আজকে খুব অবাক হয়ে একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম। দুপুরদের দিকে অনেকগুলো লাশ
আসলো একসঙ্গে। লাশগুলো স্কুল মাঠে ঢুকার সাথে সাথেই অবস্থানরত স্বজনরা
ঝাঁপিয়ে পরেন তাদের প্রিয়জনের খোঁজে।
প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে
মাঝবয়সী একটা ছেলে হাতে একটা ছবি নিয়ে জামার পেছন দিকটা টেনে ধরে রেখেছে।
আমি কোন জবাব দিতে পারছিলাম না। ছেলেটি শুধু একটি কথায় বার বার বলে
যাচ্ছিল-
"ভাই আমার মায়ের কপালে সিঁদুর ছিল, হাতে শাঁখা ছিল, আমি দেখলেই চিনব। আমাকে আরেকবার দেখান। দয়া করে দেখান।"
মুহূর্তেই আমার মায়ের মুখখানা আমার চোখের কোনে ভেসে উঠেছিল, আর ছেলেটির
জায়গায় আমি! আমি কোন কথা বলতে পারছিলাম না। মুহিত ভাই বোঝানোর বৃথা চেষ্টা
করে যাচ্ছিলেন প্রতিনিয়তই। তখনও প্রায় শতাধিক লাশ স্কুলের বারান্দায়।
দুইবার করে প্রত্যেকটি লাশ তাকে দেখিয়েছি। ছেলেটি খুঁটে খুঁটে দেখেছে।
কিন্তু কোন লাশেই শাঁখাসিঁদুর পরা তার মাকে পাওয়া যায়নি। যাওয়ার কথাও না।
খোঁজার সময় মনে মনে বোকার মতো ধারনা করে রেখেছিলাম 'হিন্দু' এবং মনের সেই
রূপরেখা অনুযায়ীই খুঁজছিলাম। কিন্তু হিন্দু লাশ কোথায় পাব? মনে মনে নিজেকে
ধিক্কার দিলাম। হিন্দু আর মুসলমান নিয়ে কতই না বাড়াবাড়ি! অথচ স্কুলের
বারান্দায় আজ হিন্দু মুসলমান মিলে মিশে একাকার!
মনে পড়ে গেল লালনের সেই কয়েকটি লাইন-
আসবার কালে কি জাত ছিলে?
এসে তুমি কি জাত নিলে?
কি জাত হবা যাবার কালে?
সে কথা ভেবে বলো না...
জাত গেল জাত গেল বলে...
(Source: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র)