সাভারের
এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেছেন,
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তাঁর মুঠোফোনে রেশমার সঙ্গে কথা বলেছেন। জিওসি আরও বলেন, এ সময় রেশমা
প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আমি ১৭ দিন অন্ধকারে বসেছিলাম।’
জিওসি প্রথম আলো ডটকমকে জানান, মুঠোফোনে প্রধানমন্ত্রী রেশমাকে বলেন, ‘আমি
তোমাকে দেখতে আসছি।’ এর পরই প্রধানমন্ত্রী সাভারে সিএমএইচের উদ্দেশে রওনা
হন।
হাসান সারওয়ার্দী আরও বলেন, সকালের দিকে ধ্বংসস্তূপের ওই
অংশে একটি ছিদ্র করা হয়। তখন ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আলো যায়। এ সময় রেশমা
ভেতর থেকে চিত্কার করে ওঠেন। একজন মেজর প্রথম রেশমাকে দেখতে পান বলে জানান
জিওসি। তিনি জানান, রেশমাকে ভবন ধসের ৪১৬ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করা হলো।
জিওসি আরও জানান, রেশমা প্রথমে পানি খেতে চান। তাঁকে পানি ও খাবার দেওয়া হয়েছে।
(সংগৃহীত)
সাভার ট্র্যাজেডি'র সেই অসম সাহসী বীর উদ্ধারকর্মীটির কথা মনে আছে? একাই ৩০ জন মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন যিনি? সেই বাবু, ওমর...ওরফে বাবু, তিনি আর নেই! উদ্ধারকার্য শেষ হবার পর পরই তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়! রাতে আতংকে ঘুমোতে পারতেন না, দুঃস্বপ্ন দেখতেন! মানবতার সেবার, অসম সাহসিকতার, সহমর্মিতার মানুষটার জন্য।
বিন্রম শ্রদ্ধা, এই অসমসাহসী বীরের জন্য।
গত ২৪ এপ্রিল, রানা প্লাজা ধসের দুর্ঘটনায় উদ্ধারকাজে
সাধারণ মানুষের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ ছিলো চোখে পড়ার মতো। নিজের জীবন
বিপন্ন করে তাঁরা বাঁচিয়ে দিয়েছে অনেক মানুষের প্রাণ। এদেরই একজন অসম
সাহসী বীর উদ্ধার কর্মী ওমর ফারুক বাবু। নিজে উদ্ধার করেছেন অসংখ্য আহত
নিহতদের। সাহসী এই উদ্ধারকর্মী ভবন ধসের প্রথম দিনে একাই ৩০ জনের প্রাণ
বাঁচিয়েছিলেন। অথচ তিনি নিজেই এখন নাম লেখালেন লাশের কাতারে।
সাভারের রাজাসনের বাসিন্দা বাবু একজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি। ভবন ধসের
নির্মমতা ছুঁয়ে যায় বাবুকে। বিভৎস লাশগুলো টেনে হিঁচরে বের করার পর
মানসিক রোগে ভুগতে থাকেন তিনি। তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার
পর থেকে বাবুর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি আতঙ্কে ঘুমাতে পারেন
না, মাঝেমধ্যে ভয়ে শিউরে ওঠেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পর গভীর রাতে ঘুমের
মধ্যেই ‘বাঁচাও' বাঁচাও বলে আর্ত চিৎকার দিয়ে জেগে উঠতেন।
বাবুর
স্ত্রী আরো জানায়, পুরোপুরিভাবে মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তিনি চিৎকার
করতেন 'আমি চলে আসছি আর সমস্যা নেই আপনাদের কিচ্ছু হবেনা'।
এভাবেই
তার স্বামী ওমর ফারুক বাবু আতঙ্কিত হয়ে ক্রমেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে
অসুস্থ হয়ে পড়ে! এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। কিন্তু
মানুষের জন্য মানবতার গান গাওয়া এই সাহসী বীর বাঁচতে পারলেন না। হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহস্যজনকভাবেই মৃত্যু হয় তার।
বাবু এর আগেই সংবাদে এসেছিলেন, তবে তখন তিনি ছিলেন এক বীরযোদ্ধা, আর এখন তিনি সংবাদে আসলেন সাভার ট্র্যাজেডির বলি, আরো এক লাশ হয়ে।
(সংগৃহীত)