ।

সংগৃহীত : সুশান্ত বন্দ হতে

Wednesday, July 25, 2012

নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূনের দাফন অন্তরালের ঘটনা



একটি শিশুর মাতৃত্বের দাবি নিয়ে দুই নারী বিচারালয়ে গেছেন। দু’জনই নিজেকে শিশুটির মা হিসেবে দাবি করছেন। আসল মাকে চিহ্নিত করতে হাকিম হুকুম দিলেন, শিশুটিকে কেটে দুই ভাগ করে তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হোক। সঙ্গে সঙ্গে পিছু হটলেন এক নারী। বললেন, শিশুটিকে কাটার দরকার নেই। আমি তার মা নই। বিচক্ষণ হাকিম বুঝতে পারলেন, এই নারীই শিশুটির আসল মা। কারণ সত্যিকারের মা যে কোনো মূল্যে তার সন্তানকে বাঁচাতে চায়। অধিকার তার কাছে বড় নয়। হাকিম শিশুটিকে তার আসল মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।
অনেক অনেক দিন আগের গল্প এটি। গল্পের মতো এতো সুন্দর সমাধান বাস্তবে হয় না। তবে গল্পটির মর্মবাণী শ্বাশত, যা মানুষকে আলোকিত করে।

এবার সত্যিকারের গল্প

২৩ জুলাই, সোমবার গোটা বাংলাদেশের মানুষ যখন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন, তাঁকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যখন ঢল নেমেছে, তখন তাঁর দাফন নিয়ে পর্দার অন্তরালে চলছে ঘৃণ্য নাটক। সকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুমায়ূনের লাশের সঙ্গে ফেরা দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকদের জানান, নুহাশপল্লীতে দাফনই ছিল হুমায়ূনের শেষ ইচ্ছা। তবে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা ও নুহাশ, হুমায়ূনের মা আয়েশা ফয়েজসহ পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছিলেন ঢাকায় দাফন করতে। তারা সম্ভাব্য স্থান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধি চত্বর, মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও বনানী কবরস্থানের কথা বলেছিলেন। রাজধানীতে দাফন হলে মানুষ সহজে কবর জিয়ারত করতে পারবে।

কিন্তু নুহাশপল্লীর ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকেন শাওন। বেলা যত বাড়তে থাকে এই দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ও প্রকট হতে থাকে। দুপুর আড়াইটার দিকে ঈদগাহ ময়দানে হুমায়ূন আহমেদের জানাজা শেষে তার লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। লেখকের ছোট ভাই জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যায় পারিবারিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পারিবারিকভাবে বিষয়টির সমাধান চেয়েছিলেন দেশবাসীও। কিন্তু তা হয়নি। পর্দার অন্তরালে শাওনের তরফে শুরু হয় রাজনৈতিক যোগাযোগ। জানা যায়, শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফকে টেলিফোন করেন। তিনি বলেন, নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের ব্যাপারে আপনারা সহযোগিতা করুন। হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানরা, তাঁর মা, ভাই, বোনসহ পুরো পরিবার চাচ্ছে ঢাকায় দাফন করতে। কিন্তু শাওন নুহাশপল্লীতে দাফন করতে চায়। আপনারা সহযোগিতা করুন। মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমি যতটুকু জানি, পারিবারিকভাবে হুমায়ূন আহমেদকে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সেখানে আপনারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এ ব্যাপারে আমাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। এক পর্যায়ে মরীয়া মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা দুজন ব্যারিস্টারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছেন, আদালতের সিদ্ধান্ত শাওনের পক্ষেই যাবে। আপনারা সহযোগিতা করুন। এ সময় মাহবুব হানিফ বলেন, এর মধ্যে আইন-আদালত টানছেন কেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবেই সমাধান করুন। এরপর বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফোনটি কেটে দেন।

শাওনের মা আওয়ামীলীগের এমপি তহুরা আলীও বসে ছিলেন না। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কাছে ফোন করে শাওনের ইচ্ছানুযায়ী নুহাশপল্লীতে হুমায়ুনকে দাফনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলতে বলেন। সন্ধ্যায় গণভবনে কূটনীতিক, সরকারি কমকর্তা ও বিচারপতিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী সবার সঙ্গে সাক্ষাতের এক পর্যায়ে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানককে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের জানাজা হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব দাফন করা প্রয়োজন।

তিনি এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীকে দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত দাফনের তাগিদ দেন।
রাত সাড়ে আটটার দিকে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের তিন সন্তান নোভা, শিলা আর নুহাশ মিরপুরে চাচা আহসান হাবীবের বাসায় সাংবাদিকদের জানান, তারা বাবার কবর নুহাশপল্লীতে চান না। তারা এমন কোনো জায়গায় বাবাকে দাফনের কথা বলেন, যেখানে সবাই সহজে যেতে পারে।

এরপর থেকেই শুরু দফায় দফায় বৈঠক। হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবাল, তাঁর স্ত্রী ইয়াসমীন হক, নোভা, শিলা, নুহাশ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু সংসদ ভবনে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় যান। সেখানে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় দাফনের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন।

রাত পৌনে এগারটায় সেখান থেকে জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ ও নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে নিয়ে ধানমন্ডির ‘দখিনা হাওয়া’য় হুমায়ূনের দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনের কাছে যান।

দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে আলোচনার পর কোনো সমাধানে না আসতে পেরে তারা আবার এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর বাসায় ফিরে আসেন। তারা পরিবারের সদস্যদের জানান, শাওন তার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে আদালতে যাবেন। রায় না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ হিমঘরেই থাকবে।

এ কথা শোনার পর নোভা, শীলা ও নুহাশ চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তারা ঢাকায় দাফনের কথাই বলতে থাকেন। এসময় জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাসিরুদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তাদের বোঝান।

তারা বলেন, লাশটা দাফন হওয়া প্রয়োজন। অবশেষে হুমায়ূনের প্রথম পক্ষের সন্তানেরা তাদের আবেগ চেপে ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, বাবা হিমঘরে পড়ে থাকবেন, এটা হয় না। তারা নুহাশপল্লীতেই বাবার দাফনে সম্মত হন (এসব তথ্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন)।

অবশেষে ২৪ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে অঝোর ধারায় বৃষ্টির সময় নুহাশপল্লীতে দাফন করা হয় বৃষ্টিপাগল হুমায়ূন আহমেদকে। ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করার পাঁচ দিন পর মাটির ঘরে শেষ আশ্রয় হলো তাঁর।

এর আগে শাওন অশ্রুসিক্ত নয়নে সবাইকে বলেনহুমায়ূন বলে গেছেন, তাঁকে নুহাশ পল্লীতেই দাফন করার কথা(টিভি চ্যানেলগুলো এই ফুটেজ বারবার প্রচার করেছে)। আর এদিকে এখন জানা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে শাওন হুমায়ূনের দাফন প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা বলে এসেছেন। শাওনের সেই বক্তব্য অনুযায়ী হুমায়ূন তার দাফন বিষয়ে কিছুই বলে যাননি। এনিয়ে আমেরিকায় বাঙালি কমিউনিটিতে এখন তোলপাড় চলছে। শাওনের দুই ধরনের বক্তব্যে বিস্মিত সবাই।

হুমায়ূন আহমেদের সত্যিকারের আপনজনেরা তাকে ঢাকায় দাফন করার ন্যায্য দাবি থেকে সরে দাঁড়ালেন। তারা প্রমাণ করলেন, হিমঘরে লাশ রেখে দাফনের স্থান ঠিক করার জন্য আইন-আদালতে যাওয়াকে ভালবাসা বলে না। গল্পের মা যেমন নিজের সন্তানকে বাঁচাতে তার মাতৃত্বের অধিকার ছেড়ে দিয়েছিলেন, হুমায়ূনের মা, তিন সন্তান ও ভাইবোনেরা ঢাকায় তার দাফনের দাবি ছেড়ে সত্যিকারের আপনজনের পরিচয় দিলেন।


জেদ আর কূটকৌশল করে শাওন জিতে গেলেন। তবে প্রকৃত বিচারে কে জিতল- বিশ্বজুড়ে হুমায়ূনের কোটি কোটি ভক্তরা একদিন তা অনুধাবন করবেন নিশ্চয়ই।

----

Sunday, March 04, 2012

ঢাকা কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র যখন রিকশাচালক:


ধানমন্ডিতে গিয়েছিলাম কিছু কাজে। বাসায় ফিরব বলে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছি, রিকশা পাচ্ছিলাম না। যে রিকশাই দেখি, রিকশাওয়ালা ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ চেয়ে বসে। মেজাজটা এমনিতেই খারাপ কারণ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলছিলাম। হঠাৎ একজন হ্যাঙলা পাতলা মতন ছেলে আমার সামনে রিকশা নিয়ে এসে বলল, “স্যার কোথায় যাবেন?” আমি একটু অবাক হলাম, কারণ রিকশাওয়ালারা সচরাচর স্যার বলে না, “মামা বলে”; আমি তাকে বললাম বকশিবাজার যাব, বোর্ড অফিসের পাশে। সে আমার কাছে ঠিক ঠিক ভাড়া চাইল। আমি মোটামুটি আকাশ থেকে পড়লাম, মনে করলাম এতক্ষণ পরে মনে হয় আধ্যাত্নিক সাহায্য এসে হাজির হয়েছে। যাইহোক বেশি চিন্তা না করে তাড়াতাড়ি রিকশাই উঠে পড়লাম। মনে মনে বললাম “আহ্‌! এখন একটু শান্তিমত মানুষ দেখতে দেখতে বাসায় যাওয়া যাবে”; ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে রিকশায় যাওয়াকে অনেক এনজয় করি। তবে সেদিনের রিকশা ভ্রমনটা একটু আলাদা ছিল। খেয়াল করছিলাম রিকশাওয়ালা অনেক সাবধানে চালিয়ে যাচ্ছিল। কাউকে গালি দিচ্ছিল না। অন্যের রিকশার সাথে লাগিয়ে দেওয়ার আগেই ব্রেক করছিল। কেউ তাকে গালি দিলে সে কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিজের রিকশা চালানোতে ব্যস্ত ছিল। কিছুক্ষন পরে একটু অবাক হলাম, রিকশা যখন ঠিক ঢাকা কলেজের সামনে আসল, তখন রিকশাওয়ালা মুখে কাঁধের গামছাটা ভাল করে পেচিয়ে নিল। তার চেহারা ঠিকমত দেখা যাচ্ছিল না। ভেতরে ভেতরে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম, ভাবছিলাম এইবুঝি ছিনতাইকারী ধরবে। নিজেকে সামলিয়ে নিতে রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলাম। সেই একই রকমের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলাম, “মামা বাড়ি কোথায়?” সে একিরকম উত্তর দিল, রংপুর। পরের প্রশ্ন করার আগেই বলল “স্যার বেশিদিন হয়নাই রিকশা চালাই”; স্বভাবতই জিজ্ঞাসা করলাম ঢাকা আসছ কবে? সে উত্তর দিল, “দুই বছরের কিছু বেশি হয়ছে”; এভাবেই অনেক কথা হল। একসময় হঠাৎ চালাতে গিয়ে আমার পায়ে টাচ্‌ লাগায় সে বলল, “সরি স্যার”; একটু অবাক হলাম তার ম্যানার দেখে। তাকে প্রশ্ন করতে দেরি করলাম না, “বললাম তুমি কি পড়ালেখা কর?” সে বলল, “স্যার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার, ঢাকা কলেজে”; হতভম্ব হয়ে গেলাম। তার পোশাক আশাক চলন গড়ন আবার নতুন করে দেখা শুরু করলাম। দেখলাম পড়নে একটা প্যান্ট অনেক ময়লা, শার্টের কিছু জায়গায় ছেঁড়া। স্বাস্থ্য এতই কম যে মনে হয়, অনেক দিন না খেয়ে আছে। কৌতুহলবশত প্রশ্ন করলাম তুমি রিকশা চালাও কেন? সে বলল, তারা তিন বোন, এক ভাই। তার বাবা কিছুদিন আগে মারা গিয়েছে, মা ছোট থেকেই নেই। আগে বাবা দেশে দিনমজুর ছিল। এখন বাবা মারা যাওয়ার পরে তার তিন বোনকে সে ঢাকায় নিয়ে এসেছে, স্কুলে ভর্তি করিয়েছে, থাকে কামরাঙ্গির চরে, একটি রুম ভাড়া নিয়ে। কিছুদিন আগে তার দুইটি টিউশনি ছিল এখন একটিও নেই। সংসার চালানোর জন্য টাকা নেই যথেষ্ট, তাই উপায় না পেয়ে রাতের বেলা রিকশা চালাতে বের হয়েছে। মাঝে মাঝেই বের হয় এমন। তবে অনেক ভয়ে থাকে, যখন সে ঢাকা কলেজের পাশে দিয়ে যায়। পরিচিত কেউ দেখে ফেললে ক্লাস করাটা মুশকিল হয়ে যাবে। নিজে থেকেই বলল, “আমাকে হয়তো বলবেন অন্য কিছু করোনা কেন?” তারপর নিজে থেকেই উত্তর দেওয়া শুরু করল, পোলাপাইন অনেকে দেখি রাজনীতি করে, অনেক টাকা পায়, আবার অনেকে প্রতিদিন একটা করে মোবাইলের মালিকও হয়। কিন্তু আমার এমন কিছু করতে মন চায় না। সবসময় মনে করি একটা কথা, এই দেশকে কিছু না দিতে পারি কিন্তু এই দেশের কাছে থেকে জোর করে কিছু কেড়ে নিব না। আমার কাছে দেশ মানে আপনারা সবাই। আপনাদের সাথে কোন বেয়াদবি করা মানে দেশের সাথে নিমকহারামি করা। এই যে দেখেন আপনারা আছেন বলেই তো আমি এখন রিকশা চালায়ে কিছু টাকা আয় করতে পারছি। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে বলল স্যার চলে আসছি। আমি তাকে কিছু বেশি টাকা জোর করেই হাতে ধরিয়ে দিলাম। মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। বাসায় এসে কোন কথা না বলেই শুয়ে পড়লাম বিছানায়।
মনে মনে ভাবছিলাম দেশপ্রেমটা আসলে কি? আমরা যখন অনেক বড় বড় কথা বলি, অনেক অনেক বড় বড় লোকের উদাহরণ দেই, বলি যে, “কি বিশাল দেশপ্রেমের উদাহরণ” কিন্তু আজকে যা দেখলাম, তা থেকে আমার মাথায় প্রোগ্রাম করা দেশপ্রেমের সংজ্ঞাটা বদলে গেল এবং কিছুটা অবাকই হলাম এইটা ভেবে, পাঠ্যবইয়ে কোথাও দেশসেবার কোন বিশদ উদাহরণ দেখিনাই বাস্তব ক্ষেত্রে। যা পড়েছি সবই তো এখন ইতিহাস। এখন অনেক বড়, দেশের সেবা করতে গেলে আসলে আমাদের কি করা উচিৎ? ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবার পরে ছোট মস্তিস্ক থেকে কিছু ছোট ছোট উত্তর মিলেছেঃ
আমার কাছে মনে হয়েছে দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষকে ভালবাসা, আর দেশের সেবা মানে দেশের মানুষের সেবা করা।
অনেকের কাছে দেশের সেবা করা মানে হল শুধু গ্রামে গিয়ে গরিব শ্রেনীর মানুষকে সাহায্য করা, স্কুল তৈরি করে দেওয়া, রাস্তার পাশে খেতে না পারা ছেলেমেয়েকে খাওয়ানো, পড়ানো, শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। এইসব অবশ্যই ভাল কাজ, দেশের সেবা, কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এইরকমের কাজ আমরা প্রতিনিয়ত করতে পারিনা। তারমানে কি আমরা প্রতিনিয়ত দেশের সেবা করতে পারব না? আরেকটু চিন্তা করে উপলব্ধি করা যায় যে, আমরা প্রতিনিয়ত যা করছি আমাদের কর্মজীবনে, সেটাকে ঠিকমত করাটাই হল দেশপ্রেম।
আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশকে স্বাধীন করে আমাদের কাছে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছেন, এই আমানতকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটায় হচ্ছে দেশপ্রেম, দেশের সেবা । এই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার ক্ষেত্রে বিভিন্নজনের দায়িত্ব বিভিন্নরকম। কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ঠিকাদার, কেউবা ঝাড়ুদার। কারও অবদান কোন দিক থেকে কোন অংশে কম না। তাই নিজের দায়িত্বকে কোন অংশে বড় করে না দেখে চিন্তা করা উচিৎ আমরা সবাই দেশের সেবা করছি, দেশ আমাদের সবার। মাকে যেমন তার ছেলেমেয়ে সবাই সমান ভালবাসতে পারে, তেমনি দেশ, যার ছেলে মেয়ে আমরা সবাই, আমরা চাইলেই সবাই নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে, নিজেদের কাজ ছেড়ে না দিয়ে, বরং নিজেদের কাজ যথাযথভাবে করেই দেশের সেবা করতে পারি।
(লেখকঃ সাহিল শাহাদাত।)

[সম্ভব হলে সবাই এই লেখাটা শেয়ার করুন অথবা ছবিটা বন্ধুদেরকে ট্যাগ করে দিন]

Monday, August 29, 2011

আমাদের ভাষা, আমাদের গর্ব

বাংলা ভাষা
বাংলা, ইন্দো-ইউরোপীয় হতে যেটি ইন্দো-ইরানীয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষে এসেছে। বাংলা হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বহুল প্রচলিত ভাষা। বাংলাদেশের প্রধান ভাষা বাংলা। বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী অনেক রয়েছে - প্রায় ১.৯ কোটি - যা অন্যান্য অনেক ভাষাসমূহের তুলনায় অনেক বেশী। অন্যান্য আধুনিক ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর মতো বাংলাও কমিয়ে দিয়েছে প্রাচীন ইন্দো-আর্যের জটিল বিভক্তিমূলক ব্যবস্থাসমূহ।

বাংলা ভাষার ইতিহাস
বাংলার উৎপত্তি হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচ্যের ভাগে, আর্য বা ইন্দো-ইরানীয় যাকে বলা হয় এবং যেটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হতে এসেছে। এর সরাসরি পূর্বপুরুষ হচ্ছে এক প্রকার প্রকৃত বা মধ্য ইন্দো-আর্য যেটি নেমে এসেছে সংস্কৃত বা প্রাচীন ইন্দো-আর্য হতে। খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ শতাব্দীর পূর্বে সংস্কৃতই ছিল কথ্য ও পুস্তকের ভাষা আর্যদের নিকট যার পরে এটি প্রায় দুই হাজার বছর ধরে প্রভাবশালী ও আন্তর্জাতিক মিশ্রিত ভাষা হিসেবে পন্ডিতদের ও সাধারণ মানুষদের কাছে ভারতবর্ষে ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃতের ন্যায়, অপভ্রংশ-অবহত্য ছিল পুঁথিগত ভাষা এবং এটির নথিপত্র খুব কম ছোটখাট রূপান্তর দেখায়; কার্যকরীভাবে এই একই ভাষা দেখা গেছে গুজরাটী ও বাংলা কবিতাসমূহে। কিন্তু কথ্য ভাষা শর্তগতভাবে বদলায় প্রাদেশিক ভাষাবিদ্যানুযায়ী এবং জাতিগত পরিবেশ গ্রহণ করে ভিন্ন ভিন্ন প্রাদেশিক নয়া ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহকে। এই নয়া ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের আবির্ভাব সম্পূর্ণভাবে সুসংগত হয় না। কিন্তু কিছু কিছু, যেমন বাংলা, নিশ্চিতভাবে আরম্ভ হয়েছে দশম শতাব্দীর মধ্য থেকে।



----------উপরোক্ত অনুবাদের মূল ইংরেজী লেখা----------


Bengali Language
Bengali or Bangla , language belonging to the Indic group of the Indo-Iranian subfamily of the Indo-European family of languages. Bengali is one of the most widely spoken languages of the world. Bengali is the main language spoken in Bangladesh. Bengali has more speakers-some 190 million-than all but a handful of other languages of the world. Like other Modern Indo-Aryan languages, Bengali has drastically reduced the complex inflectional system of Old Indo-Aryan.

History of the Bengali language:

Bengali belongs to the easternmost branch, called Aryan or Indo-Iranian, of the Indo-European family of languages. Its direct ancestor is a form of Prakrit or Middle Indo-Aryan which descended from Sanskrit or Old Indo-Aryan. Sanskrit was the spoken as well as the literary language of Aryandom until circa 500 B.C., after which it remained for nearly two thousand years the dominant literary languages as well as the lingua franca among the cultured and the erudite throughout the subcontinent.
Like Sanskrit, Apabhramsa-Avahattha was a literary language, and in the available records it shows remarkably little local variation; practically the same form of the language appears in the poems written in Gujrat and in Bengal. But the spoken language conditioned by the regional linguistic and ethnic environments took up the different regional New Indo-Aryan languages. The emergence of these New Indo-Aryan speeches was not all synchronized. But some of them, including Bengali, certainly originated by the middle of the tenth century at the latest.




নিচের নকশায় বাংলা ভাষার উৎপত্তি দেখায় (এটি বাংলায় স্নাতকোত্তর এক শিক্ষক হতে পাওয়া):





Saturday, July 30, 2011

হিন্দুধর্মের ইতিহাস

হিন্দুধর্ম দ্বারা ভারতের এক ব্যাপক সমাজ-সংস্কৃতিকে বোঝানো হয়। ঐতিহাসিকভাবে এটি জুড়ে আছে ভারতে ধর্মের বিকাশ, যেটি সেই প্রাচীন ধাতুর যুগ থেকে, যা ফিরে যায় আদি ধর্মে যেমন তামার যুগে ইন্দু নদীর উপত্যকার সভ্যতা এবং পরবর্তীতে লোহার যুগের বৈদিক ধর্ম।
প্রাচীন হিন্দুধর্ম বেরিয়ে এসেছে বৈদিক সংস্কৃতির এক পুনরুভ্যুদয়ের মাধ্যমে যার সাথে ভারতে বৌদ্ধধর্মের ক্রমাগত বিলুপ্তি ঘটেছে বর্তমান সময়ের প্রায় প্রথম থেকেই। হিন্দু দর্শনের ছয়টি শাখা আছে যা বিকশিত হয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে খ্রীষ্টপরবর্তী ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত, অর্থাৎ - শঙ্খ, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিকা, মীমাংসা এবং বেদান্ত। একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো যেমন, শৈব, বৈষ্ণব - এসবও এই সময়েই বিকাশ লাভ করে ভক্তিবাদের সঙ্গে সঙ্গে।
প্রাচীন পৌরাণিক হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয় মধ্যযুগে, যেমনভাবে আদি শংকরের অদ্বৈত বেদান্ত যা মিলিয়ে দেয় শৈব ও বৈষ্ণব মার্গের লোকদের এবং জন্ম দেয় স্মার্ত সম্প্রদায়ের যার সাথে সাথে দর্শনের অবেদান্তিক বিদ্যালয়গুলোর পতন শুরু হয়।
ইসলামিক শাসনামলে হিন্দুধর্ম ভক্তিবাদের ঊর্ধমান উন্নতি লক্ষ্য করে যা আজও ভীষণ প্রভাবমন্ডিত। বৃটিশ শাসনামলে হিন্দুধর্মের নানা রকমের সংস্কারবাদী আন্দোলনের জাগরণ ঘটে যা মূলত পাশ্চাত্য ভাবধারা থেকে অনুপ্রাণিত যেমন আত্ম-দর্শন। ১৯৪৭ এ ভারতবর্ষের ভাগেরও উদ্ভব ঘটে ধর্মীয় কারণেই যার ফলে হিন্দু অধ্যুষিত গণতান্ত্রিক ভারতের জন্ম হয়।
বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয়দের বিশ্বের বিভিন্ন স্থাণে যাওয়ার ফলে হিন্দু সংখ্যালঘু ছড়িয়ে গেছে সকল মহাদেশেই যার মধ্যে বড় সংখ্যায় রয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে। গণতান্ত্রিক ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদ এক বিশাল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে বিকাশিত হয়েছে ১৯৮০-র পর থেকে, যার ফলে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কেন্দ্রীয় সরকার চালায় ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ ও দক্ষিণ ভারতের রাজ্য সরকার চালায় ২০০৬ থেকে।
আদি ইতিহাসআদি ঐতিহাসিক ভারতীয় ধর্মের প্রমাণ মেলে তামার যুগের ইন্দু নদীর উপত্যকায় সভ্যতা থেকে যেখানে দেখানো হয় কিছু কিছু হিন্দুধর্মের ব্যবস্থা যেমন, স্নান (যাকে ধরা হয় একটি ধর্মীয় আচার হিসেবে) এবং প্রতীক যেমন, শিবলিঙ্গ। স্বস্ত্বিকার চিহ্নও পাওয়া যায় এ সময়ে।
অনেক প্রকার নর-নারীর আকার, যার মধ্যে নারী আকারকে "দেবী মাতা" হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় - এসবই পাওয়া যায় ইন্দু সভ্যতার আমলে, যদিও কেউ কেউ এসব ঐশ্বরিক চরিত্রকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
একটি সীল পাওয়া গেছে মোহেনযোদারো সাইট খননের পরে যেটিকে ধরা হয় "যোগী" বা "শিব"-এর আকারধারী হিসেবে। এই "পশুপতি" (পশুপাখীর ঈশ্বর) সীল দেখিয়েছে এক বসাবস্থায় আকারকে, হয়ত ithyphallic যা পশু দ্বারা বেষ্টিত। কেউ কেউ আবার এই আকৃতিকে বর্ণনা করেছেন যে এক ঐতিহ্যবাহী যোগে বসা আকার যা তার হাঁটুর উপর ভর করে হাত দেখিয়ে বসে আছে। এই সীলের আবিষ্কারক, স্যার জন মার্শাল, এবং অন্যান্যরা বলেছেন এই আকৃতি শিবেরই আকৃতি এবং এই আকৃতির তিন চেহারা আছে , যোগাকৃতির মতো বসে আছে হাঁটু বের করে ও পা যুক্ত করে।
বৈদিক যুগবৈদিকতা ছিল ইন্দো-আর্যদের উৎসর্গকারী ধর্ম, যারা ছিল প্রাচীন ইন্দো উপভাষা ব্যবহারকারী, যেটি অবশেষে উদ্ভূত হয়েছে ইন্দো-ইরানীয় মানুষদের থেকে তামার যুগে। এর liturgy সংরক্ষিত রয়েছে বেদের তিন সংহিতায়: ঋকবেদ, সামবেদ ও যজুর্বেদ। এরমধ্যে ঋকবেদ (যেটি সবচেয়ে প্রাচীন) হলো একগুচ্ছ স্তোত্রাবলী যেগুলো খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ সনের। অন্য দুটি যোগ করেছে আনুষ্ঠানিক বিবরণসমূহ যা প্রধানত উৎসর্গের কর্মগুলোতে ব্যবহৃত হয়। অথর্ববেদে মূলত রয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব ১০০০ সনের আগের রচনাসমূহ। এতে রয়েছে এমন জিনিসপত্র যা সেসময়কার গৃহস্থের আচারাদিতে ও লোককে দেখানো যাদুর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এসব গ্রন্থাবলী এবং orthopraxy-র উপরে বিপুলায়তনের মন্তব্য যা ব্রহ্মে একত্র করা হয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব ১০০০ বছরে, প্রেরিত হয়েছে মৌখিক প্রথা হিসেবে পল্লব ও গুপ্ত আমলের আগ পর্যন্ত যার মাধ্যমে লিখিত ও মৌখিক এক মিলিত প্রথার উদ্ভব হয়।
ঋকবৈদিক ধর্মবেদের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থ হচ্ছে ঋকবেদ যেটি একগুচ্ছ পদ্যের ন্যায় স্তোত্র যা ব্যবহৃত হয়েছে বৈদিক পুরোহিতদের দ্বারা করা উৎসর্গমূলক কর্মকান্ডে। অনেক ঋকবৈদিক স্তোত্র প্রধানত জোর দেয় অগ্নি প্রথা (অগ্নিহোত্র)-র ওপর এবং ঈশ্বরের প্রতি সোম বিসর্জন (সোমযজ্ঞ)। সোম হচ্ছে উন্মাদক ও ঈশ্বর দুইই, যেমনভাবে উৎসর্গীকৃত আগুন, অগ্নি। রাজকীয় ঘোড়া উৎসর্গ (অশ্বমেধ) হচ্ছে যজুর্বেদ অনুযায়ী এক প্রধান প্রথা।
ঋকবেদের দেব-দেবীরা মূলত মনুষ্যধারী ধারণা, যারা দুটি ভাগে বিভক্ত: দেবতা - যারা প্রকৃতির ঈশ্বর - যেমন, প্রকৃতির দেবতা ইন্দ্র (যিনি দেবতাদের রাজা), অগ্নি, ঊষা, সূর্য্য, অপঃ। অন্যদিকে রয়েছে অসুর - নৈতিক দিক থেকে ঈশ্বর - যেমন, মিত্র (চুক্তি), আর্যমন (অতিথি, বন্ধু ও বিবাহের অভিভাবক), ভাগ বা বরুণ, আদিত্য (অসুরদের সেরা)। যদিও ঋকবৈদিক দেব ব্যবহৃত হয়েছে অনেক প্রকার দেবতাদেরকে বোঝানোর ক্ষেত্রে, যার মধ্যে অসুরগণও রয়েছে। দেবতাদেরকে ধরা হয় তরুণ ঈশ্বর হিসেবে আর অসুরদের প্রবীণ ঈশ্বর। পরবর্তী বেদসমূহে অসুররা হয়ে গেছে রাক্ষস।
ঋকবেদে রয়েছে ১০টি মন্ডলা (পুস্তক)। ভাষাগত ও ভঙ্গিমাগত পার্থক্য রয়েছে পারিবারিক পুস্তক (ঋকবেদ ২-৭), পুস্তক-৮, "সোম মন্ডলা" (ঋকবেদ ৯) এবং সবচেয়ে সাম্প্রতিক পুস্তক ১ ও ১০। পুরাতন পুস্তকসমূহের মধ্যে রয়েছে অনেক ইন্দো-ইরানীয় ধর্মের দিকসমূহ এবং এটি আগেকার ইন্দো-ইরানীয় প্রথার পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মূলত ঋকবেদ-৮, যার সাথে উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে অভেষ্টর, যেটিতে আছে আফগান ফ্লোরা ও ফনার উল্লেখ, যেমন - উটের প্রতি। অনেক প্রধান প্রধান ধর্মীয় বৈদিক সংস্কৃত শব্দের সমোদ্ভব আছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ধর্মীয় শব্দকোষের সাথে (deva: ল্যাটিনে deus; hotar: জার্মানে god; asura: জার্মানে ansuz; yagna: গ্রীকে hagios; brahman: নর্সে bragi অথবা ল্যাটিনে flamen ইত্যাদি)। মূলত দৃষ্টিযোগ্য হলো, অভেষ্টতে অসুরকে (Ahura) বলা হয়েছে ভালো এবং দেবকে (Daeva) খারাপ, যা ঋকবেদের বিপরীত।
ব্রহ্মত্বখ্রীষ্টপূর্ব দশম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর সময়ে, মহাজনপন্ডদের উৎপত্তি হয়েছে আগেকার ছোটখাট রাজ্যের নানা প্রকার ঋকবৈদিক উপজাতি থেকে, এবং এর পূর্ব হরপ্পার ব্যর্থ অবশিষ্টাংশ হতে। এই সময়ে বেদের মন্ত্রের অংশ বিশেষ বেশীরভাগই সম্পন্ন হয় এবং এক ফুটফুটে বৈদিক পুরোহিতদের শিল্প গড়ে ওঠে যা সাজানো হয় অসংখ্য বিদ্যালয়ে (শাখা হিসেবে) যা পরবর্তীতে শাস্ত্রগত সাহিত্যচর্চায় পরিণত হয় অর্থাৎ ব্রহ্মত্বে। এইসব বিদ্যালয়গুলো বেদের মন্ত্রের অংশগুলো সম্পাদনা করে নির্ধারিত রিভিশনে নিয়ে যায় যেগুলো সংরক্ষিত করা হয় মূলত মৌখিক প্রথার মাধ্যমে পরবর্তী দুই সহস্র জুড়ে।
হিন্দুধর্মের ব্রাহ্মণ সমাজের এই আধিপত্যের যুগ অধগামিত হয় আধ্যাত্মিক প্রথাব্যবস্থার (সবচেয়ে প্রাচীন উপনিষদ BAU, ChU, JUB, এছাড়াও শতপথ ব্রাহ্মণ) অনমনীয় ধর্মীয় আচার ব্যবস্থার প্রতি আক্রমণের মাধ্যমে যা শুধুমাত্র উঁচু শ্রেণীর জন্যই খোলা ছিল, আত্মিক পরিজ্ঞানের (আত্মসংযমব্রত ও ধ্যান) সাথে সাথে। এই সময়ে বৌদ্ধধর্মের বিস্তার যা গৌতম বুদ্ধের (একজন খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর রাজপুত্র) আদর্শে প্রচারিত, যিনি আলোক-সম্পাতের জন্য তার সামাজিক অবস্থাণ বর্জন করেছিলেন এই প্রবণতার এক উত্তম উদাহরণ। রাজনৈতিকভাবে, মহাজনপন্ডরা আরো কমে যায় মগধ সাম্রাজ্যে মগ্ন হয়ে যা মৌর্য সাম্রাজ্য প্রায় পুরো উপমহাদেশ ঘিরে ফেলে অশোকের সময়ের মধ্যে।


----------------------------------------------------

ফেইসবুকে এক গ্রুপের মাধ্যমে এই লেখাটি ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছি। আসল লেখা থেকে বাংলা অনুবাদে ভাষাগত ভুল থাকলে অনুগ্রহ করে দেখিয়ে দেবেন। প্রকৃত ভুল অবশ্যই শুধরে দেয়া হবে।

==============================

History of Hinduism

Hinduism is a term for a wide variety of related religious traditions native to India.[1] Historically, it encompasses the development of Religion in India since the Iron Age traditions, which in turn hark back to prehistoric religions such as that of the Bronze Age Indus Valley Civilization followed by the Iron Age Vedic religion.
Classical Hinduism emerges as a revival of Vedic traditions with the gradual decline of Buddhism in India from around the beginning of the Common Era. Hindu philosophy had six branches, evolving from about the 2nd century BC to the 6th century AD, viz. Samkhya, Yoga, Nyaya, Vaisheshika, Mimamsa, and Vedanta. Monotheistic religions like Shaivism and Vaishnavism developed during this same period through the Bhakti movement.
Classical Pauranic Hinduism is established in the Middle Ages, as was Adi Shankara's Advaita Vedanta which reconciled the Vaishna and Shaiva sects, and gave rise to Smartism, while initiating the decline of the non-Vedantic schools of philosophy.
Hinduism under the Islamic Rulers saw the increasing prominence of the Bhakti movement, which remains influential today. The colonial period saw the emergence of various Hindu reform movements partly inspired by western culture, such as spiritism (Theosophy). The Partition of India in 1947 was along religious lines, with the Republic of India emerging with a Hindu majority.
Prehistory
During the 20th century, due to the Indian diaspora, Hindu minorities have formed in all continents, with the largest communities in absolute numbers in the United States and the United Kingdom. In the Republic of India, Hindu nationalism has emerged as a strong political force since the 1980s, the Hindutva Bharatiya Janata Party forming the Government of India from 1999 to 2004, and its first state government in southern India in 2006.             
Evidence of prehistoric religion in India is found in the Bronze Age Indus Valley Civilization, showing the certain elements of Hinduism such as baths (assumed to serve a ritual purpose) and Symbols, compared to the Shiva lingam.[2][3] There were also found Swastika signs.
Many male and female figurines, the female figurines popularly dubbed "Mother Goddesses" have been found in the Indus Valley, although some have expressed doubt as to the divine character of these female figures.[4]
Vedic period
A seal discovered during excavation of the Mohenjo-daro archaeological site in the Indus Valley has drawn attention as a possible representation of a "yogi" or "proto-Shiva" figure.[5] This "Pashupati" (Lord of Animals, Sanskrit paśupati)[6][7] seal shows a seated figure, possibly ithyphallic, surrounded by animals.[8][9][10] Some observers describe the figure as sitting in a traditional cross-legged yoga pose with its hands resting on its knees. The discoverer of the seal, Sir John Marshall, and others have claimed that this figure is a prototype of Shiva, and have described the figure as having three faces, seated in a "yoga posture" with the knees out and feet joined.   
Main articles: Vedism, Vedic period, and Vedic Sanskrit
Further information: Iron Age India
Rigvedic religion
Vedism was the sacrificial religion of the early Indo-Aryans, speakers of early Old Indic dialects, ultimately deriving from the Proto-Indo-Iranian peoples of the Bronze Age.[11] Its liturgy is preserved in the three Vedic Samhitas: the Rig-Veda, Sama-Veda and the Yajur-Veda. Of these, the Rig-Veda the oldest, a collection of hymns dated to between 1500 and 1000 BC[citation needed]. The other two add ceremonial detail for the performance of the actual sacrifice. The Atharva-Veda may also contain compositions dating to before 1000 BC. It contains material pertinent to domestic ritual and folk magic of the period. These texts, as well as the voluminous commentary on orthopraxy collected in the Brahmanas compiled during the early 1st millennium BC, were transmitted by oral tradition alone until the advent of the Pallava and Gupta period and by a combination of written and oral tradition since then. 
The earliest text of the Vedas is the Rigveda, a collection of poetic hymns used in the sacrificial rites of Vedic priesthood. Many Rigvedic hymns concern the fire ritual (Agnihotra) and especially the offering of Soma to the gods (Somayajna). Soma is both an intoxicant and a god itself, as is the sacrificial fire, Agni. The royal horse sacrifice (Ashvamedha) is a central rite in the Yajurveda.
The gods in the Rig-Veda are mostly personified concepts, who fall into two categories: the devas – who were gods of nature – such as the weather deity Indra(who is also the King of the gods), Agni ("fire"), Usha ("dawn"), Surya ("sun") and Apas ("waters") on the one hand, and on the other hand the asuras – gods of moral concepts – such as Mitra ("contract"), Aryaman (guardian of guest, friendship and marriage), Bhaga ("share") or Varuna, the supreme Asura (or Aditya). While Rigvedicdeva is variously applied to most gods, including many of the Asuras, the Devas are characterized as Younger Gods while Asuras are the Older Gods (pūrve devāḥ). In later Vedic texts, the Asuras become demons.
The Rigveda has 10 Mandalas ('books'). There is significant variation in the language and style between the family books (RV books 2–7), book 8, the "Soma Mandala" (RV 9), and the more recent books 1 and 10. The older books share many aspects of common Indo-Iranian religion, and is an important source for the reconstruction of earlier common Indo-European traditions. Especially RV 8 has striking similarity to the Avesta,[12] containing allusions to Afghan Flora and Fauna,[13] e.g. to camels (úṣṭra- = Avestan uštra). Many of the central religious terms in Vedic Sanskrit have cognates in the religious vocabulary of other Indo-European languages (deva: Latin deushotar: Germanic god;asura: Germanic ansuzyajna: Greek hagiosbrahman: Norse Bragi or perhaps Latin flamen etc.). Especially notable is the fact, that in the Avesta Asura (Ahura) is known as good and Deva (Daeva) as evil entity, quite the opposite of the RigVeda.                         
Brahmanism
Further information: Brahmana, Aranyaka, and Shrauta Sutra
During a period roughly spanning the 10th to 6th centuries BC, the Mahajanapadas arise from the earlier petty kingdoms of the various Rigvedic tribes, and the failing remnants of the Late Harappan culture. In this period the mantra portions of the Vedas are largely completed, and a flowering industry of Vedic priesthood organized in numerous schools (shakha) develops exegetical literature, viz. the Brahmanas. These schools also edited the Vedic mantra portions into fixed recensions, that were to be preserved purely by oral tradition over the following two millennia.
This period of dominance of priestly Brahmanic Hinduism declines with the appearance of mystical traditions (the oldest Upanishads, BAU, ChU and JUB besides the Shatapatha Brahmana) attacking the rigid ritualism available only to the elite, in favour of spiritual insight through asceticism and meditation. The rise of Buddhism at this time, according to tradition originating with Gautama Buddha, a 6th century BC prince, renouncing his status for enlightenment, is exemplary of this tendency. Politically, the Mahajanapadas declined by being absorbed into the Magadha Empire which as the Maurya Empire would encompass almost the whole subcontinent by the time of Ashoka.





Saturday, July 16, 2011

বেদে কোনো বর্ণভেদ নেই

এটা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক যে, যে বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়ে বেদ হলো সমাজের মূল ভিত্তি, সেখানে আমরা ভুলেই গেছি বেদের মূল শিক্ষাগুলো এবং নিজেদেরকে নানা ভুল-ভ্রান্তিসমূহের ধারণায় জড়িয়ে ফেলেছি যেমন, জন্মগত caste system-সহ নানারকম বৈষম্য। এরকম বিপথগামী চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা আমাদের সমাজকে ভীষণ ক্ষতিসাধন করেছে এবং বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটিয়ে দিয়েছে। Dalit নামক জাতিচ্যুত ব্যক্তিদের আমরা দূরে ঠেলে দিয়েছি এবং এর ফলে আমাদের উন্নতি ও প্রগতির বিকাশ স্থবির হচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে হিন্দু সমাজের মূলে গিয়ে বেদকে জানা - যার ফলে আমরা আমাদের মধ্যে ভাঙা সম্পর্কগুলো পুনরায় স্থাপণ করতে পারব।

এই লেখায় আমরা চেষ্টা করব বেদ অনুযায়ী আমাদের caste system সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাস উদঘাটন করার এবং শূদ্রের আসল অর্থ খোঁজার।

১।
প্রথমত, কোনো প্রকার হিংসা বা বৈষম্যের স্থাণ নেই বেদে যেকোনো ব্যক্তি সম্পর্কে - সে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, বা শূদ্র কিনা।

২।
Caste system প্রায় নতুন। বেদে কোনো শব্দ নেই যার অর্থ বর্ণ/জাতি হতে পারে। আসলে, caste, জাতি আর বর্ণ এগুলো এক একটি এক এক অর্থ বহন করে।

Caste হলো একটি ইউরোপীয় নবধারা যার সাথে বৈদিক সংস্কৃতির কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।

জাতি

'জাতি'র অর্থ হচ্ছে এক শ্রেণীভুক্তকরণ যার উৎস হচ্ছে জন্মে। ন্যায় সূত্র বলেছে "সমানপ্রসাভাত্মিকা জাতিহ্‌" অথবা তারা যাদের একইপ্রকার জন্মসূত্র যা এদেরকে একটি জাতিতে সমষ্টিবদ্ধ করে।
একটি প্রাথমিক আরো বড় শ্রেণীভুক্তকরণ ঋষিদের দ্বারা করা হয়েছে চারভাবে: উদ্ভিজ (অর্থাৎ গাছপালা),  আন্ডাজ (অর্থাৎ ডিম থেকে যার উৎপত্তি যেমন পাখি এবং সরীসৃপ), পিন্ডজ (স্তন্যপায়ী), উষ্মজ (তাপমাত্রা বা পরিবেষ্টনকারী আবহাওয়ার জন্য যার জন্ম যেমন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি)।
তেমনিভাবে নানাপ্রকার পশুসমূহ যেমন হাতি, সিংহ, খরগোশ ইত্যাদি তৈরি করে এক ভিন্ন 'জাতি'। একইভাবে সমস্ত মানবকুল তৈরি করে একটি 'জাতি'।
একটি নির্দিষ্ট জাতির থাকবে একই ধরনের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য যারা সেই জাতি থেকে আরেক জাতিতে পরিবর্তিত হতে পারবে না এবং ভিন্ন জাতির বাচ্চা প্রসব করতে পারবে না। অর্থাৎ, জাতি হচ্ছে ঈশ্বরের সৃষ্টি।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রেরা কোনোভাবেই ভিন্ন জাতি নয় কারণ তাদের মধ্যে জন্ম সূত্রগত বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগত কোনো পার্থক্য নেই যা তাদেরকে ভিন্ন করবে।
পরবর্তীতে 'জাতি' শব্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে যেকোনো প্রকার শ্রেণীভেদকরণের জন্য। তাই সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সমাজকেও ভিন্ন ভিন্ন 'জাতি' হিসেবে আখ্যা দেই। কিন্তু এ শুধু ব্যবহারের সুবিধার জন্য। আসলে আমরা মানবকুল এক জাতিরই অংশ।

বর্ণ

প্রকৃত যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র বোঝাতে তা হলো 'বর্ণ' ('জাতি' নয়)।
'বর্ণ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এই চারকে বোঝাতেই নয়, বরং দস্যু ও আর্যদেরকেও।

'বর্ণ' অর্থ হচ্ছে তাহাই যাহা গ্রহণ করা হয় পছন্দের দ্বারা। তাই, যেখানে 'জাতি' ঈশ্বর দ্বারা প্রদত্ত, 'বর্ণ' হচ্ছে আমাদের নিজস্ব পছন্দগত।

যারা আর্য হতে পছন্দ করে তাদের বলা হয় 'আর্য বর্ণ'। তেমনি যারা দস্যু হতে পছন্দ করে, তারা হয় 'দস্যু বর্ণ'। একইভাবে হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।
এই কারণেই বৈদিক ধর্মকে বলা হয় 'বর্ণাশ্রম ধর্ম'। বর্ণ শব্দটি ইঙ্গিত করে যে এটির ভিত্তি হচ্ছে নিজ পছন্দকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া ও যোগ্যতা অনুসারে পরিচালিত ব্যবস্থাকে অনুমোদন দেয়া।

৩।
যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত, তারা পছন্দ করেন 'ব্রাহ্মণ বর্ণ'। যারা প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ-বিগ্রহ পছন্দ করেন, তারা হন 'ক্ষত্রিয় বর্ণ'। যারা অর্থনীতি ও পশুপালনাদি পছন্দ করেন তারা হন 'বৈশ্য বর্ণ' এবং যারা নিয়োজিত আছেন অন্যান্য সেবামূলক কাজ-কর্মে, তারা হন 'শূদ্র বর্ণ'। এসব শুধু বোঝায় নানা ধরনের পছন্দ যেসব মানুষজন তাদের কর্মের জন্য নির্বাচন করেন এবং এর সাথে 'জাতি' বা জন্মের কোনো সম্পর্ক নেই।

৪।
পুরুষ সুক্তের অন্যান্য মন্ত্রসমূহ উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেছে যে, ব্রাহ্মণ এসেছে ঈশ্বরের মুখ থেকে, ক্ষত্রিয় হাত থেকে, বৈশ্য উরু থেকে এবং শূদ্র পা থেকে। সেইভাবে এইসব বর্ণসমূহ জন্মগত। কিন্তু কোনোকিছুই এর চেয়ে বেশী ভ্রান্তিজনক হতে পারে না। আসুন দেখি কেন:

(অ)
বেদ ঈশ্বরকে বর্ণনা করে আকারহীন ও অপরিবর্তনশীল হিসেবে। এমন ঈশ্বর কিভাবে বিশাল আকৃতির মানুষের রূপ ধারণ করতে পারে যদি তিনি আকারহীনই হন? (যজুর্বেদ ৪০.৮)

(আ)
যদি ইহা সত্যিই হয়, তাহলে তাহা বেদের কর্মতত্ত্বের বিরোধীতা করবে। কারণ কর্মতত্ত্ব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির জন্মগত পরিবার পরিবর্তিত হতে পারে তার কর্ম অনুসারে। সুতরাং একজন ব্যক্তি যে শূদ্র পরিবারে জন্ম নেয়, পরের জন্মে এক রাজার পরিবারে জন্ম নিতে পারে। কিন্তু যদি শূদ্রেরা ঈশ্বরের পা থেকে এসে থাকে, তাহলে সেই একই শূদ্র ঈশ্বরের হাত থেকে কিভাবে জন্ম নেয়?

(ই)
আত্মা হলো সময়হীন এবং কখনো জন্ম নেয় না। সুতরাং আত্মার কখনোই কোনো বর্ণ হতে পারে না। এ শুধুমাত্র যখন আত্মা জন্ম নেয় মনুষ্য হিসেবে তখনই এর সুযোগ থাকে বর্ণ বেছে নেবার। তাহলে বর্ণ দ্বারা কি বোঝানো হয় যা ঈশ্বরের একাংশ হতে আসে? যদি আত্মা ঈশ্বরের দেহ থেকে জন্ম না নিয়ে থাকে, তাহলে কি এই বোঝায় যে আত্মার দেহ তৈরি হয়েছে ঈশ্বরের দেহের অংশ থেকে? কিন্তু বেদ অনুযায়ী, এমনকি প্রকৃতিও চিরন্তন। এবং এই একই অনু-পরমানু পুনর্ব্যবহৃত হচ্ছে নানা মনুষ্যের মধ্যে। তাই কৌশলগতভাবে ঈশ্বরের দেহ থেকে জন্ম নেয়া কারো পক্ষে অসম্ভব, এমনকি আমরা যদি ধরেও নেই ঈশ্বরের দেহ আছে।

(ঈ)
উপরে উল্লেখ করা পুরুষ সুক্ত রয়েছে যজুর্বেদের ৩১তম অধ্যায়ে (এবং ঋগবেদ ও অথর্ববেদ বাদে যেগুলোতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যজুর্বেদে এ হচ্ছে ৩১.১১)। প্রকৃতভাবে এর অর্থ কি তা বোঝার জন্য, আসুন দেখি এর আগের মন্ত্রের দিকে লক্ষ্য করি ৩১.১০।
এতে প্রশ্ন করা হয়েছে - কে মুখ? কে হাত? কে উরু আর কেই বা পা?
এর পরের মন্ত্র এর উত্তর দিয়েছে - ব্রাহ্মণ হলো মুখ, ক্ষত্রিয় হলো হাত, বৈশ্য হলো উরু এবং শূদ্র হলো পা।
লক্ষ্য করুন, মন্ত্রটি কিন্তু বলছে না ব্রাহ্মণ "জন্ম নেয়" মুখ থেকে...এটি বলছে ব্রাহ্মণ "হলো" মুখ।
কারণ যদি মন্ত্রটির অর্থ হতো "জন্ম নেওয়া" তাহলে এটি উত্তর দিত না আগের মন্ত্রের প্রশ্নটির "কে মুখ?"
যেমন, যদি আমি প্রশ্ন করি "দশরথ কে?" উত্তরটি যদি হয় "রাম জন্ম নেন দশরথের ঘরে" তাহলে তা হবে অর্থহীন।

প্রকৃত অর্থ হচ্ছে:
সমাজে ব্রাহ্মণ বা বুদ্ধিজীবিরা তৈরি করে মস্তিষ্ক বা মাথা বা মুখ যা চিন্তা করে এবং বলে। ক্ষত্রিয় বা রক্ষণকর্মীরা তৈরি করে হাত যা রক্ষা করে। বৈশ্য বা উৎপাদনকারীরা এবং ব্যবসায়ীরা তৈরি করে উরু যা ভার বহন করে এবং যত্ন করে (লক্ষ্য করুন উরুর হাড় অথবা উর্বাস্থি তৈরি করে রক্ত এবং এ হচ্ছে দেহের সবচেয়ে শক্ত হাড়)। অথর্ববেদে উরুর বদলে "মধ্য" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ বোঝায় পাকস্থলী এবং দেহের মধ্যের অংশ।
শূদ্র বা শ্রমিকেরা তৈরি করে পা যা কাঠামোটিকে দাঁড় করায় এবং দেহকে চলতে সক্ষম করে।
পরবর্তী মন্ত্রগুলো আলোচনা করেছে অন্যান্য দেহের অংশ সম্পর্কে যেমন - মন, চোখ ইত্যাদি। পুরুষ সুক্ত বর্ণনা করেছে সৃষ্টির সূত্রপাত এবং তার স্থায়ী থাকা সম্পর্কে যার মধ্যে অন্তর্গত মানব সমাজ এবং বর্ণনা করেছে অর্থপূর্ণ সমাজের উপাদানসমূহকে।
তাই এ ভীষণ করুণ অবস্থা যে এমন সুন্দর সমাজ সম্পর্কে রূপক বর্ণনা এবং সৃষ্টি সম্পর্কিত বর্ণনা বিকৃত হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে বৈদিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে।
এমনকি ব্রহ্ম গ্রন্থগুলো, মনুস্মৃতি, মহাভারত, রামায়ণ এবং ভগবদগীতা বলে নাই কোনোকিছুই যার কাছাকাছি উপপ্রমেয় হতে পারে এমন অদ্ভূত যে ঈশ্বর তৈরি করেছেন ব্রাহ্মণদের তাঁর মুখ হতে মাংস ছিঁড়ে কিংবা ক্ষত্রিয়দের তাঁর হাতের মাংস থেকে বা অন্যান্যসমূহ।

৫।
তাই এটি স্বাভাবিক কেন ব্রাহ্মণরা বেদ অনুসারে সবচেয়ে বেশী সম্মান লাভ করেছে। এমনটিই হচ্ছে আজকের বর্তমান সমাজে। বুদ্ধিজীবিরা এবং অভিজ্ঞরা আমাদের সম্মান অর্জন করেন কারণ তারা তৈরি করেন দিক প্রদর্শনকারী সারা মানবতার জন্য। কিন্তু যেমনভাবে পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, বেদে শ্রমের মর্যাদা সমভাবে জোর দেওয়া হয়েছে এবং এই কারণেই কোনো প্রকার বৈষম্যের উপাদান নেই।

৬।
বৈদিক সংস্কৃতিতে সবাইকে ধরা হয় শূদ্র হিসেবে জন্ম। তারপর ব্যক্তির শিক্ষা-দীক্ষা দ্বারা সে পরিণত হয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যতে। এই শিক্ষা-দীক্ষার পূর্ণতাকে ধরা হয় দ্বিতীয় জন্ম। একারণেই এই তিন বর্ণকে বলা হয় "দ্বিজ" বা দু'জন্মা। কিন্তু যারা রয়ে যায় অশিক্ষিত (যেকোনো কারণেই হোক) তারা সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়। তারা চালিয়ে যায় শূদ্র হিসেবে এবং করে যায় সমাজের সেবামূলক কাজসমূহ।

৭।
এক ব্রাহ্মণের পুত্র, যদি সে তার শিক্ষা-দীক্ষা সম্পূর্ণ করতে অসমর্থ হয়, পরিণত হয় শূদ্রে। তেমনিভাবে শূদ্রের পুত্র অথবা এমনকি দস্যু, যদি সে তার শিক্ষা-দীক্ষা সম্পূর্ণ করে, তাহলে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় কিংবা বৈশ্য হতে পারে। এ হচ্ছে নির্ভেজাল যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থা। যেমনভাবে এখনকার সময়ে ডিগ্রী প্রদান করা হয়, যজ্ঞপবিত দেয়া হতো বৈদিক নিয়ম অনুসারে। তাছাড়া, আচরণবিধির সাথে অসম্মতি ঘটলে যজ্ঞপবিত নিয়ে নেয়া হতো বর্ণগুলোর।

৮।
বৈদিক ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে বর্ণ পরিবর্তনের -

(ক)
ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রহ্ম এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রহ্মকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য।

(খ)
ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)

(গ)
সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন।

(ঘ)
প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। পরবর্তীতে তিনি তপস্যা দ্বারা মোক্ষলাভ করেন প্রায়ঃশ্চিত্তের পরে। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৪)
যদি তপস্যা শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হতো যেমনভাবে উত্তর রামায়ণের নকল গল্প বলে, তাহলে প্রীষধ কিভাবে তা করল?

(ঙ)
নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩)

(চ)
ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)

(ছ)
তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩)

(জ)
ভগবদ অনুসারে অগ্নিবেশ্য ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি জন্ম নেন এক রাজার ঘরে।

(ঝ)
রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভগবদ অনুযায়ী।

(ঞ)
হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)

(ট)
শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১)
এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।

(ঠ)
মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।

(ড)
রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(ঢ)
প্রবৃদ্ধ ছিলেন রাজা রঘুর পুত্র কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(ণ)
ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন।

(ত)
বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।

(থ)
বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।

৯।
"শূদ্র" শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতে অনুনোমোদিত, অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত।

১০।
বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতে বোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্‌ - যজুর্বেদ ৩০.৫)
একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের বলে পুরো মানব সমাজের কাঠামো।

১১।
যেহেতু বেদ অনুযায়ী চার বর্ণসমূহ বলতে বোঝায় চার প্রকারের কর্মকান্ড যা পছন্দের উপর ভিত্তি করে, একই ব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে চার বর্ণের বৈশিষ্ট্য চার ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। এইভাবে সকলেই চার বর্ণের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সারল্যতার জন্য, আমরা বলি প্রধান পেশাকে বর্ণের পরিচয় হিসেবে। এবং এই কারণে সকল মানুষের উচিত পূর্ণভাবে চার বর্ণ হবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা, যেমনভাবে বেদের জ্ঞান আমাদের বলে। এই হলো পুরুষ সুক্তের সারাংশ।

ঋষি বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, অঙ্গীরা, গৌতম, বামদেব ও কন্ব - এরা সকলেই চার বর্ণের বৈশিষ্ট্যের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তারা বৈদিক মন্ত্রের অর্থ উদ্ভাবন করেছেন, দস্যু দমন করেছেন, দৈহিক শ্রমের কর্ম করেছেন এবং নিজেদেরকে যুক্ত করেছেন সমাজ কল্যাণের জন্য সম্পদ ব্যবস্থাপনায়।
আমাদেরও উচিত এমনটিই হওয়া।

অবশেষে আমরা দেখলাম বৈদিক সমাজ সকল মানুষকে একই জাতি বা গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে, শ্রমের মর্যাদা বহাল রাখে, এবং সকল মানুষের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে যাতে তারা নিজ নিজ বর্ণ গ্রহণ করতে পারে।
বেদে কোনো প্রকার জন্মগত বৈষম্যের উল্লেখ নেই।
আমরা যেন সকলে একযুক্ত হয়ে একটি পরিবারের ন্যায় একতাবদ্ধ হতে পারি, প্রত্যাখান করতে পারি জন্মগত সকল বৈষম্যকে এবং একে অপরকে ভাই-বোন হিসেবে সদ্ব্যবহার করতে পারি।
আমরা যেন সকল পথভ্রষ্টকারীদের ভুল পথে এগুনো ব্যাহত করতে পারি যারা বেদে বর্ণভেদ সম্পর্কে ভিত্তিহীন দাবী করে এবং দমন করি সকল দস্যু, অসুর, রাক্ষসদের।
আমরা যেন সকলে আসতে পারি বেদের আশ্রয়ে এবং একত্রে কাজ করে মানবতার বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে পারি এক পরিবার হিসেবে।

সুতরাং বেদ অনুযায়ী কোনো বর্ণভেদ নেই।

-----------------------------------------------------------------------


ফেইসবুকের এক গ্রুপের মাধ্যমে এই লেখাটি ইংরেজীতে পাই যেটিকে বাংলায় অনুবাদ করি। পাঠকের কাছে আশা করছি কোনো প্রকার ভাষাগত ভুল-ত্রুটী ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে মার্জনা করে দিবেন।


______________________________________________________



There is no caste system in VEDAS




It is unfortunate that in this country of ours, where Vedas were the foundation of our culture, we forgot these original lessons of Vedas and got trapped in a variety of misconceptions regarding birth-based caste system and discrimination of people born in certain castes collectively known as Shudras.
The misleading theories of communists and biased indologists have already caused a great damage to our society and have sown seeds of differences. It is unfortunate that so-called Dalits consider themselves outcaste and hence we fail to unite together for prosperity and security. The only solution is to go back to the roots – the Vedas – and rebuild our understanding of our relationships with each other.
In this article, we shall evaluate the reality of caste system in Vedas and actual meaning of Shudra.
1.
As discussed in the first article “Vedas  and Shudra”, there is absolutely no element of hatred or discrimination in Vedas regarding any person – be he or she a Brahmin, Vaishya, Kshatriya or Shudra.
2.
The concept of caste is relatively new. Vedas contain no word that can be considered a synonym for ‘caste’. The two words commonly considered to mean ‘caste’ are Jaati and Varna. However the truth is that, all the three mean completely different things.


Caste is a European innovation having no semblance in Vedic culture.


Jaati
Jaati means a classification based on source of origin. Nyaya Sutra states “Samaanaprasavaatmika Jaatih” or those having similar birth source form a Jaati.
An initial broad classification made by Rishis is 4-fold: Udbhija (coming out of ground like plants), Andaja (coming out of eggs like birds and reptiles), Pindaja (mammals) and Ushmaj (reproducing due to temperature and ambient conditions like virus, bacteria etc).
Similarly, various animals like elephant, lion, rabbits etc form different ‘Jaati’. In same manner, entire humanity forms one ‘Jaati’. A particular Jaati will have similar physical characteristics, cannot change from one Jaati to another and cannot cross-breed. Thus Jaati is creation of Ishwar or God.
Brahmin, Kshatriya, Vaishya and Shudra are no way different Jaati because there is no difference in source of birth or even physical characteristics to differentiate between them.
Later, word ‘Jaati’ started being used to imply any kind of classification. Thus in common usage, we call even different communities as different ‘Jaati’. However that is merely convenience of usage. In reality, all humans form one single Jaati.

Varna
The actual word used for Brahmin, Kshatriya, Vaishya and Shudra is ‘Varna’ and not Jaati.
The word ‘Varna’ is used not only for these four, but also for Dasyu and Arya.
‘Varna’ means one that is adopted by choice. Thus, while Jaati is provided by God, ‘Varna’ is our own choice.
Those who choose to be Arya are called ‘Arya Varna’. Those who choose to be Dasyu become ‘Dasyu Varna’. Same for Brahmin, Kshatriya, Vaishya and Shudra.
That is why Vedic Dharma is called ‘Varnashram Dharma’. The word Varna itself implies that this is based on complete freedom of choice and meritocracy.
3.
Those involved in intellectual activities have chosen ‘Brahmin Varna’. Those into defense and warfare are ‘Kshatriya Varna’. Those in economics and animal rearing are ‘Vaishya Varna’ and those involved in other support functions are “Shudra Varna”. They refer merely to various choices of professions and have nothing to do with any Jaati or birth.
4.
Often mantras of Purush Sukta are cited to prove that Brahmins originated from Mouth, Kshatriya from hands, Vaishya from thighs and Shudras from legs of God. Thus these varnas are birth-based. However nothing could be more deceptive. Let us see why:
a. Vedas describe God to be shapeless and unchangeable. How can such a God take shape of a gigantic person if He is shapeless. Refer Yajurved 40.8.
b. If indeed this were true, this would defy the theory of Karma of Vedas. Because as per Theory of Karma, one’s family of birth can change as per his or her deeds. So one born in Shudra family can take birth as king’s son in next birth. But if Shudras are born from feet of God, how can same Shudra again take birth from hands of God?
c. Soul is timeless and never born. So soul can have no Varna. It is only when it takes birth as human that it has a chance to opt a Varna. Then what is meant by a Varna coming from one part of God’s body? If Soul did not take birth from God’s body, then does it mean body of soul is prepared from God’s body parts? But as per Vedas, even nature is eternal. And same atoms recycle among various humans. So it is technically impossible for any one taking birth from God’s body, even if we assume God to be having a body.

d. The said Purush Sukta is in 31st Chapter of Yajurved, apart from Rigved and Atharvaved with some variations. In Yajurved it is 31.11. To see what it actually means, let us look at the previous mantra 31.10.
It asks a question – Who is mouth? Who is hand? Who is thigh and who is leg?
The next mantra gives the answer – Brahmin is mouth. Kshatriya is hand. Vaishya is thigh and Shudra becomes the legs.
Note that the mantra does not say that Brahmin “takes birth” from mouth…It says Brahmin “is” mouth. Because if the mantra would mean “takes birth” it would not answer the question in previous mantra “Who is mouth?”
For example, if I ask “Who is Dashrath?”, an answer like “Rama is born from Dashrath” would be meaningless!

The actual meaning is:
In society, Brahmins or intellectuals form the brain or head or mouth that think and speak. Kshatriya or defense personnel form the hands that protect. Vaishya or producers and businessmen form the thigh that support and nurture (note that thigh bone or femur produces blood and is strongest bone). In Atharvaveda, instead of Uru or Thigh, the word “Madhya” is used meaning that it denotes also the stomach and central part of body.
Shudra or Labor force form the legs that lay the foundation and make the body run.
The next mantras talk of other parts of this body like mind, eyes etc. The Purush Sukta describes the origin and continuation of creation including human society and states ingredients of a meaningful society.
Thus, its a pity that such a beautiful allegorical description of society and creation is distorted to mean something that is completely contrary to Vedic ethos.
Even the Brahman texts, Manusmriti, Mahabharat, Ramayan and Bhagvat  do not state anything even close to crazy hypothesis of God creating Brahmins by tearing of flesh from his mouth, Kshatriya from flesh of hands and so on.
5.
It is thus obvious why Brahmins are accorded high respect in Vedas. This is same as what happens even in modern society. Scholars and experts get our respect because they form the direction-providers for entire humanity. However, as we have discussed in previous articles, dignity of labor is equally emphasized in Vedas and hence there is no element of discrimination.
6.
In Vedic culture, everyone is considered to be born as Shudra. Then based on his or her education, one becomes a Brahmin, Kshatriya or Vaishya. This completion of education is considered to be a second birth. Hence these three Varnas are called “Dwija” or twice-born. But those who remain uneducated for whatever reasons are not discarded from society. They continue as Shudra and perform support-activities for the society.
7.
A son of Brahmin, if he fails to complete his education, becomes a Shudra. Similarly, son of a Shudra or even a Dasyu, if he completes his education can become a Brahmin, Kshatriya or Vaishya. This is pure meritocracy. The way degrees are accorded today, Yajnopaveet was provided in Vedic system. Further, non-compliance with the code of conduct for each Varna could result in taking away of the Yajnopaveet.
8.
Many examples exist of change of Varnas in Vedic history.
a. Aitareya Rishi was son of a Daasa or criminal but became a Brahmin of highest order and wrote Aitareya Brahman and Aitareyopanishad. Aitareya Brahman is considered critical to understand Rigveda.
b. Ailush Rishi was son of a Daasi, gambler and of low character. However he researched on Rigveda and made several discoveries. Not only was he invited by Rishis but also made an Acharya. (Aitareya Brahman 2.19)
c. Satyakaam Jaabaal was son of a prostitute but became a Brahmin.

d. Prishadh was son of King Daksha but became a Shudra. Further he did Tapasya to achieve salvation after repenting.
(Vishnu Puran 4.1.14)
Had Tapasya been banned for Shudra as per the fake story from Uttar Ramayan, how could Prishadh do so?
e. Nabhag, soon of King Nedishtha became Vaishya. Many of his sons again became Kshatriya. (Vishnu Puran 4.1.13)
f. Dhrist was son of Nabhag (Vaishya) but became Brahmin and his son became Kshatriya (VP 4.2.2)
g. Further in his generation, some became Brahmin again (VP 9.2.23)
h. As per Bhagvat, Agniveshya became Brahmin though born to a king.
i. Rathotar born in Kshatriya family became a Brahmin as per Vishnu Puran and Bhagvat.
j. Haarit became Brahmin though born to Kshatriya (VP 4.3.5)
k. Shaunak became Brahmin though born in Kshatriya family. (VP 4.8.1). In fact, as per Vayu Puran, Vishnu Puran and Harivansh Puran, sons of Shaunak Rishi belonged to all four Varnas.
Similar examples exist of Gritsamad, Veethavya and Vritsamati.
l. Matanga was son of Chandal but became a Brahmin.
m. Raavan was born from Pulatsya Rishi but became a Rakshas.
n. Pravriddha was son of Raghu King but became a Rakshas.
o. Trishanku was a king but became a Chandal
p. Sons of Vishwamitra became Shudra. Vishwamitra himself was a Kshatriya who later became a Brahmin.
q. Vidur was son of a servant but became a Brahmin and minister of Hastinapur empire.
9.
The word “Shudra” has come in Vedas around 20 times. Nowhere has it been used in a derogatory manner. Nowhere it mentions that Shudras are untouchable, birth-based, disallowed from study of Vedas, lesser in status than other Varnas, disallowed in Yajnas.
10.
In Vedas, Shudra means a hard-working person. (Tapase Shudram – Yajurved 30.5). And that is why Purush Sukta calls them as foundation of entire human society.
11.
Since the four Varnas refer to 4 kinds of activities by choice, as per Vedas, the same person exhibits characteristics of the 4 varnas in different situations. Thus everyone belongs to all the 4 varnas. However, for simplicity sake, we refer to the predominant profession to be the representative Varna.
And hence, all humans should strive to be all the 4 Varnas to best of their capabilities, as per Vedic wisdom. This is the essence of Purush Sukta.

The Rishis like Vasisth, Vishwamitra, Angira, Gautam, Vaamdeva and Kanva exhibited traits of all the four Varnas. They discovered meanings of Vedic mantras, destroyed Dasyus, did manual labor and indulged in wealth management for social welfare.
We should also emulate the same.
In summary, we see that the Vedic society considers all humans to be one single Jaati or race, upholds the dignity of labor and provides equal opportunity for all humans to adopt the Varna of their choice.
There is no element of birth-based discrimination of any manner in the Vedas.
May we all unite together as one integrated family, reject the last element of birth-based discrimination of any manner and embrace each other as brothers and sisters.
May we also thwart the designs of those who want to mislead us by making baseless claims of casteism in Vedas and destroy the criminals aka Dasyu/Daas/Rakshas.
May we all come under the shelter of Vedas and work together to strengthen the humanity as one single family.

There is no caste-system in Vedas.