...আমার ৪ বছর বয়সী বড় কন্যাকে বললাম, ‘বাবা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতটা গাও তো’;
সে গাওয়া শুরু করলো... “আমার সোনার বাংলা আমি কি ভুলিতে পারি”
আমি বললাম, “থামো থামো, বাবা তুমি ‘২১শে ফেব্রুয়ারির গান’ আর ‘জাতীয় সঙ্গীত’ দুটোতে প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলেছো”।
সে কান্না কান্না চেহারা করে, দৌড় দিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো।
উপরের ঘটনাটা দুই মাস আগের ঘটনা অবশ্য। আজকে... আজকের দিনে, আপনি আমার
কন্যাকে ডেকে যদি বলেন, “আঙ্কেল তোমাকে বেলুন কিনে দিবো, তুমি বাংলাদেশের
জাতীয় সঙ্গীতটা গেয়ে শুনাও তো একটু...”।
সে এতো সুন্দর করে; নির্ভুল সুরে গাইতে পারবে যে, আপনি আমাকেও খুশি হয়ে কয়েকটা বেলুন কিনে দিবেন!
সত্যি বলতে, এই বেলুন বা ধন্যবাদ কিন্তু আমার পাওনা না; “পাওনা হলো, ক্ষ ব্যান্ডের”।
তাদের কারণেই, আমি বাবা আজকে এতদিন পর, জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ফিরে
পেয়েছি... তাদের কারণেই আমি আমার চার বছরের কন্যাকে, ইংলিশ-রাইমস (স্কুলের
হোমওয়ার্ক) মুখস্ত না করিয়ে, জাতীয় সঙ্গীত মুখস্ত করিয়েছি।
এখন
তাকে যদি তার স্কুলে; জাতীয় সংগীত গাইতে বলা হয়, তাহলে সে অবশ্যই সেটা,
গানটির সাংবিধানিক সুরেই গাইবে। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হলো, আমার জন্য, ক্ষ
ব্যান্ডের কাজটি ছিলো একটি “wake up call”… বলতে দ্বিধা নেই, এদের কারণেই;
আমার নিজের, স্কুল জীবনের assembly শেষ করে আসার প্রায় ১৭ বছর পর, জাতীয়
সংগীতের কয়েকটা লাইন শোনা হলো!
কয়েকদিন থেকে দেখছি, এটা নিয়ে
হাউকাউ শুরু হয়ে গেছে। কেউ বলছে, তারা ‘জাতীয় সঙ্গীতকে অসম্মান করেছে’...
কেউ বলছে... ‘এদের বাইন্দা পিটানো দরকার’। অনেক অনেক যুক্তি শুনলাম, তার
মধ্যে একটা যুক্তিও আমার কাছে যুৎসই লাগলো না!
একজন বলছে, “একজন
বিদেশী তথা এক পাকিস্তানী এই গানটিতে তবলা বাজিয়ে আমাদের দেশকে অসম্মান
করেছে”। আমি বুঝি না, সব কিছুর মধ্যে নেগেটিভ খুঁজে বেড়াই কেন আমরা? এটাতো,
পজিটিভ ভাবেই নিতে পারি এই ভেবে যে, ‘আমরা একজন পাকিস্তানীকে দিয়ে
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এর কয়েকটা লাইন বাজিয়েছি’। হাউকাউ শুরু করলে তো
পাকিস্তানী জাতিদের করা উচিত, আমাদের তো বাপ মুচকি হাসি দিয়ে বসে থাকা
উচিত।
অলিম্পিকের সময় বা আমাদের রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী যখন
দেশের বাইরে রাষ্ট্রীয় সফরে যায়, তখন সেদেশের মাটিতে যখন বাংলাদেশের জাতীয়
সংগীত বাজানো হয়, তখন কি বাংলাদেশ থেকে বাদক দল নিয়ে যাওয়া হয়? উত্তর দেন!
আরেকজন বলছে, “জাতীয় সঙ্গীতকে বিকৃত করা হয়েছে”। আরে ভাই, এটা জাতীয় সংগীত
হবার আগে তো এটা একটা রবীন্দ্রসংগীত। তো worst case scenario ধরেও বিষয়টা
এভাবে কেনও নিচ্ছেন না যে, ‘ক্ষ’ এটিকে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবে বিবেচিত
করেছে! তারপরেও বলেন, গানটি শুনে কি আপনার মনে হয়েছে যে এখানে সুর বিকৃত
হয়েছে? এখানে কি নতুন কথা জুড়ে দেয়া হয়েছে? যদি তা না হয়, “আমাদের জাতীয়
সঙ্গীত এতে কিভাবে বিকৃত হয়”?
অন্যদের কথা জানি না...আমার কথা simple ... আমার কাছে মনে হয়েছে, এটির মাধ্যমে তারা, মূল জাতীয়সঙ্গীতের
আবেদন, পুনরায় ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে সবার মাঝে। ...যেটা, আমি নিজে দেখেছি এবং
আমার নিজের ক্ষেত্রেই হয়েছে... আর সেটার উদাহরণ দিয়েই তো লেখাটা শুরু করলাম।
আসলে, এখন বুঝা যায়, পৃথিবীতে ১৯৬ টি জাতি থাকার পরেও, শুধু আমাদের জাতিকে
নিয়ে এরকম একটা জোকস; ‘বাঙ্গালীদের দোজখের ডেকচিতে কোনও দারোয়ান লাগবে
না...’ কেন প্রচলিত