Showing posts with label pagoda. Show all posts
Showing posts with label pagoda. Show all posts

Saturday, August 10, 2013

এই না হলে বাঙালী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত


দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা। সবাই রোজাদার দরিদ্র মানুষ। ধর্মপ্রাণ এই মুসলমানরা একে একে এগিয়ে আসছেন আর তাঁদের হাতে ইফতারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মগুরু। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক বিরল দৃষ্টান্ত! সম্প্রীতির বন্ধনে ইফতার বণ্টনের এমন সুন্দর দৃশ্য দেখা গেল গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে।

বৌদ্ধ মহাবিহারে কথা হলো বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহসভাপতি সুজিত কুমার বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, এই বৌদ্ধ মহাবিহারে মাঝেমধ্যেই আসেন সিঙ্গাপুরের নাগরিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী মি. ভিক্টর লি। বিহারের এতিম শিক্ষার্থী ও এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য তিনি চাল, ডালসহ নানা খাদ্যদ্রব্য দান করেন প্রায়ই। সারা দিন রোজা রেখে এলাকার গরিব মানুষগুলো ভালোভাবে ইফতার খেতে পারে না শুনে দয়ার্ত হয় ভিক্টরের মন। তাই তিনি এবার দরিদ্রদের মাঝে ইফতার বিতরণের এই ব্যবস্থা করেন। মাসব্যাপী এই বণ্টনের দায়িত্ব তো আর যাকে-তাকে দেওয়া যায় না, তাই এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়েছেন বৌদ্ধ মহাবিহারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরকে। ১ রমজান থেকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন দরিদ্রকে তিনি নিজ দায়িত্বে ইফতার বণ্টন করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সাহায্য করছেন বিহারের অধ্যক্ষ বুদ্ধপ্রিয় মহাথের। অন্যদিকে শেষ রমজান পর্যন্ত ইফতার বণ্টনের এই ব্যবস্থা করে নিজ দেশে ফিরে গেছেন মি. ভিক্টর লি।

বিহার থেকে ইফতার হাতে নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন এলাকার নাইট গার্ড জামাল উদ্দিন (৭২)। তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষদের জন্য এমন উদ্যোগ খুবই ভালো। এ রকম তো অন্য জায়গায় দেখা যায় না। এমন ব্যবস্থা যে করেছেন আল্লাহ তাঁর ভালো করবেন অবশ্যই। আমরা খাস দিলে তার জন্য দোয়া করি।’

নিজের ছোট মেয়ে ফারজানা আক্তারকে নিয়ে ইফতার নিতে এসেছিলেন দিনমজুর মো. ফারুক হোসেন (৬১)। তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ আমরা, ভালোভাবে ইফতার কিনতে পারি না। বিহারে এ ইফতারের ব্যবস্থার ফলে আমরা ভালোভাবে ইফতার করতে পারছি। আমরা খুবই আনন্দিত। যে মানুষ এমন ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন তিনি নিশ্চয়ই দয়ালু ও দানশীল। তাই তিনি যে ধর্মেরই হোক, আল্লাহ তাঁকে পছন্দ করেন। আল্লাহ তাঁকে ভালো রাখুন, আরো সম্পদ দিক, এভাবে আরো দান করার তৌফিক দান করুক।’

সবাই যাতে সুষ্ঠুভাবে ইফতার নিয়ে ফিরে যেতে পারে তার দেখভাল করছিলেন বিহারের শিক্ষার্থী দীপানন্দ ভিক্ষু। তিনি বলেন, ‘বিহারে ঢোকার সময় সবাইকে একটি করে কার্ড দেওয়া হয় এবং ইফতার দেওয়ার সময় সেই কার্ডটি নেওয়া হয়। ফলে কেউ দুবার ইফতার নিতে পারে না। তবে মূলত গরিব, দুস্থ মানুষের জন্য এই ইফতারের ব্যবস্থা করা হলেও কখনো কখনো সচ্ছল মানুষও ঢুকে পড়ে। আমরা অবশ্য তাদেরও ফিরিয়ে দিই না।’

ইফতার না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোছা. মমতাজ বেগমসহ (৪২) আরো কয়েকজন নারী-পুরুষ। জানা গেল তাদের জন্য আলাদাভাবে তাৎক্ষণিক আরো ৫০ প্যাকেট ইফতারের অর্ডার দেওয়া হয়েছে শুদ্ধানন্দ মহাথেরের নির্দেশে। তাঁরা জানান, প্রথম রমজান থেকেই তাঁরা এখান থেকে ইফতার করেন। এমন সুষ্ঠু, সুন্দর, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা অন্য কোথাও দেখা যায় না। কেউ ইফতার না নিয়ে ফিরে যায় না। কোনো ধাক্কাধাক্কি নেই, মারামারি নেই। মমতাজ বেগম বলেন, ‘পুরো রমজানজুড়ে আমাদের আর ইফতার নিয়ে ভাবতে হবে না। আল্লাহ তাঁর ভালো করুক।’

প্রতিবার আস্থা হারাতে হারাতে এভাবেই আবারো মানুষের কাছে ফিরে আসি। আবারো মনে হই পুরটা হারিয়ে যায়নি। ধন্যবাদ তোমাদের, মানুষ মরেনি কথাটা মনে করিয়ে দেবার জন্য।

(সূত্র: কালের কন্ঠ)